1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

আড়াই বছর ধরে বিক্ষোভ, তাদের কথা কে শোনে?

গৌতম হোড়
গৌতম হোড়
২৮ জুলাই ২০২৩

সরকারি স্থায়ী শিক্ষকরা আন্দোলনে বেশি যান না। আর বেসরকারি স্কুলের শিক্ষকেরা আন্দোলন করলেই তো চাকরি যায়।

https://p.dw.com/p/4UVgL
ভারতের পশ্চিমবঙ্গসহ নানা রাজ্যে বিভিন্ন দাবিতে আন্দোলন করছেন শিক্ষকেরা।
ভারতের পশ্চিমবঙ্গসহ নানা রাজ্যে বিভিন্ন দাবিতে আন্দোলন করছেন শিক্ষকেরা।ছবি: Payel Samanta/DW

এই লেখা যখন লিখছি, তখনও কলকাতায় বিক্ষোভ চলছে। শিক্ষকদের নয়, শিক্ষকের চাকরি প্রত্যাশীদের। যারা শিক্ষক হওয়ার পরীক্ষায় পাস করেছেন। তবু চাকরি পাননি। কারণ, চাকরি তো পেয়েছেন অন্যরা। পেয়েছেন মন্ত্রীর মেয়ে। পেয়েছেন, যাদের নম্বর কম ছিল, কিন্তু যারা যথাস্থানে নজরানা দিয়েছেন বলে অভিযোগ। শিক্ষকের চাকরির দাবি নিয়ে প্রায় নয়শ দিন ধরে রাজপথকেই তাদের ঘরবাড়ি বানিয়ে ফেলেছেন এই মানুষরা। কিন্তু তাদের কথা শোনে কে?

বিষয়টি এখন কলকাতা হাইকোর্টের বিচারাধীন। আদালেতর নির্দেশে সিবিআই তদন্ত করছে। টাকাপয়সা সংক্রান্ত বিষয় জড়িত থাকলে ইডিও দেখছে। এখনো পর্যন্ত যে খবর এসেছে, তাতে একটা বিষয় স্পষ্ট।  তৃণমূলের রাজত্বে শিক্ষকের চাকরি পাওয়ার একটাই নীতি, ফেলো কড়ি মাখো তেল। টাকা না দিলে শিক্ষকের চাকরি হয়নি। আর টাকা দিলে পদ না থাকলেও তা তৈরি করে চাকরি হয়ে গেছে। টাকা না দিলে? তাহলে ওই রাস্তায় নেমে আন্দোলন। দিনের পর দিন অবহেলা, বঞ্চনা। ভাবুন তো, সকালে উঠে রান্না করে খেয়ে, অন্যদের খাবার ব্যবস্থা করে ঘণ্টা দুই বা তিনেকের ট্রেন সফর করে মেয়েকে নিয়ে মা এসে ধরনায় বসতেন। দিনের পর দিন। উৎসব নেই, ভালোলাগা নেই, সাধ-আহ্লাদ নেই, আছে শুধু লড়াইয়ের ইতিহাস।

কতদিন টানা যেতে পারে এই আন্দোলন? আড়াই পেরিয়ে তিন বছরের দিকে যেতে চলেছে সেই হবু শিক্ষকদের প্রতিবাদ। কিন্তু সবকিছুই তো একদিন শেষ হয়ে যায়। পয়সা, উদ্যম, আশা, লড়াইয়ের শক্তি, সব। এ লড়াই তো ক্ষমতাবানদের বিরুদ্ধে। যাদের কাছে সরকারি ক্ষমতা আছে। তাদের বিরুদ্ধে এরকম দিনের পর দিন মাটি কামড়ে পড়ে লড়াই করাটা খুবই কঠিন। জলে ভিজে, রোদে পুড়ে লড়াই করতে হয়। মিডিয়া কিছুদিন পরে তাদের ভুলে যায়। মানুষের স্মৃতি থেকেও তারা দূরে সরে যান। ঠিক সেটাই হয়েছে। ধীরে ধীরে ধরনামঞ্চে মানুষ কমতে শুরু করেছে। এখন মাত্র কয়েকজন সেখানে ধরনা দিচ্ছেন। আশার কথা একটাই, প্রতিবাদ মুছে যায়নি। আশার কথা হলো, এখনো আদালতে বিচার বাকি।

এ তো গেল যারা শিক্ষক হননি, তাদের কথা। যারা হয়েছেন, তারা? হয়ত ঘুষ দিয়ে হয়েছেন, হয়ত বেনিয়ম করে হয়েছেন, কিন্তু হাইকোর্টের বিচারপতির নির্দেশে যখন তাদের চাকরি গেছে, তখন তারা কেঁদে ভাসাচ্ছেন, বাড়িতে অসুস্থ বাবা-মা, চাকরি গেলে খাবেন কেমন করে? এসব কথা বেনিয়ম করার সময় মনে ছিল না। চুরি বিদ্যা ততদিনই বড় বিদ্যা, যতদিন কেউ ধরা না পড়ে। পড়লে তো আঠারো ঘা লাগবেই। আর এ কেমন কথা, দুর্নীতি করব, ঘুষ দিয়ে চাকরি নেব, ধরা পড়লে আবেগের তাস খেলব! তা হয় নাকি?

