আকাশপথে পরিবহণ সহজ করবে ফ্লাইয়িং ট্যাক্সি
১৪ নভেম্বর ২০২২আকাশে ওড়ার স্বপ্ন আবার নতুন করে বাস্তবায়িত হচ্ছে৷ বিদ্যুৎশক্তি চালিত এমন হাজার হাজার উড়ন্ত ট্যাক্সি আকাশ ছেয়ে যেতে পারে৷ ‘লিলিয়ুম' নামের জার্মান স্টার্টআপ কোম্পানি গোটা বিশ্বে আরও প্রায় একশ কোম্পানির সঙ্গে প্রতিযোগিতায় পাল্লা দিচ্ছে৷ সেরা প্রযুক্তি ও সবচেয়ে দ্রুত ছাড়পত্রের জন্য সব কোম্পানি এই দৌড়ে নেমেছে৷
স্পেনের আটলাস পরীক্ষা কেন্দ্রে সকালে চরম ব্যস্ততার পরিবেশ৷ কড়া গোপনীয়তার বেড়াজালে সবকিছু ঘটছে৷ এই প্রথম সেখানে ক্যামেরা টিম প্রবেশের অনুমতি পেয়েছে৷ কারণ কোম্পানির প্রতিষ্ঠাতা ডানিয়েল ভিগান্ড ‘ফিনিক্স ২' মডেলের প্রোটোটাইপের ক্ষমতা দেখাতে চান৷ তিনি বলেন, ‘‘আমাদের জন্য পরীক্ষামূলক উড়াল অত্যন্ত জরুরি৷ একদিকে আমরা যানটির ওড়ার ক্ষমতা পরখ করে দেখতে চাই৷ অর্থাৎ নিয়ন্ত্রণের সফ্টওয়্যার একই সঙ্গে এয়ারোডাইনামিক্স এবং শূন্যে ভেসে থাকার কাঠামোর সঙ্গে কীভাবে কাজ করছে, তা দেখতে চাই৷ অন্যদিকে আমরা গোটা প্রক্রিয়ার ধাপগুলিও পরীক্ষা করতে চাই, যাতে ছাড়পত্র পাওয়ার সময়ে যতটা সম্ভব দক্ষতা বজায় রাখা সম্ভব হয়৷''
‘ফিনিক্স ২' উড়ন্ত যানের মূল্য প্রায় ৪০ লাখ ইউরো৷ এখনো মর্যন্ত এই প্রোটোটাইপ মানুষ ছাড়াই উড়ছে৷ একটি নিয়ন্ত্রণ কেন্দ্র থেকে রিমোট কনট্রোলের মাধ্যমে সেটি চালনা করা হচ্ছে৷
প্রতিটি পরীক্ষামূলক উড়ালের সময়ে ৩০ জন ইঞ্জিনিয়ার ও সফ্টওয়্যার বিশেষজ্ঞ উপস্থিত থাকেন৷ লিলিয়ুম কোম্পানির টেস্ট পাইলট আন্দ্রেয়াস ফিস্টারার বলেন, ‘‘প্রত্যেকটি উড়াল নতুন এক অধ্যায়৷ পরীক্ষামূলক উড়াল আসলে ক্ষমতার সীমা খতিয়ে দেখার মতো৷ একের পর এক সীমা ভেঙে চলার সঙ্গে সঙ্গে প্রয়োজনে এক ধাপ পিছিয়ে যাবার জন্যও প্রস্তুত থাকতে হয়৷''
কয়েক ঘণ্টার প্রস্তুতির পর উড়াল শুরু করার পালা৷ ৩৬টি বৈদ্যুতিক রোটোর প্রথমে যানটিকে সোজা শূন্যে ভাসিয়ে দিলো৷ তারপর সেই ফ্লাইয়িং ট্যাক্সি একটি দিকে যাত্রা শুরু করলো৷
এমন অভিনব কনসেপ্ট নিয়ে ভিগান্ডের গর্বের শেষ নেই৷ তবে প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী এই ইলেকট্রিক জেট সত্যি ২৫০ কিলোমিটার পর্যন্ত উড়তে পারবে কিনা, সে বিষয়ে কয়েক জন বিশেষজ্ঞের মনে সন্দেহ রয়েছে৷
