আওয়ামী লীগের উপ কমিটিতে হত্যা মামলার আসামি
৩ সেপ্টেম্বর ২০২১ডয়চে ভেলের কনটেন্ট পার্টনার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের প্রতিবেদন অনুযায়ী, জামাল হোসেন মিয়া দাবি করেছেন, তার নামে ‘এলাকার গ্রুপিংয়ে’ কিছু মামলা হয়েছিল, সেসব এখন আর ‘নেই’৷ তবে তদন্ত কর্মকর্তারা ভিন্ন তথ্য দিয়েছেন৷
পুলিশের দৃষ্টিতে চট্টগ্রামের চোরাই গাড়ি বিক্রির মামলায় জামাল হোসেন মিয়া এখনও ‘পলাতক’৷ এবং ফরিদপুরের একটি হত্যা মামলায় পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)-এর পুনঃতদন্ত চলছে৷ তার বিরুদ্ধে এ ধরনের অভিযোগ থাকার পরও তাকে আওয়ামী লীগের উপ কমিটিতে কেন রাখা হয়েছে, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন খোদ আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতারাই৷
ক্ষমতাসীন দলটির কেন্দ্রীয় সাংগঠনি সম্পাদক এস এম কামাল হোসেন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, ‘‘আমি মনে করি আওয়ামী লীগ, বঙ্গবন্ধু ও জননেত্রী শেখ হাসিনার প্রতি যাদের কমিটমেন্ট আছে, তাদেরকেই দলে নেওয়া উচিত৷ উপকমিটিতে প্রবেশ করার আগেই যাচাই বাছাই করা উচিত৷’’
২০১৩ সালে জামাল হোসেন জাতীয় সংসদের উপ নেতা সৈয়দা সাজেদা চৌধুরীর সহকারী একান্ত সচিব হিসেবে কিছুদিন দায়িত্ব পালন করলেও পরে নানা অভিযোগ ওঠায় তাকে বাদ দেওয়া হয়৷ সম্প্রতি তার বিরুদ্ধে চট্টগ্রামের আকবর শাহ থানায় ছিনতাই হওয়া গাড়ি বিক্রির অভিযোগ করে একটি মামলা করেন সালাহ উদ্দিন নামের এক ব্যক্তি৷ সে মামলায় ২ নম্বর আসামি জামাল হোসেন মিয়া৷
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা নগর পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগের (উত্তর) এসআই মো. আলমগীর হোসেন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, ‘‘জাল কাগজপত্র ও নম্বর প্লেট তৈরির ঘটনায় করা ওই মামলার তিন আসামির মধ্যে সুভাষ চন্দ্র দে কারাগারে এবং সিরাজুল ইসলাম জামিন নিয়েছেন৷ আসামি জামাল হোসেন মিয়া পলাতক, তাকে গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে৷’’
তিনি আরো বলেন, ‘‘এ ঘটনা নিয়ে ডিবির একাধিক দল কাজ করছে৷ পুরো চক্রে কারা আছে, কারা জাল কাগজ তৈরি করে এবং চট্টগ্রামে ও দেশের অন্য কোথাও তাদের সদস্যরা সক্রিয় কিনা, পুরো বিষয়টা তদন্ত করা হচ্ছে তাই একটু সময় লাগছে৷’’
২০১৭ সালের ১৩ অক্টোবর ফরিদপুরের নগরকান্দা উপজেলার তালমার মোড়ে সংসদ উপনেতার গাড়িতে হামলার ঘটনায় নগরকান্দা থানা পুলিশ বাদী হয়ে মামলা করে৷ সে মামলায় জামাল হোসেন মিয়াকে আসামি করা হয়৷ বর্তমানে মামলাটি বিচারাধীন বলে জানিয়েছেন ফরিদপুর জেলার পুলিশ সুপার আলীমুজ্জামান৷ তবে জামালের বিষয়ে কোনো তথ্য দিতে পারেননি তিনি৷
২০১৯ সালে ফরিদপুরের নগরকান্দা-সালথা নির্বাচনি এলাকায় মারামারির এক ঘটনায় হাতুড়ি দিয়ে পিটিয়ে সোবহান মাতুব্বর নামের ৫০ বছর বয়সি এক ব্যক্তিকে হত্যা করা হয়৷ হত্যাকাণ্ডের পর স্থানীয়রা জামালের ফাঁসির দাবিতে বিক্ষোভ করেন৷
