২০১৭ সালে বিশ্বের কয়েকটি উল্লেখযোগ্য ঘটনা
মার্কিন প্রেসিডেন্ট হিসেবে ডোনাল্ড ট্রাম্পের শপথ গ্রহণ, নির্বাচনের পর এখনও জার্মানিতে সরকার গঠিত না হওয়া, ব্রেক্সিট আলোচনা শুরু, উত্তর কোরিয়ার পরমাণু পরীক্ষা – এ সবই ২০১৭ সালের কয়েকটি উল্লেখযোগ্য ঘটনা৷
জানুয়ারি
ছবিটি মার্কিন প্রেসিডেন্ট হিসেবে ডোনাল্ড ট্রাম্পের শপথ গ্রহণের দিন (২০ জানুয়ারি) তোলা৷ সাবেক প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামাকে বিদায় জানাচ্ছেন তিনি৷ যৌন হয়রানিসহ নানান অভিযোগ থাকা সত্ত্বেও অধিকাংশ জরিপের ফল উলটে বিশ্বকে চমকে দিয়ে মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন ব্যবসায়ী কাম টিভি তারকা ডোনাল্ড ট্রাম্প৷
ফেব্রুয়ারি
ভারতের মহাকাশ গবেষণা সংস্থা ইসরো ১৫ ফেব্রুয়ারি ‘পোলার স্যাটেলাইট লঞ্চ ভেহিকল’ বা পিএসএলভি সি-৩৭ রকেটে করে সফলভাবে একসঙ্গে ১০৪টি কৃত্রিম উপগ্রহ উৎক্ষেপণ করে, যা একটি রেকর্ড৷ এর আগে একটি রকেটে করে একসঙ্গে এতগুলো উপগ্রহ মহাকাশে প্রেরণের ঘটনা ঘটেনি৷
মার্চ
২৯ মার্চ ব্রিটেন আনুষ্ঠানিকভাবে ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) ত্যাগ করার প্রক্রিয়া শুরু করে৷ ২০১৬ সালের জুনে এক গণভোটে ভোটাররা ইইউ থেকে বের হয়ে যাওয়ার পক্ষে ভোট দেন৷ দু’বছরের মধ্যে বিচ্ছেদ প্রক্রিয়া শেষ হওয়ার কথা৷ ইইউ-র লিসবন চুক্তির সনদ ৫০ অনুযায়ী কোনো সদস্য দেশ ইইউ ত্যাগ করতে পারে৷ ছবিতে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী টেরেসা মেকে আবেদনপত্রে স্বাক্ষর করতে দেখা যাচ্ছে৷
এপ্রিল
ক্ষমতার রাশ পাকাপাকিভাবে নিজের হাতে তুলে নিতে ১৬ এপ্রিল সংবিধান পরিবর্তন সংক্রান্ত গণভোটের আয়োজন করেছিলেন তুরস্কের প্রেসিডেন্ট এর্দোয়ান৷ গণভোটের ফল তাঁর পক্ষে যায়৷ ইউরোপীয় ইউনিয়নের নেতৃবর্গ এর্দোয়ানের এই সংকীর্ণ জয় সম্পর্কে বিশেষ প্রতিক্রিয়া প্রদর্শন না করলেও, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প নিজে টেলিফোন করে তাঁকে অভিনন্দন জানান৷
মে
নেপোলিয়নের পর ফ্রান্সের সবচেয়ে কমবয়সি রাষ্ট্রপ্রধান হিসেবে দায়িত্ব নিয়েছেন এমানুয়েল মাক্রোঁ৷ ৭ মে অনুষ্ঠিত রান-অফ নির্বাচনে প্রেসিডেন্ট হিসেবে তাঁর জয় নিশ্চিত হয়৷ মাক্রোঁর জয়ে ইউরোপপন্থিদের মধ্যে স্বস্তি দেখা গেছে৷ কারণ তিনি পরাজিত হলে চরম দক্ষিণপন্থি নেত্রী ল্য পেন প্রেসিডেন্ট হতেন৷
জুন
আধুনিক জার্মানির ইতিহাসের অন্যতম প্রধান রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব ও প্রাক্তন চ্যান্সেলর হেলমুট কোল ১৬ জুন পরলোকগমন করেন৷ মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৮৭ বছর৷ দুই জার্মানির পুনরেকত্রীকরণে বিশাল অবদানের জন্য তিনি ‘পুনর্মিলনের চ্যান্সেলর’ বলেও পরিচিত ছিলেন৷ এছাড়া ইউরোপীয় ইউনিয়নের সাফল্যের পেছনেও তাঁর বেশ অবদান ছিল৷
জুলাই
