অন্তর্বর্তী সরকার কি সেনাবাহিনীর প্রভাবমুক্ত থাকতে পারবে?
৮ আগস্ট ২০২৪বিশ্লেষকেরা মনে করছেন, এই সরকারের মেয়াদ তিন মাসের অনেক বেশি হবে, কারণ অনেক সংস্কার কাজ করতে হবে৷
শেখ হাসিনার পদত্যাগের পর সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান জাতির উদ্দেশ্যে দেয়া ভাষণে ‘দায়িত্ব নেয়ার' কথা বলেছেন৷ তারপর থেকে রাষ্ট্রপতির নেতৃত্বে সেনাবাহিনীর সহায়তা দেশ, সরকার চলছে৷
এরইমধ্যে পুলিশ প্রধানসহ প্রশাসন ও বিচারবিভাগের গুরুত্বপূর্ণ কিছু পদে পরিবর্তন আনা হয়েছে, ভেঙে দেয়া হয়েছে জাতীয় সংসদ৷
পুলিশ সদস্যরা কর্মবিরতি পালন করায় সেনাসদস্য এবং শিক্ষার্থীরা দৃশ্যমান কিছু দায়িত্ব পালন করছেন৷
অন্তর্বর্তীকালীন সরকার যতদিন থাকবে তাদের সেনা সমর্থনেই কাজ করতে হবে বলে মনে করেন সাবেক সেনা কর্মকর্তা ও বিশ্লেষকেরা৷ নিরাপত্তা বিশ্লেষক মেজর (অব.) এমদাদুল ইসলাম বলেন, ‘‘এই সরকারের মূল ভিত্তি কী তা আমাদের বুঝতে হবে৷ বিএনপিতো দ্রুত নির্বাচন চায়৷ এখন এই সরকার ছয়মাস বা এক বছরের বেশি যদি থাকে তাহলে কি রাজনৈতিক দলগুলো তা মেনে নেবে? তারা তো দ্রুত নির্বাচন চায়৷ আর এই শিক্ষার্থীরা কত দিন মাঠে থাকবে? তারা কি পড়াশুনা বাদ দিয়ে এই কাজই করবে? তাহলে এটা পরিষ্কার যে সেনাবাহিনীর সমর্থনেই নতুন সরকারকে এগিয়ে যেতে হবে৷ আর সেনাপ্রধান যেহেতু দায়িত্ব নিয়েছেন বলেছেন, তাই তাদের সমর্থন অব্যাহত রাখতে হবে৷''
‘‘এটাকে প্রভাব বলেন আর যাই বলেন এটা থাকবে৷ তবে কতটা প্রভাব থাকবে তা নির্ভর করবে সরকারের কাঠামো ও সক্ষমতার ওপর৷ এই সরকার যত বেশি সময় নেবে তত বেশি সেনাবাহিনীর সঙ্গে কম্প্রোমাইজ করতে হবে৷''
সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার ওমর ফারুক বলেন, ‘‘এই সরকার তো তিন মাসের জন্য না৷ এই সরকারের অনেক কাজ আছে৷ নানা জায়গায় দলীয়করণ হয়েছে, তা দূর করতে হবে৷ বিচার বিভাগ সংস্কার করতে হবে৷ দুর্নীতির বিচার করতে হবে৷ অনেক ছাত্র-সাধারণ মানুষকে হত্যা করা হয়েছে৷ তার বিচার করতে হবে৷ এটা তো এখন আর কোটা সংস্কারে সীমাবদ্ধ নাই৷ এখন তো এই সরকারকে ছাত্র-জনতার দাবি অনুযায়ী রাষ্ট্র সংস্কার করতে হবে৷ ফলে এটা কোনোভাবেই তিন মাসের সরকার নয়৷''
তার কথা, ‘‘এটা কোনো সেনা শাসন নয়, এটা কোনো জরুরি অবস্থা নয়৷ তবে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে সেনাবাহিনীর সহায়তা করতে হবে৷ পুলিশের সহায়তা লাগবে৷ তাদের ইমেজ পুনরুদ্ধারের জন্যই তারা সহায়তা করবে৷''
‘‘এখানে সংবিধান কোনো বিষয় নয়৷ দেশের মানুষের চাওয়াই বড় কথা৷ আমরা ৯০-এর গণঅভ্যুত্থানের পর দেখেছি৷ আবার ওয়ান ইলেভেনের সময় দেখেছি৷ মানুষের চাওয়াই বড় কথা,'' বলেন ব্যারিস্টার ওমর ফারুক৷
‘‘এটা ক্যু নয়, এটা মার্শাল ল নয়, এটা জরুরি অবস্থা নয়৷ সেনবাহিনী এখানে সহায়তা করছে৷ এটা একটা ট্রানজিশন৷ তাই সবখানে সেনাবাহিনী থাকলে আস্থা বাড়ে৷ এখন দেশের যে আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি তাতে সেনাবাহিনীর আরো বড় ভূমিকা নিতে হবে,'' মনে করেন সাবেক রাষ্ট্রদূত মেজর জেনারেল (অব.) মো. শহীদুল হক৷
তার কথা, ‘‘এই সরকারকে অনেক সংস্কার করতে হবে৷ অনেক জঞ্জাল সরাতে হবে৷ সেটা সাংবধানিকসহ নানা সংস্কার৷ নয়তো নতুন বোতলে পুরনো মদই থেকে যাবে৷ এই কাজ করতে গেলে তিন মাস বা ১২০ দিনে হবে না৷ সংসদ না থাকলেও সেটা রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করে করা যাবে৷''
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. এ এস এম আমানুল্লাহ বলেন, ‘‘আমরা যতই গণঅভ্যুত্থান, গণআন্দোলন বলি না কেন এই সরকারের পিছনে সেনাবাহিনী প্রচ্ছন্নভাবে আছে৷ শুরুতেই সেনাবাহিনী এখানে হস্তক্ষেপ করেছে৷ তারা যদি আওয়ামী লীগ সরকারের উপর থেকে সমর্থন প্রত্যাহার না করত তাহলে আওয়ামী লীগ সরকার এখনো থাকতো৷ যেহেতু সেনাবাহিনী এই কাজটি করেছে তাই তারা মনে করে তাদের একটা লেজিটেমিসি এবং অথরিটি ডেভেলপ করেছে৷ তাই তারা মনে করে নতুন সরকারের ওপর তাদের কথা থাকবে৷ হয়তা মঈনুদ্দিন-ফখরুদ্দিনের মতো হবে না৷ তবে তাদের একটি প্রচ্ছন্ন ছায়া এই সরকারের ওপর থাকবে৷''
‘‘সরকারের কম্পোজিশন কেমন হবে তার ওপর নির্ভর করছে সেনাবাহিনীর প্রভাব কতটা থাকবে৷ যদি এই সরকারে সামরিক বাহিনীর সাবেক কর্মকর্তারা বেশি থাকেন তাহলে তার একটা প্রভাব পড়বে৷ আবার এই সরকারকে অনেক সংস্কারের কাজ করতে হবে৷ ফলে সময় লাগবে৷ সরকার যত বেশি সময় নেবে তাদের ওপর সামরিক বাহিনীর প্রভাব তত বাড়বে,'' বলেন এই অধ্যাপক৷