শুরু হচ্ছে ‘দ্য বব্স’
৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৪ডয়চে ভেলের ‘দ্য বব্স' প্রতিযোগিতার শুরু হয় ২০০৪ সালে৷ বাক স্বাধীনতার পক্ষে সংগ্রামরত বিভিন্ন সমষ্টিগত বা ব্যক্তিগত উদ্যোগকে স্বীকৃতি দিতে তখন থেকেই সচেষ্ট এই প্রতিযোগিতা৷ দ্য বব্স-এর সাবেক বিচারক এবং স্পেনের নাভারা বিশ্ববিদ্যালয়ের মাল্টিমিডিয়া কমিউনিকেশন বিভাগের অধ্যাপক খোসে লুইস ওরিহুয়েলা বলেন, ‘‘সামাজিক যোগাযোগ এবং ইন্টারনেটকে ভিত্তি করে যে যুগ শুরু হয়েছে, তার আগে কিন্তু বাক স্বাধীনতার বিষয়টি অধিকাংশক্ষেত্রেই সেই সব মানুষের দখলে ছিল, যাঁরা কোনো না কোনোভাবে মূলধারার গণমাধ্যমের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন৷''
তিনি আরো বলেন, ‘‘ব্লগিং জগতে বিপ্লবের পর অবশ্য বাক স্বাধীনতা প্রত্যেক নাগরিকের অধিকারে পরিণত হয়েছে, কেননা ইন্টারনেট সংযোগযুক্ত ফোন যে কাউকে বিশ্ব মিডিয়ার অংশ হওয়ার সুযোগ করে দিচ্ছে এখন৷''
এক ধরনের ইঁদুর-বেড়াল খেলা
তবে মানুষের বাক স্বাধীনতার ব্যাপারটি অঞ্চল ভেদে ভিন্ন৷ বিশ্বের বহু দেশে এখন ইন্টারনেটে স্বাধীনভাবে মত প্রকাশ বিপজ্জনক ব্যাপার৷ অনেকক্ষেত্রে ইন্টারনেট স্বাধীনতা ক্রমশ পড়তির দিকে বলে জানিয়েছে নজরদারি সংস্থা ‘ফ্রিডম হাউস'৷
রিপোর্টাস উইদাআউট বর্ডার্স জার্মানির মুক্ত ইন্টারনেট ডেস্কের হাউকে গিরো এ বিষয়ে বলেন, ‘‘সাংবাদিক এবং ব্লগারদের বিরুদ্ধে ক্রমাগত সহিংসতার খবর আমরা পাচ্ছি৷ গোটা বিশ্বের এ দিকে নজর দেয়া উচিত৷''
১০ বছর আগে ইন্টারনেট নজরদারি চীন, ইরান এবং অন্যান্য দমনমূলক দেশের মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিল৷ অ্যাক্টিভিস্ট এবং সরকার বিরোধীরা এই বিষয়ে সচেতন ছিলেন এবং নিজেদের পরিচয় যথাসম্ভব গোপন রেখে ‘সেন্সরশিপ' কাটিয়ে চলার চেষ্টা করতেন৷ এই যেমন, চীনা সরকার প্রথম থেকেই যে কোনো ওয়েবসাইট এবং অনলাইন সেবা সাধারণ মানুষের কাছে পৌঁছানোর ক্ষেত্রে বিধিনিষেধ আরোপ করে এসেছে৷ তাই এ সব বিধিনিষেধ কাটাতে বিভিন্ন প্রযুক্তির সহায়তা নিচ্ছেন অ্যাক্টিভিস্টরা৷ ফলে অনলাইন অ্যাক্টিভিস্ট এবং নজরদারি সংস্থাগুলোর মধ্যে ‘ইঁদুর-বেড়াল' খেলা চলছেই৷
নজরদারি বাড়ছে
মার্কিন জাতীয় নিরাপত্তা সংস্থা এনএসএ-র একসময়কার চুক্তিবদ্ধ কর্মী এডোয়ার্ড স্নোডেন সবার সামনে অন্তত একটি বিষয় পরিষ্কার করে দিয়েছেন৷ নজরদারি আর চীন বা ইরানোর মতো দেশে সীমাবদ্ধ নেই৷ বরং স্নোডেনের প্রকাশ করা গোপন নথি অনুযায়ী, এনএসএ গণহারে মানুষের ফোন কল, টেক্সট ম্যাসেজ, এমনকি ই-মেল এবং ওয়েব ব্রাউজিং-এর ইতিহাসের দিকেও নজর রাখছে৷
গুয়াতেমালার মানবাধিকার কর্মী এবং ‘দ্য বব্স'-এর বিচারক রেনাটা আভালা বলেন, ‘‘স্নোডেনের প্রকাশিত তথ্যের ওপর ভিত্তি করে আমাদের উচিত যারা সরকারকে গোয়েন্দাগিরিতে সহায়তা করে পুরো ব্যবস্থাকে দুর্বল করে তুলছে এবং ব্যবহারকারীদের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করছে, তাদের জবাবদিহি নিশ্চিত করা৷''
বিশ্বাস ভঙ্গ
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং অন্যান্য গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের জনগণ যখন ব্যক্তিগত গোপনীয়তার বিষয়ে সরকারের ওপর আস্থা রেখেছে, তখন ‘দ্য বব্স' বিচারক আরাশ আবাদপুরের ভাষায়, ‘‘ইরানিরা নিজেরাই নিজেদের গোপনীয়তা রক্ষায় চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে৷''
আবাদপুর বলেন, ‘‘স্নোডেন যেটা দেখিয়েছেন, তা হচ্ছে রাষ্ট্রকে বিশ্বাস করাটা অনেকক্ষেত্রেই একটা বড় ভুল৷ আমি নিজেই অনেক সময় চিন্তা করি যে, বিশ্বাসের বাস্তব ভিত্তি আদতে কী হতে পারে?''
তবে বিশ্বাসের বাস্তব ভিত্তি তৈরির আগ পর্যন্ত ইন্টারনেট অ্যাক্টিভিস্টদের তথ্য প্রকাশের এমন উপায়ের ওপর ভরসা করতে হবে, যাতে তাঁদের গোপনীয়তা এবং নিরাপত্তা নিশ্চিত হয়, বলেন আভিলা৷ তাঁর কথায়, ‘‘মূলধারার গণমাধ্যম যে সময় চুপ থাকে, সে সময় ব্যবহারকারীর ব্যক্তিগত গোপনীয়তা রক্ষায় সক্ষম ব্লগ প্ল্যাটফর্ম সেন্সরশিপ প্রতিরোধের মোক্ষম অস্ত্রে পরিণত হয়৷''
উল্লেখ্য, বুধবার (০৫.০২.২০১৪) থেকে শুরু হওয়া এই প্রতিযোগিতার মাধ্যমে বাক স্বাধীনতা এবং অনলাইন অ্যাক্টিভিজমের সেরা এবং আকর্ষণীয় প্রকল্পগুলো সম্পর্কে ইন্টারনেট ব্যবহারকারীদের মতামত জানতে চায় দ্য বব্স৷ ১৪টি ভাষায় অনলাইনে মনোনয়ন জমা দেয়া যাবে www.thebobs.com/bengali ঠিকানায়৷