গৃহকর্মীদের জন্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান
২৭ অক্টোবর ২০১৩বাবার মৃত্যুর সময় লিসা পাদুয়া ছিলেন আট বছরের কিশোরী৷ সেই বয়সেই সংসারের হাল ধরার কথা ভাবতে হয় তাঁকে৷ তারপর থেকে ২১ বছর ধরে চলছে অন্যের বাড়িতে কাজ করা৷ বেশি টাকা আয় করতে দেশ ছেড়েছিলেন৷ প্রথমে কাতার, তারপর থেকে লিসা কাজ করছেন সিঙ্গাপুরে৷
এমন কাজ করে পরিবারের সবার মুখে অন্ন তুলে দেয়ার দৃষ্টান্ত আছে লক্ষ লক্ষ৷ লিসা শুধু নিজের পরিবারের দুর্দিন দূর করেননি, তাঁর বুদ্ধি, শিক্ষা আর কর্মদক্ষতায় ফিলিপিন্সের একটি গ্রামের চেহারাও পাল্টে গেছে৷ সেই গ্রামেই লিসার জন্ম৷ এক সময় হাতে টাকা নেই বলে অনেক চাষযোগ্য জমির মালিক জমিতে চাষ করতে পারতেন না৷ লিসা সেই সিঙ্গাপুর থেকে টাকা পাঠান৷ ফলে গ্রামে এখন বিরান ভূমি খুঁজে পাওয়া দুষ্কর৷ ভাগ্যদোষে নিজে লেখাপড়া করতে পারেননি৷ বড় সাধ ছিল পরিবারের পরবর্তী প্রজন্মকে লেখাপড়া করাবেন৷ লিসা সেই সাধও অপূর্ণ রাখেননি৷ তাঁর খরচেই পড়ালেখা করছে নিজের ভাইদের ছয় ছেলে-মেয়ে৷ এখানেই শেষ নয়৷ এক সময় পরিবারের একমাত্র উপার্জনকারীর মৃত্যুতে যে পরিবারটি প্রায় পথে বসেছিল, লিসার কারণে সেই পরিবারই এখন গ্রামের সবার অহংকার৷ তিনটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের মালিক লিসাকে নিয়েও গর্বের শেষ নেই৷
‘নুন আনতে পানতা ফুরায়' অবস্থা থেকে লিসার এমন ক্ষুদে ‘শিল্প উদ্যোক্তা' হয়ে ওঠার মূল কৃতিত্ব সঠিক সময়ে তাঁর সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে পারার ক্ষমতা৷ লিসা নিজে অবশ্য সব কৃতিত্ব দেন ‘আইধা'-কে৷ আইধা সিঙ্গাপুরের এমন এক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান যেখানে শুধু গৃহকর্মীদেরই কম্পিউটার, যোগাযোগ এবং আর্থিক লেনদেনের খুটিনাটি দিকগুলো শেখানো হয়৷ শেখানোর উদ্দেশ্য, কষ্টার্জিত টাকাগুলো যথাযথভাবে খাটিয়ে গৃহকর্মীদের ভাগ্য পরিবর্তনে সহায়তা করা৷ মাসে মাত্র ৩০০ থেকে ৬০০ ডলার রোজগার করেন এমন গৃহকর্মীদের ভাগ্য যে সত্যি সত্যিই ফিরছেন তারই উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত এখন লিসা পাদুয়া৷ পরের বাড়িতে খেটে খেটে নিজের পরিবার এবং গ্রামের চেহারা বদলে দিতে পেরে লিসা বেশ খুশি৷ অতীতের দিকে ফিরে তাকিয়ে এক ধরণের তৃপ্তিবোধ নিয়েই বলেছেন, ‘‘আমি কৃষকের সন্তান৷ একটা সময় নিজের একটা ঘর, একটা খামার, নিজের মহিষ থাকা খুব দরকার মনে হয়েছিল৷ নিজের স্বপ্ন ভাতিজা-ভাতিজীদের মাধ্যমে পূরণ করার জন্য চেয়েছিলাম ওরা লেখাপড়া করুক৷ আমি এখন অনেকটাই সফল৷''
সিঙ্গাপুরে এখন বিশ্বের নানা দেশের অন্তত ২ লক্ষ ১১ হাজার মানুষ গৃহকর্মীর কাজ করছেন৷ বিশ্ব ব্যাংকের সাম্প্রতিক প্রতিবেদন অনুযায়ী, ফিলিপিন্সের গৃহকর্মীরা বিদেশে কাজ করে চলতি বছরে এ পর্যন্ত ২৬ বিলিয়ন ডলার উপার্জন করেছেন৷ দেশের উন্নয়নে বড় ভূমিকা রাখছে এই অর্থ৷ ফিলিপিন্স ছাড়াও ইন্দোনেশিয়া, মিয়ানমার, হংকং এবং তাইওয়ানের অনেক গৃহকর্মীও সিঙ্গাপুর থেকে টাকা পাঠিয়ে দেশ গড়ায় অবদান রাখছেন৷ তাঁদের পাশে দাঁড়িয়েছে আইধা৷ বিশেষায়িত এ স্কুলের নির্বাহী পরিচালক ভেরোনিকা গামেজ জানিয়েছেন যে, গৃহকর্মীদের কোর্সটি নয় মাসের৷ প্রতি মাসের দুটি রবিবারে সাড়ে তিন ঘণ্টার ক্লাস৷ কোর্স ফি সাড়ে ৩০০ সিঙ্গাপুরি ডলার৷ লিসা পাদুয়ার মতো হতে টাকাটা কিন্তু খুব বেশি নয়, কী বলেন!
এসিবি/ডিজি (রয়টার্স, এপি)