অস্ট্রেলিয়ায় গণভোট: আদিবাসীদের স্বীকৃতি কি মিলবে?
অস্ট্রেলিয়ার রাজনৈতিক ও সামাজিক সিদ্ধান্তে কতটুকু গুরুত্ব পাবে আদিবাসীদের মতামত? শনিবারে আসন্ন এবিষয়ে গণভোট৷ বিস্তারিত ছবিঘরে...
অনিরাপদ জীবন
টারনা অ্যান্ড্রুজ গ্রামের বাইরে স্কুলের বারান্দায় বসে আছেন৷ প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত শিক্ষিকা তিনি, স্কুলের প্রিন্সিপাল হিসাবেও কাজ করেছেন ৩৮ বছর৷১৪ অক্টোবর অস্ট্রেলিয়ার নাগরিকেরা গণভোটের মাধ্যমে সিদ্ধান্ত নেবেন যে আদিবাসী ও টোরেস স্ট্রেটের বাসিন্দাদের কতটুকু অধিকার সংবিধানে দেওয়া হবে৷ টারনার প্রশ্ন, ‘‘আমি যদি ভোট দিই, সরকার কি আমার কথা শুনবে?’’
ভবিষ্যৎ অস্পষ্ট
অস্ট্রেলিয়ার শহর অ্যালিস স্প্রিংসে ছড়িয়ে ছিটিয়ে বাস করেন আদিবাসীরা৷ তাদের অনেকের মতে, সেখানে নেই পর্যাপ্ত চাকরি, স্বাস্থ্য পরিষেবা ও ইন্টারনেট সংযোগ৷ অনেক আদিবাসী লিখতে পড়তেও জানেন না৷ শিক্ষা ব্যবস্থাও যথেষ্ট নেই৷
বদল আনবে ভোট?
এবারের গণভোটের মূল বিষয় সংবিধান বদলে তাতে আদিবাসীদের অধিকার বর্ধিত করা৷ এই লক্ষ্যে নতুন প্রতিষ্ঠান ‘দ্য ভয়েস’ তৈরি করা হবে, যার কাজ হবে সংসদ সদস্যদের আদিবাসীদের বিষয়ে পরামর্শ দেওয়া৷
প্রশ্ন, শুধু প্রশ্ন
অবসরপ্রাপ্ত প্যাট্রিক অলিভার তার পরিবারের আরো ১৫জন সদস্যের সাথে এক ছাদের তলায় বাস করেন৷ গণভোটে তার প্রবল অনাস্থা৷ মাত্র দুই মাস আগে এই ভোটের কথা তিনি জানতে পারেন৷ কীভাবে এই গণভোট তার এলাকার ছয়শ আদিবাসীকে সাহায্য করবে, জানতে চান তিনি৷ জমির অধিকার আদিবাসীরা পাবে কি না, সেবিসয়েও তিনি সন্দিহান৷
বেকার তারুণ্য
গত বছর অ্যালিস স্প্রিংস শিরোনামে উঠে আসে বাড়তে থাকা অপরাধের হারের জন্য৷ স্থানীয়দের কেউ কেউ সম্পত্তির ক্ষতি ও নেশাগ্রস্ত হয়ে মারামারির জন্য দোষারোপ করেন আদিবাসী কিশোরদের৷ জবাবে কর্তৃপক্ষ মদ বিক্রিতে কড়াকড়ি আরোপ করে৷ কিন্তু তাতেও বাড়েনি এই অঞ্চলের তরুণদের জন্য কাজের সুযোগ৷
নেই কোনো নির্দিষ্ট নিয়ম
অস্ট্রেলিয়ার জনসংখ্যার প্রায় ৪ শতাংশ ( তিন দশমিক ৮ শতাংশ) আদিবাসী৷ কিন্তু নিউজিল্যান্ড, ক্যানাডা বা অ্যামেরিকার মতো অস্ট্রেলিয়ায় আদিবাসীদের সাথে কর্তৃপক্ষের কোনো রকম বোঝাপড়া এখনও তৈরি হয়নি৷ সরকারি নীতি মেনেই গত শতাব্দীতে আদিবাসীরা তাদের জমি কর্তৃপক্ষের হাতে তুলে দেয়৷ আদিবাসীদের মধ্যে লক্ষণীয়ভাবে বেশি দারিদ্র্য, স্বল্প আয়ু, কারাবাসে থাকা ও প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা না পাওয়ার হার৷
পক্ষ, বিপক্ষ রাজপথে
সরকারের মতে, দ্য ভয়েস-এর মতো পরিকল্পনা আদিবাসীদের মধ্য থেকে সমাধান খুঁজে আনতে সাহায্য করতে পারে৷ ১৭ সেপ্টেম্বর দেশজুড়ে পালিত হয় ‘ইয়েস’ মিছিল, যেখানে অংশগ্রহণ করেন কয়েকশ শ্বেতাঙ্গ সমর্থক৷ বিপরীতে ‘নো’-পক্ষের আয়োজন প্রায় না থাকারই সমান৷
বিভক্ত জনতা
জরিপ বলছে, বেশিরভাগ ভোটই পড়বে ‘নো’-এর ঘরে৷ এই মনোভাব আদিবাসী শিল্পী ক্যাথি কুলথার্ডেরও৷ অ্যালিস স্প্রিংসের বাসিন্দা ক্যাথির মতে, দ্য ভয়েস প্রতিষ্ঠা হলে সেখানে ‘ইউরোপীয়দের সাথে অস্ট্রেলিয়ার আদিবাসীরা শুধু কথা বলার জন্যেই লড়বে’৷