জার্মানির হামবুর্গ শহরে বিশ্বের গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি অর্থনীতির দেশের সংগঠন জি-টোয়েন্টির শীর্ষ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয় ৭ এবং ৮ জুলাই৷ সম্মেলনে উপস্থিত শীর্ষ নেতারা প্রতিবাদকারীদের অর্থহীন হিংসার তীব্র নিন্দার ক্ষেত্রে ঐক্য দেখালেও জলবায়ু সংরক্ষণ ও বাণিজ্যের ক্ষেত্রে বিবাদ মেটাতে পারেননি৷
আগস্ট
মিয়ানমারের নিরাপত্তা বাহিনীর উপর হামলার অভিযোগ এনে দেশটির সামরিক বাহিনী ২৫ আগস্ট থেকে রাখাইন রাজ্যের রোহিঙ্গা মুসলিমদের উপর নির্যাতনসহ তাদের ঘরবাড়ি, গ্রাম পোড়ানো শুরু করে৷ রোহিঙ্গাদের উপর নির্যাতনকে ‘জাতিগত নিধন’ বলেছে জাতিসংঘ৷ নিপীড়ন থেকে বাঁচতে এখন পর্যন্ত সাড়ে ছয় লক্ষের বেশি রোহিঙ্গা পালিয়ে বাংলাদেশে চলে গেছে৷ ছবিতে বাংলাদেশে রোহিঙ্গাদের শিবির দেখা যাচ্ছে৷
সেপ্টেম্বর
২৪ সেপ্টেম্বর জার্মানিতে সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়৷ চ্যান্সেলর আঙ্গেলা ম্যার্কেলের সিডিইউ দল সবচেয়ে বেশি ভোট পেলেও শরণার্থী নীতির কারণে অনেক ভোট হারায়৷ শরণার্থী বিরোধী দল এএফডি তৃতীয় সর্বোচ্চ ভোট পেয়েছে৷ তবে এখনও সরকার গঠন করতে পারেননি ম্যার্কেল৷ প্রথম এফডিপি ও সবুজ দলের সঙ্গে সরকার গঠনের চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়ে এখন দ্বিতীয় সর্বোচ্চ দল এসপিডির সঙ্গে আলোচনা করছে সিডিইউ৷
অক্টোবর
তথাকথিত ইসলামিক স্টেট বা আইএস সিরিয়ার রাকা শহরকে রাজধানী হিসেবে ব্যবহার করত৷ দু’বছর ধরে সেই শহর মুক্ত করার চেষ্টা চলেছে৷ অবশেষে অক্টোবরের ১৭ তারিখ ‘ব্যাটেল অফ রাকা’ শেষ হয়৷ যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বাধীন জোটের সহায়তায় সিরিয়ান ডেমোক্র্যাটিক ফোর্স বা এসডিএফ আইএস-এর বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে রাকাকে মুক্ত করে৷ ছবিতে এসডিএফ-এর দুই নারী সেনাকে দেখা যাচ্ছে৷
নভেম্বর
দীর্ঘ চার দশক ক্ষমতায় থাকার পর ২১ নভেম্বর পদত্যাগ করেন জিম্বাবোয়ের প্রেসিডেন্ট রবার্ট মুগাবে৷ তার সপ্তাহখানেক আগে স্ত্রী গ্রেস মুগাবেকে ক্ষমতায় বসাতে ভাইস প্রেসিডেন্ট এমারসন নানগাগওয়াকে বহিষ্কার করেছিলেন মুগাবে৷ তাঁর এই সিদ্ধান্ত মেনে নিতে পারেননি দলের সদস্যরা৷ পরে ১৯ নভেম্বর মুগাবেকে দল বহিষ্কার করা হয় এবং নতুন নেতা হিসেবে নানগাগওয়াকে স্বীকৃতি দেয়া হয়৷
ডিসেম্বর
প্রায় সারা বছর উত্তর কোরিয়া বিশ্ব গণমাধ্যমের শিরোনামে ছিল৷ কারণ আন্তর্জাতিক চাপ উপেক্ষা করে ২০১৭ সালে একের পর এক ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষা চালায় দেশটি৷ নভেম্বরে দূরপাল্লার একটি আন্তঃমহাদেশীয় ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্রের পরীক্ষার পর উত্তর কোরিয়া দাবি করে, এটি অ্যামেরিকা মহাদেশের যে কোনো স্থানে আঘাত হানতে সক্ষম৷ সেপ্টেম্বরে প্রকাশ করা এই ছবিতে কিম জং উনকে একটি রকেট পরীক্ষা পর্যবেক্ষণ করতে দেখা যাচ্ছে৷