সুবাহান মাতুব্বর হত্যা মামলায় ২ নম্বর আসামি করা হয় জামাল হোসেন মিয়াকে৷ পরে সিআইডির অভিযোগপত্রে তাকে বাদ দেওয়া হলে বাদী আপত্তি জানান৷ বর্তমানে আদালতের নির্দেশে ওই মামলার তদন্ত করছে পিবিআই৷
বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তদন্ত কর্মকর্তা পুলিশ পরিদর্শক গৌরাঙ্গ কুমার বসু বলেন, ‘‘সিআইডি মামলার ২ নম্বর আসামি জামাল হোসেন মিয়াকে বাদ দিয়ে ২০১৯ সালের ২৮ সেপ্টেম্বর আদালতে চার্জশিট দেয়৷ বাদীর আবেদনের প্রেক্ষিতে পিবিআই এখন তদন্ত করছে৷ আমরা এখন প্রতিটি বিষয় খতিয়ে দেখবো৷’’
২০১৬ সালে আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আফজাল হোসেন তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক থাকার সময়ে ওই উপ কমিটির সদস্য পদে আসেন জামাল হোসেন মিয়া৷
তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক হিসেবে সেলিম মাহমুদ দায়িত্ব পাওয়ার পরে ২০২১ সালের উপ কমিটিতে আবারও নাম লেখান জামাল৷
জামালের বিরুদ্ধে অভিযোগের বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে সেলিম মাহমুদ বলেন, ‘‘এ বিষয়ে আমি কিছু জানি না, সে গত কমিটিতে ছিল৷ এবার কমিটি করার সময় আমার আগের সম্পাদক ১৫ জনের নাম দিয়েছেন, তার মধ্যে জামাল হোসেন মিয়ার নামও ছিল৷ সেই হিসেবে বর্তমান কমিটিতে তিনি আছেন৷’’
আওয়ামী লীগের একাধিক নেতা জানান, মূলত সাংগঠনিক সম্পাদক আফজাল হোসেনের ‘আগ্রহের কারণে' জামাল হোসেন মিয়াকে কেন্দ্রীয় উপ কমিটিতে রাখা হয়েছে৷
এ বিষয়ে আফজাল হোসেন প্রথমে কথা বলতে রাজি না হলেও পরে বলেন, ‘‘দেশে আর রিপোর্ট নাই? এটাই কেন করতে হবে?’’ জামাল হোসেন মিয়া তার সুপারিশেই কেন্দ্রীয় উপ কমিটিতে স্থান পেয়েছেন কিনা জানতে চাইলে আফজাল হোসেন বলেন, ‘‘আমি কারো জন্য সুপারিশ করতেই পারি৷’’
মামলাগুলোর বিষয়ে জামাল হোসেন মিয়া বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, ‘‘আমার নামে কয়েকটি মামলা ছিল, এখন নেই৷ আর এই মামলাগুলো মূলত এলাকার গ্রুপিংয়ের কারণে৷ এলাকায় আমি একটি দল চালাই, অন্যরা আরেকটা দল চালায়৷ গ্রুপিংয়ের কারণে মামলা হয়েছিল৷’’
চট্টগ্রামের চোরাই গাড়ির মামলা সম্পর্কে জামাল হোসেন বলেন, ‘‘এটা মিথ্যা মামলা, আমি এই মামলা থেকে অব্যাহতি পেয়েছি৷ আমাকে রাজনৈতিকভাবে হেয় প্রতিপন্ন করার জন্য একটি মহল পিছনে লেগেছে, আমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র চলছে৷’’
জামাল দাবি করেন, তদন্ত কর্মকর্তা ‘হয়ত জানেন না’ যে তিনি অব্যাহতি পেয়েছেন, সে কারণে পলাতক বলছেন।
তার এ বক্তব্যের বিষয়ে তদন্ত কর্মকর্তা গোয়েন্দা বিভাগের এসআই মো. আলমগীর হোসেনকে প্রশ্ন করলে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেন, ‘‘মামলার তদন্তই তো এখনো শেষ হয়নি। এ অবস্থায় অব্যাহতি নেওয়ার আইনগত কোনো সুযোগ নেই। আসামি জামাল হোসেন মিয়া এখনো পলাতক।’’
এনএস/এসিবি (বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম)