মিশরের অন্ধকার দিক
১৩ জুলাই ২০১৬এ ধরনের বন্দিদের উপর চলছে অমানুষিক নির্যাতন৷ স্পর্শকাতর অঙ্গে বৈদ্যুতিক শক, ধর্ষণের মতো ঘটনাও ঘটছে৷ স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এই অভিযোগ অস্বীকার করলেও দীর্ঘদিন আটকে থাকা অনেক ব্যক্তিকে রিমান্ডে নেয়ার কথা স্বীকার করেছে৷
মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস ওয়াচ বুধবার যে প্রতিবেদন তুলে ধরেছে, তাতে মিশরের পুলিশ ও বিচার বিভাগের ভয়ঙ্কর দিকের কথা বলা হয়েছে৷ তারা বলছে, এই দুটো বিভাগের অনৈতিক আচরণের কারণে ২০১৫ সালের শুরু থেকে অনেক মানুষ নিখোঁজ রয়েছে৷
লন্ডনভিত্তিক সংস্থাটি জানাচ্ছে, ভিন্ন মতাবলম্বীদের দমন করতেই এ পথ বেছে নিয়েছে আইনশৃঙ্খলারক্ষাকারী বাহিনী৷ মিশরের রাষ্ট্রীয় পুলিশের প্রধান হাতিয়ার হয়ে দাঁড়িয়েছে মানুষকে উঠিয়ে নিয়ে গিয়ে গুম করে দেয়া৷ এ কারণে বর্তমানে সেখানে কেউ মত প্রকাশ করার সাহস পায় না৷ মানবাধিকার সংস্থাটির মধ্যপ্রাচ্য ও উত্তর আফ্রিকার পরিচালক ফিলিপ লুথার জানালেন এসব একথা৷
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মিশরে গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত প্রথম প্রেসিডেন্ট মুরসির কয়েক হাজার অনুসারীকে বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে যায় পুলিশ৷ তারপর তাদের বন্দিশালায় পাঠানো হয়, যাদের বেশিরভাগকেই ভয়াবহ নির্যাতন করা হয়৷
নির্যাতনের শিকার এবং প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, বন্দিদের হাতকড়া পরিয়ে নগ্ন করে শরীরের নানা স্পর্শকাতর অঙ্গে বৈদ্যুতিক শক দেয়া হয়, যেমন পুরুষাঙ্গ বা যোনী, ঠোঁট এবং কান৷ দীর্ঘসময় ধরে এই শক দেয়া হয়৷ এছাড়া যৌন নির্যাতনতো রয়েছেই৷ অনেক পুরুষ ও নারীকে মৃত্যুর ভয় দেখিয়ে এবং মারধোর করে ধর্ষণ করা হয়৷
একটি ঘটনার কথা উল্লেখ করা হয়েছে প্রতিবেদনে৷ মাজেন মোহাম্মেদ আব্দুল্লাহ নামে ১৪ বছর বয়সি এক কিশোরকে গত বছরের সেপ্টেম্বরে আটক করে আইন শৃঙ্খলারক্ষাকারী বাহিনী৷ অবিরাম ধর্ষণ এবং মলদ্বারে লাঠি দিয়ে নির্যাতন করা হয় তাকে যাতে সে দোষ স্বীকার করতে বাধ্য হয়৷
মিশরের মানবাধিকার সংস্থা ন্যাশনাল কাউন্সিল জানায়, ২০১৫ সালের এপ্রিল থেকে এ বছরের মার্চ পর্যন্ত ২৬৬ টি এ ধরনের ঘটনার তথ্যাপ্রমান তাদের কাছে আছে৷
জানুয়ারিতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানায় যে, স্বজনদের অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, শতাধিক মানুষ আইনশৃঙ্খলাবাহিনীর হেফাজতে আছে৷ তাদের আইনসঙ্গত কারণেই আটক করা হয়েছে বলেও জানিয়েছিলেন তিনি৷
২০১৩ সালের জুলাইতে সামরিক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে মোহাম্মদ মুরসির পতন ঘটায় আব্দুল ফাত্তাহ আল সিসির সরকার৷ এরপরই মুরসি সমর্থকদের ধরপাকড় ও নির্যাতন শুরু হয়৷
আল সিসি সরকার মুরসির দল মুসলিম ব্রাদারহুড এবং সমমনা ফ্রিডম ও জার্স্টিস পার্টিকে সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে ঘোষণা করে৷ ২০১৩ সালের আগস্টে সেনা অভিযানে ১ হাজারেরও বেশি মানুষ নিহত হয়৷
এপিবি/ডিজি (এপি, এএফপি, ডিপিএ)