আদিবাসীদের কয়েকটি উৎসব
পহেলা বৈশাখে অনেক আদিবাসী গোষ্ঠীও বর্ষবরণ করে থাকেন৷ এছাড়া আছে অন্যান্য উৎসবও৷ ছবিঘরে আদিবাসীদের কয়েকটি উৎসবের কথা থাকছে৷
বৈসাবি উৎসব
ত্রিপুরা ও তঞ্চঙ্গ্যাদের ‘বৈসুক’, মারমাদের ‘সাংগ্রাই’ আর চাকমাদের ‘বিজু’ – এই তিন উৎসবের নামের প্রথম অক্ষর থেকে ‘বৈসাবি’ উৎসবের নাম এসেছে৷ তিনটিই বর্ষবরণের অনুষ্ঠান৷ ফলে পার্বত্য এলাকার আদিবাসীরা সবাই মিলে বৈসাবি উৎসবে অংশ নেয়ার মাধ্যমে নতুন বছরকে স্বাগত জানায়৷ উপরের ছবিটি সাংগ্রাই উৎসবের৷
চাকমাদের বিজু
বাংলা বছরের শেষ দু’দিন ও নতুন বছরের প্রথম দিন এই উৎসব হয়৷ অনুষ্ঠানের প্রথম দিন ‘ফুল বিজু’ নামে পরিচিত৷ এই দিন ভোরে পানিতে ফুল ভাসানো হয়৷ তরুণ-তরুণীরা পাড়ার বৃদ্ধদের গোসল করিয়ে দেয়৷ তবে বিজু উৎসবের মূল দিন নববর্ষের প্রথম দিন৷ চাকমা ভাষায় এই দিনটির নাম গজ্জ্যেপজ্জ্যে, অর্থাৎ গড়াগড়ি খাওয়ার দিন৷ এই দিন ভালো খাবার রান্না করা হয়৷ কারণ মনে করা হয়, বছরের প্রথম দিন ভালো রান্না করলে বছরজুড়ে অভাব থাকবে না৷
মারমাদের সাংগ্রাই
পার্বত্য চট্টগ্রামের দ্বিতীয় বৃহত্তম আদিবাসী গোষ্ঠী মারমারা পহেলা বৈশাখে নববর্ষ উদযাপন করলেও বাংলা পঞ্জিকা অনুসরণ করে না৷ তারা বর্মীপঞ্জি, অর্থাৎ বার্মা মিয়ানমারের ক্যালেন্ডার মেনে চলে৷ সাংগ্রাই উৎসবের মূল আকর্ষণ ‘রিলং পোয়েহ্’৷ এটি পানি ছো়ড়াছুড়ির খেলা৷ মারমা তরুণ-তরুণীরা একে অপরকে পানি ছিটিয়ে ভিজিয়ে দেয়৷ তাঁদের বিশ্বাস, এর মাধ্যমে অতীতের সকল দুঃখ-গ্লানি ও পাপ ধুয়ে-মুছে যায়৷
ত্রিপুরাদের বৈসুক
চাকমাদের বিজুর মতো এই উৎসবও তিনদিনের৷ নববর্ষের প্রথম দিন বয়স্করা ছোটদের আশীর্বাদ করেন৷ আর কিশোরীরা কলসি কাঁখে নিয়ে বয়স্কদের খুঁজে খুঁজে গোসল করায়৷ তরুণ-তরুণীরা রং খেলায় মেতে ওঠে৷ একজন আরেকজনকে রং ছিটিয়ে রঙিন করে দিয়ে গোসল করে আবারো আনন্দে মেতে ওঠে৷
তঞ্চঙ্গ্যাদের বৈসুক
তঞ্চঙ্গ্যাদের বর্ষবরণ অনেকটা চাকমাদের মতোই৷ উৎসবের প্রথম দিন মেয়েরা ফুল সংগ্রহ করে ঘর সাজায়৷ পরদিন সবাই গোসল করে নতুন জামা-কাপড় পরে আনন্দ-ফূর্তি করে৷ ঘরে ঘরে ঐতিহ্যবাহী খাবার আর পিঠার আয়োজন করা হয়৷ রাতে ‘ঘিলা’ নামের এক খেলায় মেতে ওঠে সবাই৷ আর নববর্ষের দিন তরুণ-তরুণীরা বয়স্কদের গোসল করায়৷
মুরংদের চাংক্রান
মূল উৎসবের দিন মুরংরা বাঁশি বাজিয়ে ‘পুষ্প নৃত্য’ করতে করতে মন্দির প্রদক্ষিণ করে৷ ম্রো সমাজে লাঠি খেলা খুবই জনপ্রিয়৷ তাই চাংক্রানের মূল দিনে তারা এই খেলা খেলে থাকে৷
কারাম উৎসব
সমতলের আদিবাসীদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় অনুষ্ঠান ‘কারাম উৎসব’ বা ‘ডাল পূজা’৷ ওঁরাও, সাঁওতাল, মালো, মুন্ডা, মাহাতো, ভুইমালি, মাহলীসহ বিভিন্ন আদিবাসী সম্প্রদায়ের মানুষ একসঙ্গে এই উৎসবে অংশ নিয়ে থাকে৷ এই আদিবাসীরা ‘কারাম’ নামক একটি গাছের ডালকে পূজা করেন বলে এই উৎসবের আরেক নাম ‘ডাল পূজা’৷
সাঁওতালদের সহরায় উৎসব
আদিবাসী সাঁওতালদের কাছে গৃহপালিত গরু, মহিষের গুরুত্ব অনেক৷ সহরায় উৎসবে এসব প্রাণীর প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করা হয়৷ উৎসবকে ঘিরে বিবাহিত মেয়েরা তাদের বাবার বাড়ি যাওয়ার সুযোগ পান৷ কারণ উৎসবে তাদের আমন্ত্রণ জানানো একটি রেওয়াজ৷ এই পরবের নির্দিষ্ট কোনো দিনক্ষণ নেই৷ গ্রামের মোড়লদের নিয়ে সভা করে উৎসবের দিন ঠিক করা হয়৷