পশ্চিমবঙ্গে নিয়মিত শিক্ষকরাও আন্দোলন করছেন, তবে তা বকেয়া ডিএ পাওয়ার দাবিতে। এক্ষেত্রে তারা বিচ্ছিন্নভাবে আন্দোলন করছেন না। সব সরকারি কর্মী একসঙ্গে করছেন। তার মধ্যে শিক্ষকরাও আছেন। বছরখানেক ধরে এই আন্দোলন চলছে।

তবে শিক্ষকদের নিজেদের কোনো বড় আন্দোলন এখন আর হয় না। পশ্চিমবঙ্গে দুই ধরনের শিক্ষক আছেন। সরকারি ও সরকার স্পনসরড স্কুলের শিক্ষকরা এবং বেসরকারি স্কুলের শিক্ষকরা। সরকারি বা সরকার পোষিত স্কুলের শিক্ষকরা স্কেলে বেতন পান। অবসরের পর পেনশন পান। তাই বেতন, পেনশনের জন্য তাদের আন্দোলন করতে হয় না। ফলে তাদের আন্দোলনের ক্ষেত্র কমে গেছে। এখন যেমন ডিএ-র দাবিতে তারা আন্দোলন করছেন। কিন্তু বেসরকারি শিক্ষকদের কথা না বলাই ভালো। এই বেসরকারি স্কুলে অবিভাবকদের কাছ থেকে যে হারে টাকা নেয়া হয়, তার ছিটেফোঁটাও শিক্ষকরা পান না। কিছু ব্যতিক্রম থাকতে পারে, দিল্লির বড় পাবলিক স্কুলগুলিকে বাদ দেয়া যেতে পারে, কিন্তু পশ্চিমবঙ্গে য়ে ব্যাঙের ছাতার মতো বেসরকারি ইংরেজি মাধ্যম স্কুল গজিয়ে উঠেছে, তাতে শিক্ষকদের অবস্থা যারপরনাই খারাপ। তাদের আন্দোলনের জায়গাও নেই। আন্দোলন করলেই তো চাকরি যাবে।

তাছাড়া পশ্চিমবঙ্গে আরেকটি ঘটনাও ঘটেছে। বাম আমলে শিক্ষকদের প্রধান সংগঠন ছিল বামপন্থিদের দখলে। তৃণমূল ক্ষমতা আসার পর তা চলে গেছে তৃণমূলের দখলে। ফলে তারা তো আর নিজের সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলনে নামবে না।

ভারতের অন্য রাজ্যে পরিস্থিতিটা এমন নয়। বিহারে শিক্ষক নিয়োগের ক্ষেত্রে একটা নিয়মের পরিবর্তন করা হয়েছে। আগে ছিল, বিহারের বাসিন্দারাই কেবল শিক্ষকের চাকরির জন্য আবেদন করতে পারবেন। সেই নিয়ম বদল করে এখন করা হয়েছে, যে কোনো রাজ্যের মানুষই আবেদন জানাতে পারবেন। সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে পথে নেমেছিলেন শিক্ষকরা। রাজভবন অভিযান করতে গিয়ে তারা পুলিশের লাঠি খেয়েছেন। বিহারে নানা দাবিতে শিক্ষকরা আন্দোলন করেন।

পাঞ্জাবে চাকরির নিশ্চয়তার দাবি করে শিক্ষকরা আন্দোলন করছিলেন। সাংরুরে তারা মুখ্যমন্ত্রী ভগবন্ত মানের বাড়ির দিকে যেতে চান। তাদের সমর্থনে এসেছিলেন কৃষক নেতারা। পুলিশ ব্যাপকভাবে লাটিপেটা করে। এরকম ঘটনা পাঞ্জাবজুড়েই হচ্ছে।

দিল্লি বিশ্ববিদ্য়ালয়ের গেস্ট এবং অ্যাড হক লেকচারাররা কিছুদিন আগেও আন্দোলন করেছেন।

অবিচার আছে, আন্দোলন আছে, তবে সেটা এখন মূলত করেন অস্থায়ী শিক্ষকেরা। স্থায়ী সরকারি শিক্ষকরা আর আন্দোলনের পথে বিশেষ যান না।