1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

অ্যাম্বাসাডরের আক্ষেপ টেসলায় পূরণ?

পায়েল সামন্ত কলকাতা
২০ জানুয়ারি ২০২২

তৃণমূল সরকার গাড়ি শিল্প আনার লক্ষ্যে শিল্পপতি ইলন মাস্ককে রাজ্যে আমন্ত্রণ জানিয়েছে৷ একসময় এই বাংলাতেই ছিল গাড়ি শিল্পের উজ্জ্বল অতীত৷ এশিয়ার বৃহত্তম গাড়ি কারখানা হিন্দুস্তান মোটরসের কঙ্কাল আজো পড়ে আছে পশ্চিমবঙ্গে৷

https://p.dw.com/p/45pNK
ছবি: Aly Song/REUTERS

টেসলা গাড়ির কর্ণধার ইলন মাস্কের একটি টুইট ঘিরে নতুন জল্পনা তৈরি হয়েছে৷ সম্প্রতি মার্কিন ধনকুবের শিল্পপতি মাস্ক একটি টুইট করেন৷ সেখানে তিনি লিখেছেন, ভারত সরকারের সঙ্গে কাজ করতে তাকে চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হতে হচ্ছে৷ ভুবনখ্যাত টেসলা গাড়ি ভারতের বাজারে কবে আসবে, এই সংক্রান্ত প্রশ্নের জবাবে মাস্কের এই টুইট৷ এর জবাবে টেসলা কর্ণধারকে বাংলায় বিনিয়োগের আহ্বান জানিয়েছে রাজ্য সরকার৷ 

পশ্চিমবঙ্গের সংখ্যালঘু বিষয়ক মন্ত্রী মহম্মদ গোলাম রব্বানী মাস্ককে রিটুইট করে লিখেছেন, পশ্চিমবঙ্গের শিল্প বিনিয়োগের অনুকূল পরিবেশ রয়েছে৷ মাস্ক এই রাজ্যে বিনিয়োগ করতে এলে স্বাগত৷ বাংলার পাশাপাশি আরো দুই অ-বিজেপি দল শাসিত রাজ্য তেলেঙ্গানা ও মহারাষ্ট্র একই ধরনের আমন্ত্রণ জানিয়েছে৷ ইতিমধ্যে রাজনৈতিক চাপানউতোর শুরু হয়েছে এ নিয়ে৷ যখন আলোচনা তুঙ্গে, সেই সময় একবার ফিরে দেখা বাংলার অ্যাম্বাসাডর গাড়ি শিল্পের সোনালি অতীতকে৷

হাইকোর্টে মামলা করেছি, মুখ্যমন্ত্রী বা শ্রমমন্ত্রী কর্ণপাত করেননি: শান্তশ্রী চট্টোপাধ্যায়

অটোমোবাইল শিল্পে ভারত যে গতি পেয়েছিল, তার অনেকটাই হিন্দমোটরের হাত ধরে৷ হুগলির উত্তরপাড়ায় ১৯৫৪ সালে গড়ে উঠেছিল এশিয়ার বৃহত্তম গাড়ি কারখানা৷ সেই কারখানা আজ খণ্ডহরের মতো পড়ে আছে৷ ২০১৪ সালের মে মাসে সাসপেনশন অফ ওয়ার্কের নোটিস পড়ে সি কে বিড়লা গোষ্ঠীর মালিকানাধীন হিন্দমোটরে৷ ৭৪৪ একরে গড়ে ওঠা কারখানা চত্বরের বড় অংশ জঙ্গলে ভরে গিয়েছে৷ একের পর এক শেডের নীচে মেশিন শপ, ইঞ্জিন শপ থেকে ক্যান্টিন, অডিটোরিয়ামের ভগ্নাবশেষ দাঁড়িয়ে আছে হিন্দমোটর রেল স্টেশনের পাশে৷ 

রামশঙ্কর যাদব, সঞ্জয় সিংরা কাজ করতেন এই কারখানায়৷ এখনো পে রোলে তাদের নাম আছে৷ এখানকার ভগ্নপ্রায় জল, বিদ্যুৎহীন আবাসনে এঁরা থাকেন৷ দিনে এক ঘণ্টা জল-বিদ্যুৎ মেলে৷ এখনো কেন এই মাটি আঁকড়ে পড়ে আছেন? রামশঙ্কর বলেন, "চাকরি ছেড়ে দিলে এই আবাসন ছাড়তে হবে৷ সে ক্ষেত্রে অবশ্য প্রভিডেন্ট ফান্ড, গ্রাচুয়িটির টাকা পাব৷ অবসরের বয়স হলে চলে যাব৷ কারখানা আবার চালু হবে এমন কোনো আশা আমাদের নেই৷”

