২০২৩ সাল উষ্ণতম বছর হিসেবে স্বীকৃতি পেল
৬ ডিসেম্বর ২০২৩বৈশ্বিক উষ্ণায়নের ধাক্কা শুধু বিজ্ঞানীদের নথিপত্রে সীমাবদ্ধ নেই, তার প্রমাণ হাতেনাতে পাওয়া যাচ্ছে৷ ইউরোপীয় ইউনিয়নের কোপার্নিকাস ক্লাইমেট চেঞ্জ সার্ভিসের সংগৃহিত তথ্য অনুযায়ী ২০২৩ সাল এখনো পর্যন্ত উষ্ণতম নথিভুক্ত বছর হিসেবে গণ্য করতে হবে৷ চলতি বছর পর পর ছয় মাস সেই রেকর্ড ভাঙার পর ডিসেম্বরের শেষ পর্যন্তও অপেক্ষা করতে হলো না৷ শুধু ডিসেম্বর মাসে পরিস্থিতি পরিবর্তনের কোনো সম্ভাবনা নেই বলে ইউরোপের সেই প্রতিষ্ঠান জানিয়েছে৷ মার্কিন জলবায়ু এজেন্সিও ২০২৩ সালে আগের রেকর্ড ভাঙার পূর্বাভাস দিয়েছিল৷ উল্লেখ্য, ১৮৫০ থেকে তাপমাত্রার রেকর্ড রাখা হচ্ছে৷ এর আগে ২০১৬ সালকে উষ্ণতম বছর হিসেবে গণ্য করা হয়েছে৷
এমন বিস্ফোরক তথ্য প্রকাশিত হবার ফলে দুবাইয়ে আন্তর্জাতিক জলবায়ু সম্মেলনে শীর্ষ নেতাদের উপর আরো চাপ বাড়বে বলে ধরে নেওয়া হচ্ছে৷ মঙ্গলবারই সম্মেলনে ‘গ্লোবাল কার্বন বাজেট'-এর বাৎসরিক রিপোর্ট প্রকাশ করা হয়েছে৷ তাতে দেখা যাচ্ছে, জীবাশ্ম জ্বালানির কারণে কার্বন-ডাই-অক্সাইড নির্গমন বেড়েই চলেছে৷ নির্গমনের মাত্রা ২০২৩ সালে ৩,৬৮০ কোটি টন ছোঁবে বলে রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়েছে৷ এমনটা হলে ২০২২ সালের রেকর্ডও ভাঙা হবে৷ সে ক্ষেত্রে ২০২৩ সালে আগের বছরের তুলনায় বৃদ্ধির মাত্রা দাঁড়াবে এক দশমিক এক শতাংশ এবং ২০১৯ সালের তুলনায় এক দশমিক চার শতাংশ৷
কোপার্নিকাসের প্রধান কার্লো বুয়নটেম্পো বলেন, যতকাল গ্রিনহাউস গ্যাস নির্গমন বেড়ে চলবে, ততকাল চলতি বছরের তুলনায় ভিন্ন ফল প্রত্যাশার কোনো অবকাশ নেই৷ তাঁর মতে, তাপমাত্রা বেড়েই চলবে এবং সেইসঙ্গে তাপপ্রবাহ এবং খরাও বাড়বে৷ যত দ্রুত সম্ভব নির্গমনের মাত্রা শূন্যে আনাই জলবায়ুর ঝুঁকি সামলানোর কার্যকর উপায়৷
দুবাইয়ে জাতিসংঘের ২৮তম জলবায়ু সম্মেলনে একের পর এক এমন সতর্কবাণী শোনা যাচ্ছে৷ বুধবারই গবেষকরা গোটা পৃথিবী জুড়ে বিপর্যয়ের শৃঙ্খলের অভূতপূর্ব ঝুঁকি সম্পর্কে সতর্ক করে দিয়েছেন৷ দৃশ্যমান নয়, পৃথিবীর এমন ‘ট্রাপওয়্যার' পর্যবেক্ষণ করেই তাঁরা এমন সিদ্ধান্তে এসেছেন৷ সেই রিপোর্টে ২৬টি বিপজ্জনক প্রবণতার উল্লেখ করা হয়েছে৷ মানুষের কারণে বৈশ্বিক উষ্ণায়নকেই এমন পরিস্থিতির জন্য দায়ী করা হয়েছে৷ এভাবে পৃথিবীর ইকোসিস্টেম প্রায় ভেঙে পড়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে৷ কয়েকজন বিশেষজ্ঞের মতে, কয়েকটি বিপজ্জনক প্রবণতা আর মোকাবিলার কোনো সুযোগ নেই৷ একের পর এক প্রাকৃতিক বিপর্যয় ঘটলে সবকটি সামলানো মানুষের পক্ষে কঠিন হবে বলে রিপোর্টে আশঙ্কা প্রকাশ করা হয়েছে৷
রিপোর্টের অন্যতম প্রধান রচয়িতা টিম লেন্টন সংবাদ সংস্থা এএফপি-কে বলেছেন, মানবজাতি এর আগে কখনো এমন বড় মাত্রার হুমকির মুখে পড়ে নি৷ তবে এখনো প্রায়শ্চিত্তের কিছু কিছু সুযোগ আছে বলে তিনি মনে করেন৷ ইলেকট্রিক গাড়ি, নবায়নযোগ্য জ্বালানি, উদ্ভিদ-ভিত্তিক খাদ্যের মতো প্রবণতা বিপদ কাটাতে সহায়তা করতে পারে৷
এসবি/জেডএইচ (এএফপি, ডিপিএ)