1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

অতিমারিতে বিকল্প ক্লাসরুমের খোঁজে

পায়েল সামন্ত কলকাতা
১৯ আগস্ট ২০২১

কোভিডের কারণে দীর্ঘদিন বন্ধ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান৷ অনলাইন ক্লাস হলেও তাতে খুশি নন পড়ুয়ারা৷ খোলা আকাশের নিচে ক্লাস করে প্রতীকী প্রতিবাদ রাজ্যের বিভিন্ন স্থানে৷ যদিও মুখ্যমন্ত্রী বলেছেন, পূজার পরে খুলতে পারে স্কুল-কলেজ৷

https://p.dw.com/p/3zAep
Bangladesch Coronavirus Schule Straße
ছবি: Payel Samanta/DW

অতিমারির জেরে দীর্ঘ সময় বন্ধ স্কুল-কলেজ৷ ভরসা অনলাইন ক্লাস৷ শিক্ষক ও পড়ুয়া উভয় মহলেই শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলার দাবি উঠছিল অনেকদিন ধরে৷ অনলাইনে পঠনপাঠন কিছুতেই ক্লাসের শিক্ষার বিকল্প হয়ে উঠতে পারছে না৷ শিক্ষক-ছাত্রদের একাংশের বক্তব্য, মদের দোকান, শপিং মল খুলে গিয়েছে৷ এমনকী কয়েকদিন আগে খুলে গিয়েছে সিনেমা হল৷ অথচ দেড় বছরের বেশি সময় ধরে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ৷ তা ছাড়া উন্নয়নশীল দেশে অনলাইন পড়াশুনোর পরিকাঠামোর ব্যবস্থা করা সব অভিভাবকের পক্ষে সম্ভব হচ্ছে না৷ ফলে বাড়ছে স্কুলছুটের সংখ্যা৷ বাড়ছে বাল্য বিবাহের প্রবণতা৷ এই পরিস্থিতিতে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলার দাবিতে খোলা আকাশের নীচে বসেছে বিকল্প ক্লাসরুম৷

ব্যস্ত শহরের জমজমাট রাস্তায় বেঞ্চ, চেয়ার, টেবিল পেতে শুরু হয়েছে ক্লাস৷ পড়াচ্ছেন বিশিষ্ট শিক্ষক-অধ্যাপকেরা৷ যানবাহনের চলাচলের শব্দ, শহরের যাবতীয় কোলাহল কিংবা পথিকের কৌতূহল মনোযোগে বিঘ্ন ঘটাতে পারছে না৷ রাজ্যে যখন কোভিড বিধি কার্যকর, তখন এই ছবি যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের চার নম্বর গেটের সামনে৷ বামপন্থী ছাত্র সংগঠন ভারতের ছাত্র ফেডারেশন (এসএফআই) স্লোগান তুলেছে, "বিকল্প নয় গুগল জুম, রাস্তাই হোক ক্লাসরুম"৷ যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক অম্বিকেশ মহাপাত্রের মতো অনেকেই পড়ুয়াদের পাঠদান করেছেন এই পথেই৷ তিনি ডয়চে ভেলেকে বলেন, "ছাত্ররা সঠিকভাবেই মুখ্যমন্ত্রীর কাছে স্কুল-কলেজ খোলার দাবি তুলেছে৷ আমিও মনে করি এ বার শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলা উচিত৷ নইলে ছেলেমেয়েদের ক্ষতি হয়ে যাচ্ছে৷"