ফ্লাইয়িং ট্যাক্সির মধ্যে একজন পাইলট ও ছয় জন যাত্রী বসতে পারেন৷ ২০২৫ সালেই লিলিয়ুম এই যান বাজারে আনতে চায়৷ ডানিয়েল ভিগান্ড বলেন, ‘‘আমি নিজে ইঞ্জিনিয়ার৷ আমি এই উড়োজাহাজের পেছনে পদার্থবিদ্যার ক্রিয়া বুঝতে পারি৷ পাশে দাঁড়িয়ে এটিকে উড়তে দেখলে, প্রায় কোনো শব্দ না শুনলে সেটা আমার গভীর বিস্ময়ের কারণ হয়৷ গোটা টিম কীভাবে নিরাপদে এটি চালাতে চাইছে, সেটা আমাকে মুগ্ধ করে৷''
এই স্টার্টআপ কোম্পানি সম্প্রতি পুঁজিবাজারে নথিভুক্ত হয়েছে এবং আরও উচ্চাকাঙ্ক্ষী লক্ষ্যমাত্রাও স্থির করছে৷ লিলিয়ুম কয়েক বছরের মধ্যেই কোটি কোটি ইউরো আয় করবে বলে ভিগান্ড প্রতিশ্রুতি দিচ্ছেন৷ গাড়ি ও ট্রেনের বিকল্প হিসেবে এই ফ্লাইয়িং ট্যাক্সিকে তুলে ধরা হচ্ছে৷ ডানিয়েল বলেন, ‘‘এর মাধ্যমে আমরা আঞ্চলিক স্তরে এক নতুন পরিবহণ প্রণালী সৃষ্টি করতে পারি, যার আওতায় আমরা ভার্টিকাল টেকঅফ করে, এমন ইলেকট্রিক বিমানের মাধ্যমে শহরগুলিকে যুক্ত করতে পারবো৷ জমির পরিবহণের তুলনায় অনেক দ্রুত গতিতে গন্তব্যে পৌঁছতে পারবো৷''
কিন্তু এমন ফ্লাইয়িং ট্যাক্সি চাপার সামর্থ্য কয় জনের রয়েছে? প্রথমদিকে নিশ্চয় ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধি এবং ধনী ব্যক্তিরা এমন যান ব্যবহার করতে পারবেন বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন৷ কিন্তু বিমান চলাচল সংক্রান্ত বিশেষজ্ঞ মানফ্রেড হাডারের মতে, চিরকাল সেরকমটা থাকবে না৷ তিনি বলেন, ‘‘নতুন মোবিলিটি প্রণালী হিসেবে ফ্লাইয়িং ট্যাক্সি দীর্ঘমেয়াদী ভিত্তিতে একমাত্র তখনই সফল হবে, যখন সেটি সব মানুষের নাগাল ও সামর্থ্যের মধ্যে আসবে৷ সাধারণ মানুষের কাছে গ্রহণযোগ্যতার লক্ষ্যে শিল্পজগত কাজ করছে৷ সেই সঙ্গে বড় আকারে উৎপাদনের মাধ্যমে ফ্লাইয়িং ট্যাক্সির দামও দ্রুত কমানোর উদ্যোগ চলছে৷''
কিন্তু প্রশ্ন হলো, এমন যান কোথা থেকে ওঠানামা করবে? শব্দদূষণের আশঙ্কাই বা কতটা? এখনো অনেক প্রশ্নের সদুত্তর পাওয়া যায় নি৷ তবে নতুন এই প্রযুক্তি যে পরিবেশবান্ধব, সে বিষয়ে সন্দেহ নেই৷ লিলিয়ুম কোম্পানির প্রতিষ্ঠাতা ডানিয়েল ভিগান্ড বলেন, ‘‘এই পণ্যের পরিবেশবান্ধব দিক হলো, উড়ন্ত যানটি কোনো কার্বন নির্গমন করে না, যেটা একটা বড় পদক্ষেপ৷ দ্বিতীয় পদক্ষেপে আমাদের দেখাতে হবে, যে উৎপাদন থেকে শুরু করে যানটির আয়ু শেষ হওয়া পর্যন্ত আমরা টেকসই পদ্ধতিতে ব্যাটারি ও কাঠামোর রিসাইক্লিং করতে পারছি৷''
আপাতত ‘ফিনিক্স ২' হ্যাঙারে ফিরে যাচ্ছে৷ স্পেনের অলিভ গাছের সারির উপর দিয়ে আরও অনেকবার ওড়ার পর ফ্লাইয়িং ট্যাক্সির স্বপ্ন সম্ভবত বাস্তবে পরিণত হবে৷
মিশায়েল আল্টেনহেনে/এসবি