আদর্শ-র বইয়ে যা আছে
আদর্শ প্রকাশনীকে স্টল না দেয়ার ব্যাখ্যা দিয়ে রোববার একটি সংবাদ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে বাংলা একাডেমি৷ এতে আদর্শ থেকে প্রকাশিত ফাহাম আব্দুস সালামের ‘বাঙালির মিডিয়োক্রিটির সন্ধানে’ বইয়ের চারটি পৃষ্ঠার কথা উল্লেখ করা হয়৷
বাংলা একাডেমির প্রেস রিলিজ
বাংলা একাডেমি বলেছে, ‘‘আদর্শের বিতর্কিত বইটির ১৫ নং পৃষ্ঠায় বাঙালি জাতিসত্তা; ১৬ নং পৃষ্ঠায় বিচার বিভাগ, মাননীয় বিচারপতিগণ, সংবিধান, জাতীয় সংসদের মাননীয় সদস্যবৃন্দ; ২০ নং পৃষ্ঠায় বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধ, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এবং ৭ই মার্চের ঐতিহাসিক ভাষণ এবং ৭১ নং পৃষ্ঠায় মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সম্পর্কে অশ্লীল, রুচিগর্হিত, কটাক্ষমূলক বক্তব্য প্রদান করা হয়েছে৷’’
‘বাক ও ভাব-প্রকাশের স্বাধীনতার অধিকারের পরিপন্থি’
বাংলা একাডেমি বলেছে, ‘‘উপর্যুক্ত বক্তব্য বাংলাদেশের সংবিধানের ৩৯(২) অনুচ্ছেদে বর্ণিত মত-প্রকাশের স্বাধীনতা, যুক্তিসঙ্গত বিধিনিষেধ সাপেক্ষে বাক ও ভাব-প্রকাশের স্বাধীনতার অধিকারের পরিপন্থি৷’’
সংবিধানের ৩৯(২) ধারায় যা বলা আছে
রাষ্ট্রের নিরাপত্তা, বিদেশি রাষ্ট্রসমূহের সহিত বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক, জনশৃঙ্খলা, শালীনতা ও নৈতিকতার স্বার্থে কিংবা আদালত-অবমাননা, মানহানি বা অপরাধ-সংঘটনে প্ররোচনা সম্পর্কে আইনের দ্বারা আরোপিত যুক্তিসঙ্গত বাধানিষেধ-সাপেক্ষে (ক) প্রত্যেক নাগরিকের বাক ও ভাব প্রকাশের স্বাধীনতার অধিকারের, এবং (খ) সংবাদক্ষেত্রের স্বাধীনতার নিশ্চয়তা দান করা হইল৷
আদর্শের বইয়ের ১৫ নং পৃষ্ঠায় যা লেখা আছে
‘‘বাঙালি কখনো এলাবোরেট স্বপ্ন দেখতে পারে না- তার জন্য প্রস্তুতির প্রয়োজন৷ তার স্বপ্ন হলো তাৎক্ষণিকতার স্বৈরাচার - অর্ধেক তার দেখা, তার অর্ধেক তার স্বপ্ন৷ আর সেই সিকিস্বপ্নের পুরোটাই হলো ধ্বংসের ছক৷... তার (বাঙালির) কলোনিয়াল মাথার সব থেকে বড় চিহ্ন হোলো আইন-ফেটিশ৷ কলোনিয়াল মাথা মনে করে যে সব কিছুর জন্য আইন দরকার, পা. মারা এবং পা.. থেকে রক্ষা পাওয়া দুটোর জন্যেই আইনের প্রয়োজন আছে৷’’
১৬ নং পৃষ্ঠায় যা লেখা আছে
‘‘বাংলাদেশের বিচারপতিরা শক্তিমানের প্রতি পরমব্রতী; বিচার করার চেয়ে বিহিত করার দিকে তাদের ঝোঁকটা একটু বেশি৷... গর্দভদের সংবিধানে সবসময় সর্বোচ্চ সংখ্যক আইন ও সংশোধনী থাকতে হয়৷ গর্দভরা নিরাপদ হওয়ার চেয়ে নিরুপদ্রব হওয়াকে বড় পাওয়া মনে করে৷’’
২০ নং পৃষ্ঠায় যা লেখা আছে
‘‘পাকিস্তান আমলের শীর্ষ পর্যায়ের এমন কোনো অপকর্ম ছিলো না যেটা বলবৎ রাখিনি আমরা বাংলাদেশ আমলে৷ বরঞ্চ বহু ক্ষেত্রে স্বাধীনতার পরে অতি অল্প সময়ের মধ্যেই আমরা পাকিস্তানিদের ছাড়িয়ে যেতে সক্ষম হই (যেমন নির্বিচার লুটপাট ও মেরিটোক্রেসির ওপরে স্বজনপ্রীতিকে স্থান দেয়া)৷’’
২০ নং পৃষ্ঠায় আরও যা লেখা আছে
‘‘পরমতসহিষ্ণুতার কথা বললে আমি কেবল একটিই উদাহরণ দেবো: ৭ই মার্চ শেখ মুজিবর রহমান ‘এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম’ বলে বাড়ি ফিরতে পেরেছিলেন— বাড়িতে স্ত্রী-সন্তানের সাথে ডিনার করতে পেরেছিলেন৷ আজকে বাংলাদেশের শীর্ষস্থানীয় কোনো নেতা কাছাকাছি কোনো আহবান করলে তাকে রাষ্ট্রদ্রোহিতার অভিযোগে জেলে ঢোকানো হবে পল্টন ময়দান থেকেই৷’’
৭১ নং পৃষ্ঠায় যা লেখা আছে
‘‘আওয়ামী লীগের হয়ে এলেকশান করা এক রাজনীতিবিদ আমাকে বলেছেন যে শেখ হাসিনার চেয়ে বড় একনায়ক ভারতবর্ষের ইতিহাসে কখনো আসেনি৷ যত বড় একনায়কই হোক, অন্তত পার্টি মেন কিংবা জেনারেলদের সাথে আলোচনা করে একটা সিদ্ধান্ত দেন৷ সিনিয়র মেম্বারদের মতামত আপনি নেবেন কি না, সেটা ভিন্ন প্রসঙ্গ কিন্তু একনায়করা অন্তত আলোচনা করেন৷ শেখ হাসিনা এ প্রয়োজনটুকুও বোধ করেন না৷ দলের মহাসচিবও জানেন না তিনি কী করবেন৷’’
৭১ নং পৃষ্ঠায় আরও যা লেখা আছে
‘‘শেখ হাসিনা যে শুধুমাত্র ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্য পুরো দেশটাকে বিস্ফোরণমুখ করে ফেলেছেন এবং এর দায়ভার যে প্রায় এককভাবে তার- এই কথা কোনো সুস্থ মানুষ অস্বীকার করতে পারবেন বলে মনে হয় না৷ কিন্তু বিস্ময়করভাবে নন-রেসিডেন্ট শাহবাগী, যাদের অনেকেই খুব ভালো পশ্চিমা বিশ্ববিদ্যালয়ে বড় বড় ডিগ্রী করছেন; তারাও কোনো উচ্চবাচ্য করেন না৷ এমনকি অনেকে এখনও এই বিষয়ে হাসিনাকে সমর্থনও করেন৷’’