অধ্যাপক অম্বিকেশ মহাপাত্র

শুধু যাদবপুর কেন, কলকাতার উত্তর থেকে দক্ষিণে, রাস্তার একধারে বা ফুটপাতে চলছে ক্লাস৷ মহানগরের বাইরে জেলায় জেলায় একই ছবি৷ বর্ধমানের উত্তর ফটকে বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবনের বাইরে চলছে রাস্তার ক্লাসরুম৷ সুদূর সুন্দরবনেও উঠে এসেছে প্রতিবাদের একই দৃশ্য৷ কাকদ্বীপের চৌরাস্তায় কালনাগিনী সেতুর উপর সামাজিক দূরত্ব মেনে ক্লাস করতে বসে পড়েন পড়ুয়ারা৷ এর মধ্যে স্কুল পড়ুয়ারা যেমন আছেন, তেমনই সুন্দরবন মহাবিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীরাও আছেন৷ কাকদ্বীপের শিবকালীনগর ঈশান মেমোরিয়াল হাই স্কুলের শিক্ষক গৌতম মণ্ডল ডয়চে ভেলেকে বলেন, "রাজ্যে নানা মিটিং-মিছিল হচ্ছে৷ দুয়ারে কর্মসূচিতে প্রচুর ভিড় হচ্ছে, সেখানে কি কোভিড প্রটোকল মানা হচ্ছে? স্কুলে কিন্তু কোভিড প্রটোকল মেনে ক্লাস করা সম্ভব৷ রোটেশন করে ছাত্র আসবে স্কুলে অন্তত তিন দিন৷ স্কুল না খুললে গ্রামের শিক্ষার্থীদের খুব সমস্যা৷"

বাস্তবিকই বামপন্থী ছাত্র সংগঠনটি একটি সমীক্ষা করেছিল৷ তাতে দেখা গিয়েছে, লকডাউনে দেশে ৩৮ শতাংশ পড়ুয়ার কাছে স্মার্টফোন ছিল না৷ স্মার্টফোনের অভাবে এবং উপযুক্ত পরিকাঠামোর অভাবে গ্রামাঞ্চলের ছাত্রছাত্রীরা শিক্ষার অধিকার থেকে বঞ্চিত হচ্ছে৷ এসএফআই পূর্ব বর্ধমান জেলা কমিটির সম্পাদক অনির্বাণ রায়চৌধুরীর দাবি, অবিলম্বে ছাত্রছাত্রীদের টিকাকরণ সুনিশ্চিত করে কোভিড স্বাস্থ্যবিধি মেনে স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় খোলা হোক৷ না হলে তাঁরা প্রয়োজনে জঙ্গি আন্দোলনে নামতে বাধ্য হবেন৷ 

রাজ্যে যখন ১৮ বছরের বেশি বয়সিদের টিকাকরণ কর্মসূচি চলছে পুরোদমে, তখন করোনা আবহে অফলাইন পঠনপাঠন বন্ধ৷ অনলাইনে ক্লাস করছেন পড়ুয়ারা৷ এর ফল কী হতে পারে? অম্বিকেশ মহাপাত্র ডয়চে ভেলেকে বলেন, "সার্বিকভাবে শিক্ষার অবনমন ঘটছে৷ বহু শিক্ষার্থীর স্মার্ট ফোন না থাকায় তারা শিক্ষার সুযোগ পাচ্ছে না৷” তাই মেদিনীপুর কলেজের সামনে এবং বারাসত কালীকৃষ্ণ উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়ের সামনে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলার দাবিতে বিক্ষোভ দেখানো হয়েছে৷ স্বাস্থ্যবিধি মেনেও কী ভাবে ক্লাস চালানো যায়, প্রতীকী প্রতিবাদের মধ্য দিয়ে সেই বার্তা দিয়েছেন ছাত্ররা৷ শিক্ষাবিদ মীরাতুন নাহার ডয়চে ভেলেকে বলেন, "শিক্ষার যা পরিস্থিতি তাতে এই প্রতীকী প্রতিবাদের খুব প্রয়োজন ছিল৷ স্কুল এবার না খুললে পড়াশোনা চলবে কী করে?"

রাজ্য সরকার অবশ্য এখনই শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলার কথা ভাবছে না৷ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জানিয়েছেন, পুজোর পর একদিন অন্তর স্কুল কলেজ খোলার ব্যাপারে চিন্তাভাবনা করছে সরকার৷ এ নিয়ে অধ্যাপক মহাপাত্রের বক্তব্য, "রাজ্য বিষয়টি নিশ্চিত উত্তর দিচ্ছে না৷ বরং ভেবে দেখা হবে বা পুজার পর খোলা হবে কি না ভাবা হবে ইত্যাদি বলে বিষয়টি এড়িয়ে যাচ্ছে৷ "