এই হুগলি জেলারই সিঙ্গুরে টাটার গাড়ি কারখানা তৈরির কাজ অনেকটা এগোলেও শেষমেষ তা বাতিল হয়ে যায়৷ মোটর গাড়ি তৈরিতে দক্ষ শ্রমিকরা আশা করেছিলেন, তাঁদের অভিজ্ঞতা সেখানে যদি কোনো ভাবে কাজে লাগে৷ সেই স্বপ্নের আগেই অবশ্য মুছে গেছে হিন্দমোটরের পুনরুজ্জীবনের আশা৷ এলাকার প্রাক্তন সাংসদ ও বাম শ্রমিক সংগঠনের নেতা শান্তশ্রী চট্টোপাধ্যায় বলেন, "হাইকোর্টে মামলা করেছি৷ মুখ্যমন্ত্রী বা শ্রমমন্ত্রী এ ব্যাপারে কর্ণপাত করেননি৷ কারখানার অধিকাংশ যন্ত্রপাতি নিয়ে চলে গেছে বা চুরি হয়েছে৷ ফলে নতুনভাবে এই কারখানা গড়ে তুলতে হবে৷ বড় কোনো বিনিয়োগ না এলে সেটা সম্ভব নয়৷” সুতরাং এই কারখানার অনেক শ্রমিকের কাছে সম্বল শুধু স্মৃতি৷ 

একসময় দিনে ১০০টি গাড়ি কারখানা থেকে বেরোত: দেবীপ্রসাদ বসু রায়

২০০৬ সালে অবসর নিয়েছেন দেবীপ্রসাদ বসু রায়৷ তিনি বলেন, "ওই সময় দিনে ১০০টি গাড়ি কারখানা থেকে বেরোত৷ ১৯৯৩ সাল অবধি আমরা এইভাবে কাজ করেছি৷ ১৪ হাজার শ্রমিক কাজ করত৷ অ্যাম্বাসাডর গাড়ির তখন বিপুল সুনাম ছিল৷ উদারীকরণে বাইরের গাড়ি ব্যবসা করতে ঢুকলে আমাদের গাড়ি মার খেতে শুরু করল৷ তারপর মালবাহী ট্রেকার গাড়ি, লাক্সারি কন্টেসাও তৈরি করা শুরু হয়েছিল৷”    

বাম সরকারের পতনের পর পশ্চিমবঙ্গে তৃণমূল শাসনের এক দশক পার হয়ে গিয়েছে৷ এখন হিন্দুস্তান মোটরসের একাংশে অন্য সংস্থা টিটাগড় ওয়াগন মেট্রোর কোচ তৈরির অর্ডারও পেয়েছে৷ কিন্তু তার সঙ্গে হিন্দমোটরের সম্পর্ক নেই৷ বরং হিন্দুস্তান মোটরস রয়ে গিয়েছে সেই তিমিরেই৷ সিঙ্গুরের প্রসঙ্গে দেবীপ্রসাদ বলেন, "সিঙ্গুরের ন্যানো গাড়ির বডি তৈরির অর্ডার পেয়ে গিয়েছিলাম৷ আমরা তৈরি শুরু করে দিয়েছিলাম৷ এতে আমাদের কারখানা আরও কাজ পেত৷ কিন্তু সিঙ্গুরের সম্ভাবনার সঙ্গে সঙ্গে সেটাও নষ্ট হয়ে গেল৷”

এলাকার প্রাক্তন বিধায়ক ও বিশিষ্ট সাংবাদিক প্রবীর ঘোষাল বলেন, "অপদার্থ ম্যানেজমেন্টের জন্যই কারখানার এই হাল৷ যে সময় অ্যাম্বাস্যাডর গাড়ির আধুনিকীকরণ দরকার ছিল তা করা হয়নি৷ কারখানা চালু রাখতে কোনো সরকারই যে খুব সদর্থক পদক্ষেপ নিয়েছে একথা বলা যায় না৷” 

তবু বাম সরকারের আমলে চালু হওয়া হাজার দেড়েক টাকার মাসিক ভাতাই রামশঙ্কর যাদবদের কিছুটা রসদ যোগায়৷ নতুন গাড়ি শিল্পের কথা শুনে তিনি বলেন, "নতুন গাড়ির কারখানা হলে তাতে যদি আমাদের অভিজ্ঞতা কিছু কাজে লাগে৷ কিন্তু এখন বয়স হয়ে গেছে, কতটা পারব জানি না৷”

টেসলা নিয়ে এখনই খুব একটা আশা করতে রাজি নন আইআইএম-এর অধ্যাপক অর্থনীতিবিদ অনুপ সিনহা৷ তিনি বলেন, "ইলন মাস্ক বাংলায় এলে সুবিধা হবে কিনা সেটা দেখে নিতে হবে৷ এখানে কতটা জমি নেবেন, কত কর্মসংস্থান হবে, অনুসারী শিল্পের সম্ভাবনা কী, সবটা বুঝে রাজ্যের এগোনো উচিত৷”