‘প্যান কেক শেপ কলাপস’
২৭ এপ্রিল ২০১৩বাংলাদেশে এ ধরণের ভবন ধস অতীতে হয়নি৷
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দুর্যোগ বিজ্ঞান ও ব্যবস্থাপনা বিভাগের অধ্যাপক ড. এএসএম মাকসুদ কামাল ডয়চে ভেলের ঢাকা প্রতিনিধিকে নিয়ে শুক্রবার সরেজমিন পরিদর্শন করেন সাভারের ধসে যাওয়া রানা প্লাজা৷ তিনি সেখানে উদ্ধারকর্মী এবং ফায়ার সার্ভিসের কর্মকর্তাদের নিয়ে প্রাথমিকভাবে ধসে পড়া ভবনটির নির্মাণ সামগ্রী পর্যবেক্ষণ করেন৷ পর্যক্ষেণের পর তিনি জানান, নিম্নমানের নির্মাণ সামগ্রী ও নির্মাণ ত্রুটিই এই ভয়াবহ ভবন ধসের কারণ৷
তিনি জানান, ভবনের পিলারগুলো ২ ফুট বাই ৩ ফুট ছিল৷ কিন্তু এ ধরণের বহুতল ভবনের পিলার হওয়া উতিত কমপক্ষে ৪ ফুট বাই ৬ ফুট৷ ভবনের বিম ও কলামের সংযোগ স্থলে কাটা রড ব্যবহার করা হয়েছিল৷ আর সেটা জোড়া লাগানো হয়েছিল খুবই নিম্নমানের ধাতব তার দিয়ে৷ রডও ব্যবহার করা হয়েছিল খুবই সাধারণ মানের৷ এর কোনোটাই গ্রহণযোগ্য নয়৷
ড. কামাল বলেন, নিম্নমানে ইটই শুধু ব্যবহার করা হয়নি, বালু ও সিমেন্টের অনুপাতও ঠিক ছিল না৷ আর দেয়াল ঢালাই না করে ইটের গাঁথুনি দেয়া হয়েছিল৷ এছাড়া, আশেপাশের এলাকা পর্যবেক্ষণ করে তিনি জানান, জলাভূমি ভরাট করে তৈরি করা হলেও ঠিকমতো পাইলিং করা হয়নি৷ এই সব মিলিয়েই ঘটেছে বিপর্যয়।
এর ফলে ভবনটি ধসে গিয়ে একটি তলার সঙ্গে আরেকটি তলা প্যান কেকের মতো মিশে গিয়েছে৷ দু'টি তলার মধ্যে ফাঁকা আছে মাত্র বিমের ২/৩ ফুট৷ এর কারণ, পিলারগুলো টিকে থাকেনি৷ ফলে শুরুতেই ভবনের ভিতরের থাকা মানুষ বড় একটি অংশ মারা গেছেন বলে আশঙ্কা করা যায়৷ যারা এখনো ভিতরে বেঁচে আছেন তাদের পক্ষে ৭২ থেকে ৯০ ঘণ্টার বেশি টিকে থাকা সম্ভব হবে না৷ তিনি জানান, এ ধরনের ধসকে বলে ‘প্যান কেক শেপ কলাপস'৷ এই ধসে ২টি তলার মাঝে খুবই অল্প জায়গা থাকে৷ তাই উদ্ধার তৎপরতা চালানোও খুব কঠিন হয়ে পড়ে৷
তিনি জানান, ভবনের পিছন দিকটা আগে দেবে গেছে৷ কারণ জলাভূমি পিছনের দিকে৷ তার ওপর, তারের টানে পুরো ভবনটিই বসে পড়েছে৷ আর খারাপ নির্মাণ সামগ্রীর কারণে একটির ওপর আরেকটি তলা বসে গেছে, যা ভিতরে থাকা মানুষগুলোকে দ্রুত মৃত্যুর মুখে ঠেলে দিচ্ছে৷
মাকসুদ কামাল জানান, এই ধরণের ভবন কিভাবে নির্মাণের অনুমতি দেয়া হলো আর নির্মাণের পর তা কিভাবে ব্যবহারের ছাড়পত্র পেল, তা বিস্ময়কর৷