1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

ভাবনায় দ্রব্যমূল্য, আইন-শৃঙ্খলা, নির্বাচন ও আওয়ামী লীগ

হারুন উর রশীদ স্বপন ঢাকা
৮ অক্টোবর ২০২৪

আজ (৮ অক্টোবর) অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকারের দুই মাস পূর্ণ হয়েছে। এই সময়ে বড় কোন কোন কাজে সফল হয়েছে সরকার, কোন কোন ক্ষেত্রে প্রত্যাশা এবং প্রাপ্তির ব্যবধান অনেক?

https://p.dw.com/p/4lXul
প্রধান উপদেষ্টার দায়িত্ব গ্রহণ করছেন ড. মুহাম্মদ ইউনূস
দুই মাস আগে ৮ আগস্ট শপথ নেয় ড. মুহাম্মদ ইউনূসে নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারছবি: Mohammad Ponir Hossain/REUTERS

৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার আন্দোলনে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর অনেকেরই আশা ছিল এবার ‘নতুন' এক বাংলাদেশকে দেখা যাবে। সাধারণ মানুষের সবচেয়ে বড় চাওয়া ছিল নিত্যপণ্যের উচ্চমূল্যে লাগাম।আরেকটি প্রত্যাশা ছিল আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতি।কিন্তু দুটি ক্ষেত্রেই অন্তর্বর্তী সরকার প্রত্যাশা অনুযায়ী কাজ করতে পারছে না বলে মনে করেন অনেকেই৷ ঢাকার স্কুল শিক্ষিকা পিংকি অধিকারী বললেন, " নিত্যপণ্যের দাম কমেনি, উল্টো বেড়েছে। এমন আমরা আশা করিনি। আর দাম নিয়ন্ত্রণে রাখার কোনো উদ্যোগও তো দেখছি না।”

পিংকি আরো বলেন, "আমি ঢাকায় থাকি৷ আমার আশপাশে আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি তেমন দেখিনি। তবে নানা ক্ষেত্রে পুলিশের যেখানে ভূমিকা রাখা দরকার, সেখানে, বিশেষ করে ট্রাফিক ব্যবস্থাপনায় এখনো তাদের নিস্ক্রিয় দেখছি। আর সংখ্যালঘু হওয়ার কারণে ৫ আগস্টের পর কিছু ঘটনা আমাকে বিব্রত করেছে। আমাকে কষ্ট দিয়েছে। এর বেশি কিছু আমি বলতে চাই না।”

নিত্যপণ্যের দাম নিয়ে জনমনে ক্ষোভ বাড়ছেই। কলাবাগানের আমিনুল ইসলাম বলেন, "ডিমের হালি ৬০ টাকা তো আগে কখনো দেখিনি। আরো যেসব পণ্য আছে তার দামও বাড়ছে। মনে হচ্ছে বাজার সিন্ডিকেট আরো শক্তিশালী হয়েছে। আইন-শৃঙ্খলারও উন্নতি হচ্ছে না।”

তার মতে," মানুষের মধ্যে আস্থা ও নিরাপত্তার পরিবেশ এখনো তৈরি হয়নি।”

সংস্কার ধারাবাহিক প্রক্রিয়া: কামাল

বিশ্লেষক ও রাজনৈতিক দলের নেতারা অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের জন্য দুটি কমন চ্যালেঞ্জের কথা বলেছেন- দ্রব্যমূল্য এবং সাধারণ মানুষের নিরাপত্তা। এর বাইরে সংস্কার, নির্বাচন ও রাজনৈতিক চ্যালেঞ্জের কথাও বলেছেন তারা।

