1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

মানুষের অনেক কিছু শেখার আছে

আশীষ চক্রবর্ত্তী৩ এপ্রিল ২০১৫

মহানবীর (সা.) পথে কাঁটা ছড়াতেন এক বুড়ি৷ বুড়িকে কীভাবে ‘শিক্ষা' দেয়া হয়েছিল? গালমন্দ করে?নাকি মেরে? সিঙ্গাপুরে ধর্ম এবং দেশের বর্তমান ও সাবেক প্রধানমন্ত্রীর অবমাননার দায়ে একজনকে গ্রেপ্তার করা হয়৷ এখন তিনি জামিনে মুক্ত৷

https://p.dw.com/p/1F2K9
Bildergalerie Begräbnis Lee Kuan Yew
লি কুয়ানের মৃত্যুর কারণে সিঙ্গাপুরের অর্ধনমিত জাতীয় পতাকাছবি: picture-alliance/dpa

পরমতসহিষ্ণুতার অনেক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত ধর্মের কাহিনিতেই আছে৷ ইসলাম ধর্মের সর্বশ্রেষ্ঠ নবী হযরত মুহাম্মদ (সা.) সম্পর্কে একটা কাহিনি তো ছোটবেলায় পাঠ্য পুস্তকেই পড়েছি৷ এক বিধর্মী বুড়ি হযরত মুহাম্মদ (সা.) এবং ইসলাম ধর্মকে খুব অপছন্দ করতেন৷ তাই হযরত মুহাম্মদ (সা.) যে পথ দিয়ে যেতেন সেই পথে সব সময় কাঁটা ছড়িয়ে দিতেন৷ হযরত মুহাম্মদ (সা.) সেটা বুঝতে পেরেছিলেন৷ সে কারণে যখনই ওই পথ দিয়ে যেতেন, সাবধানে তো হাঁটতেনই, নিজ হাতে একটা একটা করে কাঁটা তুলে রাস্তাটা অন্য পথচারীদের জন্য সুগমও করে দিতেন৷ এক সকালে সেই রাস্তা দিয়ে যাচ্ছেন৷ সন্তর্পণে পা ফেলছেন৷ কাঁটা খুঁজছেন৷ কিন্তু একি পথে তো কোনো কাঁটা নেই!

হযরত মুহাম্মদ (সা.) ভীষণ চিন্তিত হয়ে পড়লেন৷ এমন তো হয়না কখনো! বুড়ি প্রতিদিন কাঁটা ছড়িয়ে রাখেন, আজ ছড়াননি কেন? বুড়ি কি তাহলে অসুস্থ? দেরি না করে নবীজী (সা.) গেলেন বুড়ির বাড়িতে৷ গিয়ে দেখেন, যা ভেবেছিলেন তা-ই, বুড়ি সত্যিই অসুস্থ৷ যেই বুড়ি তাঁকে কষ্ট দিতে পথে কাঁটা বিছিয়ে রাখতেন, তার রোগযন্ত্রনা দেখে নবীজী (সা.) কিন্তু খুশি হননি৷ বরং মায়ের বয়সি এক নারীর কষ্টে তাঁর মনও কেঁদেছে৷ নবীজী (সা.) নিজে সেবা-সুশ্রুষা করে সারিয়ে তুলেছেন সেই বুড়িকে৷ এভাবে শুধু বুড়ির অসুস্থতাই দূর করেননি, বুড়ির মনে ইসলাম সম্পর্কে যে ভ্রান্তি বা বিদ্বেষ ছিল, তা-ও দূর করেছেন৷ নবীজীর (সা.) মহত্বে, উদারতায় মুগ্ধ হয়ে বিধর্মী বুড়িও তখন ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেছিলেন৷

Symbolbild Kinder Frieden
শান্তি (প্রতীকী ছবি)ছবি: Wojtek radwanski/AFP/Getty Images

সিঙ্গাপুরে আমোস ই প্যাং স্যাং ইসলাম ধর্মের জন্য অবমাননাকর কিছু করেননি৷ ৮ মিনিটের এক ভিডিও তৈরি করে ইউটিউবে দিয়েছিলেন ১৬ বছর বয়সি এই ছাত্র৷ ভিডিওচিত্রটির নাম দিয়েছিলেন, ‘অবশেষে মারা গেলেন লি কুয়ান ইউ'৷

লি কুয়ান ইউ আধুনিক সিঙ্গাপুরের রূপকার৷ টানা ৩১ বছর স্বৈরশাসকের মতো শাসন করেছেন দেশটাকে৷ তবে সিঙ্গাপুর ‘স্বপ্নের দেশ'ও হয়েছে তাঁর সময়েই৷ লি কুয়ান ইউ গত ২৩ মার্চ মারা যান৷ অন্ত্যেষ্টি ক্রিয়ার ঠিক আগের দিনই ভিডিওচিত্রটি প্রচার করে বিতর্কের ঝড় তোলেন আমোস ই প্যাং স্যাং৷ লি কুয়ানকে যীশু খ্রিস্টের সঙ্গে তুলনা করে যীশু এবং তাঁকে ক্ষমতালিপ্সুও বলা হয় ভিডিওতে৷ এ ছাড়া এক কার্টুনে খুব আপত্তিকরভাবে তুলে ধরা হয় লি কুয়ান এবং ব্রিটেনের সাবেক প্রধানমন্ত্রী মার্গারেট থ্যাচারকে৷

Deutsche Welle DW Arun Chowdhury
আশীষ চক্রবর্ত্তী, ডয়চে ভেলেছবি: DW/P. Henriksen

এভাবে সিঙ্গাপুরের সদ্য প্রয়াত জাতীয় নেতা এবং খ্রিষ্টান ধর্মে সবচেয়ে শ্রদ্ধার পাত্র যীশু খ্রিষ্টকে অশ্রদ্ধা করেও থামেননি আমোস৷ লি কুয়ানের ছেলে, সিঙ্গাপুরের বর্তমান প্রধানমন্ত্রী লি লুং-এর উদ্দেশ্যে বলেছেন, ‘‘চাইলে আমার বিরুদ্ধে আপনি মামলা করতে পারেন৷''

প্রত্যাশিতভাবেই সাধারণ মানুষের ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত দেয়া, আধুনিক সিঙ্গাপুরের প্রতিষ্ঠাতা লি কুয়ান ইউ-এর অবমাননা এবং অশ্লীলতার অভিযোগে আমোস ই প্যাং স্যাং-এর বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে৷ লি কুয়ান ইউ-এর কোনো রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ বা কট্টর সমালোচকও বলেননি আমোস যা করেছেন ঠিক করেছেন৷ সিঙ্গাপুরে লি কুয়ানের অনুসারী বা অনুরাগীরও অভাব নেই৷ তাঁরাও প্রতিবাদের নামে অস্থিরতা বা বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করেননি৷ যীশু সম্পর্কে বিরূপ মন্তব্য করায় কেউ আমোসের ওপর চড়াও হননি৷ সবাই আস্থা রেখেছেন আইনের প্রতি৷ জামিন নিয়ে আমোসও হাসিমুখেই বেরিয়েছেন আদালত থেকে৷ আদালতের রায়ের পর দেখা যাবে এ হাসি শেষ পর্যন্ত উজ্জ্বল থাকে কিনা৷

আমার মনে হয়, পৃথিবীর অনেক দেশের অনেক মানুষেরই সিঙ্গাপুরের কাছ থেকে অনেক কিছু শেখার আছে৷

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য