অর্থমন্ত্রীকে বরখাস্ত করলেন শলৎস, ক্ষমতাসীন জোটে ভাঙন
৭ নভেম্বর ২০২৪এফডিপি-র সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করার পর গ্রিন পার্টিকে নিয়ে সংখ্যালঘু সরকার চালাবেন শলৎস। বাজেট পাস করার জন্য তিনি সিডিইউ-র সমর্থন চেয়েছেন। রক্ষণশীল নেতা মেরজ এই বিষয়ে দলের সিদ্ধান্তের কথা জানাবেন।
আগামী ১৫ জানুয়ারি তিনি আস্থাভোট নেবেন। তারপর মার্চে নির্বাচন হতে পারে।
শলৎস যা বলেছেন
সাংবাদিক সম্মেলন করতে আসার সময় শলৎসকে শান্ত দেখাচ্ছিল। শলৎসকে প্রায়ই এই সমালোচনার মুখে পড়তে হয় যে তিনি টেকনোক্র্যাটদের মতো ক্লান্তিকরভাবে কথা বলেন। এদিন তিনি যখন তার অর্থমন্ত্রীকে বরখাস্ত করার কথা ঘোষণা করছেন, তখন তাকে খুবই আত্মবিশ্বাসী ও দৃঢ়প্রতিজ্ঞ লাগছিল।
এই ঘোষণা করতে গিয়ে গলাটা একটু কেঁপে গেছিল। তবে তিনি শান্তভাবেই বোমাটা ফাটান।
তিনি এফডিপি নেতা লিন্ডনারের তীব্র সমালোচনা করে বলেন, তিনি খুবই ক্ষুদ্র রাজনৈতিক নীতি নিয়ে চলছিলেন। এটা একেবারেই মেনে নেয়া যায় না।
শলৎস বলেন, ''অর্থমন্ত্রী আমাদের কোনো প্রস্তাব রূপায়ণ করতে রাজি ছিলেন না। আমি দেশকে ক্ষতির হাত থেকে বাঁচাতে এই পদক্ষেপ নিতে বাধ্য হয়েছি।''
শলৎস জানিয়েছেন, ২০২৫ সালের বাজেটে এক হাজার কোটি ইউরোর ঘাটতির মোকাবিলা করার জন্য একটা পরিকল্পনা অর্থমন্ত্রীকে দিয়েছিলেন। এই পরিকল্পনা নিয়ে মতবিরোধের জেরেই জোটে ভাঙন ধরলো।
গত সপ্তাহে লিন্ডনার একটি নথি প্রকাশ করেন। সেখানে তিনি আর্থিক প্রস্তাবের একটা তালিকা দেন, যা অন্য দলগুলি মানেনি। তার মধ্যে ছিল, জবকল্যাণে খরচ ছাঁটাই করা, পরিবেশ রক্ষার ক্ষেত্রে খরচ ছাঁটাই করা, কোম্পানিগুলির কর কম করার প্রস্তাব কার্যকর করা নিয়ে দলগুলির মধ্যে মতৈক্য হয়নি।
শলৎসের বক্তব্য, এফডিপি নেতা তার নতুন প্রস্তাব কার্যকর করার কোনো ইচ্ছেপ্রকাশ করেননি। অথচ, ওই প্রস্তাবগুলি ছিল দেশের জন্য জরুরি ও ভালো। দেশের ক্ষতি হোক এটা তিনি চাননি।
শলৎস বলেছেন, তিনি প্রস্তাব দিয়েছিলেন, বিদ্যুতের দাম কমাবার জন্য. কোম্পানিগুলিকে সাহায্য করার জন্য, গাড়ি প্রস্তুতকারক কোম্পানিতে কর্মরতদের চাকরি বাঁচাতে বাড়তি ঋণ নেয়া হোক। তিনি বিনিয়োগ করার জন্য কোম্পানিগুলিকে কর ছাড়ের প্রস্তাব দিয়েছিলেন। ইউক্রেনকে বাড়তি সাহায্য করার কথা বলেছিলেন।
শলৎস জানিয়েছেন, তিনি গ্রিন পার্টির সঙ্গে মিলে সংখ্যালঘু সরকার চালাবেন। আস্থাভোট নেবেন ১৫ জানুয়ারি।
তিনি সম্ভবত আস্থাভোটে হারবেন। সেক্ষেত্রে মার্চে নির্বাচন হবে। শলৎস জানিয়েছেন, তিনি সিডিইউ ও সিএসইউ-এর সঙ্গে কথা বলবেন।
২০ মিনিট ধরে নিজের কথা বলার পর শলৎস কোনো প্রশ্নের জবাব না দিয়ে সাংবাদিক সম্মেলন ছেড়ে চলে যান।
অতি-ডানপন্থি এএফডির প্রতিক্রিয়া
বিরোধী অতি-ডানপন্থি এএফডি জানিয়েছে, তারা শলৎসের জোট সরকারে ভাঙনকে স্বাগত জানাচ্ছে। অনেক আগেই এটা হওয়া উচিত ছিল। তাদের হাত থেকে জার্মানির মুক্তি পাওয়া দরকার ছিল।
এএফডি নেতাদের অভিযোগ, এই জোট দেশকে আর্থিক সংকটের দিকে ঠেলে দিয়েছে। বর্তমান সংকট থেকে দেশকে বের করে আনার জন্য নতুন রাজনৈতিক উদ্যোগ দরকার।
এএফডির দাবি, শলৎস অবিলম্বে আস্থাভোট নিন।
বামপন্থি দলগুলির বক্তব্য
জার্মানির সমাজবাদী বামপন্থি দলগুলি তাদের নির্বাচনী প্রচার শুরু করে দিয়েছে। বামপন্থি দলগুলি একযোগে ঘোষণা করেছে, তাদের অনুকূলে হাওয়া আছে। শলৎসের জোট দেশের অর্থনীতিকে ধ্বংস করেছে এবং অস্থিরতা তৈরি করেছে। তারা তিন বছর ধরে ক্ষমতায় থেকেও দেশ ও মানুষকে নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ।
প্রথম থেকেই সমস্যা
শলৎসের নেতৃত্বাধীন জোটে প্রথম থেকেই সমস্যা ছিল। এসপিডি ও গ্রিন হলো মূলত বাম-ঘেঁষা দল, যারা বিশ্বাস করে রাষ্ট্রকে শক্তিশালী হতে হবে এবং জনকল্যাণ ও পরিবেশ বাঁচাতে প্রচুর অর্থ খরচ করতে হবে।
আর এফডিপি-র অবস্থান ছিল উল্টো মেরুতে। তারা মনে করে, রাষ্ট্র খুব কম বিষয়ে হস্তক্ষেপ করবে। আর্থিক ক্ষেত্রে সংযম দেখাবে। জার্মানিতে ঋণ নেয়ার ক্ষেত্রে যে কড়াকড়ি আছে তা মেনে চলবে।
তাই জোটের শরিকদের মধ্যে অনেক বিষয় নিয়েই মতবিরোধ হয়েছে।
জিএইচ/এসজি(ডিডাব্লিউ, ডিপিএ, এপি, রয়টার্স)