নির্বাচন ও সংস্কার নিয়ে টানাপোড়েন এরইমধ্য শুরু হয়ে গেছে। প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে সর্বশেষ সংলাপে নির্বাচনই প্রাধান্য পেয়েছে। তারা সংস্কারের কথাও বলেছেন। কিন্তু সেই সংস্কারকে একটি ধারাবাহিক প্রক্রিয়া হিসাবে উল্লেখ করে নির্বাচনকেই প্রাধান্য দিয়েছেন তারা। সব মিলিয়ে এই সরকারের কাছে তারা নির্বাচন ও সংস্কারের একটি রোডম্যাপ চেয়েছেন। কিন্তু অন্তর্বর্তী সরকার এখনো কোনো রোডম্যাপ দেয়নি।

বিএনপির আইন বিষয়ক সম্পাদক ব্যারিস্টার কায়সার কামাল মনে করেন," অন্তর্বর্তী সরকারের সব কাজ ও প্রস্তুতির মূল টার্গেট হবে জনগণের নির্বাচিত সরকারের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করা। জনগণই রাষ্ট্রের মালিক। আর নির্বাচিত সরকারই জনগণের প্রতিনিধি৷ এর সঙ্গে সংস্কারও একটা জরুরি বিষয়। তবে এটা ধারাবাহিক প্রক্রিয়া। আমরা যৌক্তিক সময় দিতে চাই। তবে এই যৌক্তিক সময় কতটা, তা আসলে সাধারণ মানুষই বলে দেবে।”

তার কথা, "এই সরকারের প্রথম দুই মাসের চ্যালেঞ্জ ছিল পতিত স্বৈরাচারের ফ্যাসিজমের হাত থেকে দেশকে মুক্ত করা। তারা আমাদের প্রতিষ্ঠানগুলোকে ধ্বংস করে দিয়েছে। প্রশাসন, বিচার বিভাগ এগুলোকে সংস্কার করতে হবে। অর্থনীতি ধ্বংস হয়ে গেছে, সেটা ঠিক করতে হবে। প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রতি মানুষের যে আস্থাহীনতা তৈরি হয়েছে, সেই আস্থা ফিরিয়ে আনাই প্রধান চ্যালেঞ্জ।”

এই অরাজনৈতিক সরকারের সামনে রাজনৈতি চ্যালেঞ্জও ধীরে ধীরে বড় হয়ে উঠছে। কারণ, শেষ পর্যন্ত নির্বাচিত রাজনৈতিক দলই সরকার পরিচালনা করবে। ফলে তারাই এখন সবচেয়ে বড় ‘স্টেক হোল্ডার'।

সংস্কার প্রশ্নে বড় ধরনের দ্বিমত দেখা দিয়েছে: জাহেদ

অধ্যাপক ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক ড. জাহেদ উর রহমান মনে করেন, " অন্তর্বর্তী সরকারের সঙ্গে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সর্বশেষ যে সংলাপ হয়েছে, তাতে সংস্কার প্রশ্নে বড় ধরনের দ্বিমত দেখা দিয়েছে। বিএনপি প্রধান উপদেষ্টাকে স্পষ্ট করেই বলেছে যে, তারা নির্বাচন সংশ্লিষ্ট প্রয়োজনীয় সংস্কার চান। অন্য সংস্কার তারা তেমন প্রাধান্য দিচ্ছেন না। জামায়াতসহ কয়েকটি রাজনৈতিক দল অবশ্য সংস্কারকে প্রাধান্য দিচ্ছে। তারপরও বিএনপি অনেক বড় দল। ফলে সরকারের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ হবে সংস্কার ও নির্বাচন নিয়ে একটা ঐক্যমত তৈরি করা।”

