‘অভিবাসীদের কারণে অপরাধ বাড়ছে-' ট্রাম্পের বক্তব্য কতটা সঠিক?
১২ এপ্রিল ২০২৪চলতি বছর অনুষ্ঠেয় প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে রিপাবলিকান দলের প্রার্থী ডনাল্ড ট্রাম্প নির্বাচনি প্রচারণায় অভিবাসীদের নিয়ে নানান মন্তব্য করছেন৷ যেমন, সম্প্রতি তিনি অভিবাসীরা যুক্তরাষ্ট্রে সহিংস অপরাধকে উস্কে দিচ্ছে বলে মন্তব্য করেন৷ প্রশ্ন হলো, অভিবাসীদের বিরুদ্ধে আনা ডনাল্ড ট্রাম্পের এমন অভিযোগ কতটা সঠিক?
অভিবাসী এবং অপরাধ নিয়ে যা বললেন ট্রাম্প
নির্বাচনকে সামনে রেখে সীমান্তে কড়া নিরাপত্তার বিষয়টি নিয়ে বার বার মন্তব্য করেছেন সাবেক মার্কিন প্রেসেডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প৷ সীমান্তে নজরদারি বাড়ানোর পক্ষে যুক্তি হিসেবে তিনি অনিয়মিত পথে আসা অভিবাসীদের কারণে দেশে অপরাধমূলক কাজ বাড়ার কথা বলেন৷
শুধু তাই নয়, যুক্তরাষ্ট্রের বর্তমান প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনকেও দোষারোপ করেন তিনি৷ বলেন, ‘‘বাইডেনের নীতি সবকিছুকেই দ্রুত অনুমোদন দেয়৷'' একথা বলেই থেমে না থেকে অভিবাসীরা কোনো অপরাধের সাথে যুক্ত থাকলে ওই কাজকে ‘বাইডেনের অভিবাসী অপরাধ' হিসেবেও অভিহিত করেছেন ট্রাম্প৷
সাম্প্রতিক সময়ে অভিবাসীদের নিয়ে নানা অবমাননাকর মন্তব্য করেছেন ট্রাম্প৷ অনিয়মিত পথে যুক্তরাষ্ট্রে পাড়ি জমানো অভিবাসীদেরকে ‘পশু' বলেও অভিহিত করেন তিনি৷ তাছাড়া অভিবাসীরা ‘‘আমাদের দেশের রক্তকে দূষিত করছে'' এমন কথাও বলেছেন তিনি৷
অবশ্য ট্রাম্পের এমন মন্তব্য তীব্র সমালোচনার মুখে পড়ে৷ তার এমন মন্তব্যকে ‘জেনোফোবিক এবং নাৎসি বয়ানের প্রতিধ্বনি' বলে সমালোচনা করেন৷
ডনাল্ড ট্রাম্প এবং তার রিপাবলিকান দলের রাজনীতিবিদদের অনেকেই দেশটিতে নিহত জর্জিয়ার ২২ বছরের নার্সিংয়ের ছাত্রী লাকেন রিলের বিষয়টি আলোচনায় আনেন৷ ভেনেজুয়েলার এক অনিয়মিত অভিবাসীর হাতে সম্প্রতি খুন হন মেডিক্যাল শিক্ষার্থী রিলে৷
গত মার্চ মাসে স্টেট অব ইউনিয়নের ব্কতৃতায় বাইডেনকে রিলের খুনের ঘটনা স্বীকার করে নিতে বলেন রিপাবলিকান দলের মারজোরি টেইলর গ্রিনি৷ জবাবে বাইডেন বলেন ‘‘রিলে ছিলেন একজন নিষ্পাপ তরুণী, যিনি একজন অবৈধ অভিবাসীর হাতে নিহত হয়েছেন৷'' সেসময় বাইডেন প্রশ্ন করেন, যুক্তরাষ্ট্রে বৈধভাবে থাকা নাগরিকদের হাতে কতজন নিহত হয়েছেন?
বাইডেন অবশ্য পরবর্তীতে ‘অবৈধ' শব্দটি ব্যবহার করার জন্য দুঃখ প্রকাশ করে বলেন শব্দটি ‘অনথিভুক্ত' হওয়া উচিত৷
অভিবাসীরা কি সত্যিই অপরাধে বেশি যুক্ত?
বিভিন্ন সংস্থার গবেষণায় দেখা গেছে, যুক্তরাষ্ট্রের অভিবাসীরা দেশটিতে জন্ম নেওয়াদের তুলনায় বেশি মাত্রায় অপরাধের সাথে যুক্ত- বিষয়টি এমন নয়৷
উদাহরণ হিসেবে ‘ইমিগ্রেশন অ্যান্ড ক্রাইম: অ্যাসেসিং কন্টেনশাস ইস্যু' নামে ২০১৮ সালে প্রকাশিত গবেষণার কথা উল্লেখ করা যেতে পারে৷ ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্রিমিনোলোজির অধ্যাপক ক্রিস কুব্রিন এবং জর্জিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজতত্ত্বের অধ্যাপক গ্রাহাম ওস-এর এই গবেষণাটিতে ১৯৪৪ সাল থেকে ২০১৪ সালের মধ্যে ৫০টির বেশি অপরাধ বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, অভিবাসী এবং অপরাধ এই দুয়ের মাঝে কোনো উল্লেখযোগ্য সম্পর্ক নেই৷
এদিকে স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক রান আব্রামিটজকি ও তার সহকর্মীরা ‘ল অ্যাবাইডিং ইমিগ্র্যান্টস: দ্য ইনকারসারেশন গ্যাপ বিটুইন ইমিগ্রেন্টস অ্যান্ড দ্য ইউএস বোর্ন' নামে একটি গবেষণা পরিচালনা করেন৷ তাদের এই গবেষণায় যুক্তরাষ্ট্রের ১৮৭০ সালে থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত সময়ের তথ্য পর্যালোচনা করে দেখা যায়, যুক্তরাষ্ট্রে জন্ম নেওয়াদের তুলনায় অভিবাসীদের জেলে যাওয়ার ঘটনা কম৷
আরআর/এসিবি (রয়টার্স)