পাকিস্তানে ‘অনার কিলিং’ বন্ধ হচ্ছে না
২৪ অক্টোবর ২০১৬গত জুন মাসে লাহোরের এক মা তাঁর ১৮ বছরের মেয়ের গায়ে আগুন লাগিয়ে পুড়িয়ে মেরে ফেলেন৷ মেয়ের অপরাধ, সে পরিবারের নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে ভালোবাসার মানুষকে বিয়ে করেছে৷
তারও আগে পাঞ্জাব প্রদেশে ১৯ বছরের এক স্কুল শিক্ষিকাকে তাঁর চেয়ে দ্বিগুণ বয়সের একজন মানুষকে বিয়ে করতে রাজি না হওয়ায় পুড়িয়ে মারা হয়৷
বেসরকারি সংস্থা ‘হিউম্যান রাইটস কমিশন অফ পাকিস্তান'- এর হিসেবে, গত বছর প্রায় ১,১০০ নারী অনার কিলিংয়ের শিকার হয়েছেন৷
সে দেশের মানবাধিকার কর্মী তাহিরা আব্দুল্লাহ ডয়চে ভেলেকে বলেন, ইদানিং এই ধরণের হত্যাকাণ্ডের খবর গণমাধ্যমে বেশি আসায় মানুষের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধি পাচ্ছে৷ তবে পাকিস্তানি সমাজে রাজনীতি ও আইন প্রণয়নের ক্ষেত্রে মডারেটদের তুলনায় ধর্মীয় উগ্রবাদীদের ভূমিকা বেড়ে যাওয়ায় সমস্যার সমাধান করা যাচ্ছে না৷
অনার কিলিং বন্ধে ২০০৪ সালে যে আইন হয়েছে, তা আরও শক্তিশালী করার প্রস্তাব দিয়েছেন আব্দুল্লাহ৷ তিনি বলেন, ‘‘বর্তমানে এ ধরণের হত্যাকাণ্ডগুলোর অধিকাংশই আদালত পর্যন্ত যায় না৷ ফলে অপরাধ করেও পার পাওয়া যায় এমন একটি ধারণা প্রতিষ্ঠা পেয়েছে৷''
এসব ক্ষেত্রে রাষ্ট্রকেই ভুক্তভোগীর দায়িত্ব নিতে হবে এবং অপরাধীদের জন্য কঠোর শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে বলে জানান আব্দুল্লাহ৷ গণমাধ্যমের সমালোচনা করে তিনি বলেন, ‘‘অনার কিলিং বিষয়ে প্রতিবেদন করতে গিয়ে অনেক সময় দেখা যায় তারা অনিচ্ছাকৃতভাবে অপরাধীকেই নায়ক বানিয়ে দিচ্ছে৷''
সমাজকর্মী ও চলচ্চিত্র নির্মাতা সমর মিনুল্লাহ ডয়চে ভেলেকে বলেন, শুধু আইন করে এমন হত্যাকাণ্ড বন্ধ হবে না৷ ‘‘যতদিন না মানুষের মধ্যে নারীর প্রতি ইতিবাচক মনোভাব আসবে, ততদিন পর্যন্ত এই অবস্থা চলতে থাকবে,'' বলেন তিনি৷
অনার কিলিং বন্ধে ভূমিকা না নেয়ায় ধর্মীয় নেতাদের সমালোচনা করেন মিনুল্লাহ৷ সে দেশের শীর্ষস্থানীয় ধর্ম বিষয়ক নীতি নির্ধারণী সংস্থা ‘কাউন্সিল অফ ইসলামিক ইডিওলজি' (সিআইআই)-র দেয়া সাম্প্রতিক এক বক্তব্যের সমালোচনা করে তিনি বলেন, ‘‘তাঁরা (সিআইআই) প্রয়োজন হলে স্বামী স্ত্রীকে ‘অল্প প্রহার' করতে পারবে, এমন বিষয় নিয়ে কথা বললেও, কখনো নারী নির্যাতনের সমালোচনা করেন না৷''