বাংলাদেশে ইসলামী জঙ্গি সংগঠনের পতাকা নিয়ে মিছিল, সংখ্যালঘু নির্যাতন, নিপীড়ন ইত্যাদি প্রসঙ্গে কিছু মহলের ষড়যন্ত্রের গন্ধ পাচ্ছেন তিনি৷ তার মতে,"বাংলাদেশের জন্য এখন পরিকল্পিতভাবে একটা ঝুঁকি তৈরি করা হচ্ছে। যাদের পতন হয়েছে, তাদের পরিকল্পনা ছিল, তারা যদি ক্ষমতায় না থাকতে পারে, তাহলে অন্য কোনো পক্ষ যেন দেশ চালাতে না পারে। এরই মধ্যে বাংলাদেশ সম্পর্কে একটি নেতিবাচক ধারণা তৈরি হচ্ছে। এখানে কালো পতাকা, আইএস-এর পতাকা নিয়ে মিছিল হয়েছে। পূজা আছে। সংখ্যালঘু প্রসঙ্গ আছে। মব জাস্টিস আছে। এতে দেশে অস্থিতিশীলতা তৈরি হতে পারে। এটা মোকাবেলা সরকারের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ।''

তবে দ্রব্যমূল্য নিয়ে তার বক্তব্য পিংকি অধিকারীর মতোই৷ " দ্রব্যমূল্য তো মানুষকে অসহনীয় অবস্থায় নিয়ে যাচ্ছে।''

আইন-শৃঙ্খলার বিষয়ে তার বক্তব্য, ‘‘আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হলেও এখনো সন্তোষজনক নয়।”

আওয়ামী লীগের অন্তর্ভুক্তি বড় চ্যালেঞ্জ: শামীম

ড. জাহেদ উর রহমান মনে করেন বাক স্বাধীনতা এবং সংবাদ মাধ্যমের স্বাধীনতার পরিস্থিতি এখনো প্রশ্নাতীতভাবে ভালো নয়, তবে এক্ষেত্রে সরকারকে দায়ী মনে করেন না তিনি৷ এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘‘এখন সরকারের দিক থেকে কোনো চাপ নাই। তবে মানুষের মধ্যে, সংবাদ মাধ্যমে আগের ভয় এখনো কাজ করছে। তারা ভয় থেকে এখনো ততটা বেরিয়ে আসতে পারেনি।”

জাতীয় পার্টির অতিরিক্ত মহাসচিব ব্যারিস্টার শামীম হায়দার পাটোয়ারি অন্তর্বর্তী সরকারের স্থায়ীত্ব সম্পর্কে বলেন,"সংবিধানে তো ছয় মাসের মধ্যে নির্বাচনের কথা আছে। সেক্ষেত্রে সব দল একমত হলে সময়সীমা বাড়তে পারে। কিন্তু যখন নির্বাচন হবে, তখন যে চ্যালেঞ্জটি এই সরকারের সামনে আসবে তা হলো, আওয়ামী লীগ নির্বাচন করবে কিনা, আওয়ামী লীগকে নির্বাচন করতে দেয়া হবে কিনা, আওয়ামী লীগের প্রার্থীরা নির্বাচনের যোগ্য হবেন কিনা। এইরjম একটা চ্যালেঞ্জের মুখে পড়বে সরকার। নির্বাচনটি অন্তর্ভুক্তিমূলক হবে কিনা সেটাও হবে একটা বড় চ্যালেঞ্জ।”

তার কথা, "সংস্কার করার জন্য এই অনির্বাচিত সরকারের সাংবিধানিক ম্যান্ডেট নাই। ফলে এই সরকার যেটা সংস্কার করতে চাইবে, রাজনৈতিক দলগুলোকে সে ব্যাপারে একমত হতে হবে। তাই সরকারকে কিন্তু রাজনৈতিক দলগুলোর সদিচ্ছার ওপরই নির্ভর করতে হচ্ছে।”

তবে তিনি মনে করেন," এখন নাগরিকদের নিরাপত্তার উন্নতি হচ্ছে। আর অর্থনৈতিক পরিস্থিতিও সুচিন্তিতভাবে হ্যান্ডেল করা হচ্ছে। অর্থনৈতিক অপরাধ বলতে গেলে বন্ধ হয়েছে। আর সরকার প্রায় সব রাজনৈতিক দলকে একটি প্ল্যাটমর্মে আনতে পেরেছে। এই চ্যালেঞ্জগুলো তারা কাটিয়ে উঠছেন।”

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য

আরো সংবাদ দেখান