সেই খুনের ২০ বছর পরও বদলায়নি জার্মানি
১৬ জুন ২০২০মোজাম্বিক থেকে আসা ৩৯ বছর বয়সি আলবার্তো আদ্রিয়ানোকে নৃশংসভাবে পিটিয়ে মারার খবর জার্মানিতে সাড়া ফেলেছিল ২০ বছর আগে৷ তিন সন্তানের জনক আলবার্তো সেই রাতে ফুটবল ম্যাচ দেখে হেঁটে বাড়ি ফিরছিলেন৷ তিন নব্য-নাৎসির উপর্যুপরি ঘুঁষি আর লাথিতে আলবার্তো জ্ঞান হারান৷ জার্মানির পূর্বাঞ্চলের স্যাক্সনি-আনহাল্ট রাজ্যের ডেসাউ শহরের স্টাডপার্কের রাস্তায় অনেকক্ষণ পড়েছিল তার দেহ৷ হাসপাতালে নেয়ার তিনদিন পর ২০০০ সালের ১৪ জুন মৃত্যু হয় তার৷
বার্লিন প্রাচীর পতনের, অর্থাৎ জার্মানির পুনরেকত্রীকরণের ১১ বছর পরের ঘটনা৷ সাবেক পূর্ব জার্মানির অংশে চরম ডানপন্থিদের হামলায় প্রথম মৃত্যুর ঘটনাও সেটা৷ সেই ঘটনার প্রতিবাদে সেদিন অন্তত পাঁচ হাজার মানুষ নেমেছিলেন ডেসাউয়ের রাস্তায়৷
শ্রোতাদের কাছে আদে বান্তু নামে পরিচিত জার্মান-নাইজেরিয়ান গায়ক আদে ওদুকোয়াও আলবার্তোর মৃত্যুর খবর শুনে ক্ষুব্ধ হয়েছিলেন খুব, ভয়ও ছড়িয়েছিল মনে, ‘‘আমি রাগে ফেটে পড়েছিলাম৷ ভয়ও পেয়েছিলাম খুব, এক ধরনের বৈকল্যও দেখা দিয়েছিল৷
‘‘যখন আমরা সবাই নতুন মিলেনিয়ামে নতুনভাবে এগিয়ে যাওয়ার আনন্দে মাতোয়ারা, ঠিক তখন ঘটেছিল ঘটনাটা৷’’
শিল্পীর প্রতিবাদ
জার্মানির কৃষ্ণাঙ্গ শিল্পীদের নিয়ে ‘ব্রাদার্স কিপার্স’ নামের ব্যান্ড গড়ে বর্ণবাদ-বিরোধী প্রচারণায় নেমেছিলেন ওদুকোয়া৷ তাদের গাওয়া হিপহপ ‘‘আদ্রিয়ানো- লেটসটে ভারমুং’’ (আদ্রিয়ানো- লাস্ট ওয়ার্নিং) জার্মানিতে তুমুল জনপ্রিয়৷ টপ চর্টের সেরা দশে ছিল গানটি৷ পরে কৃষ্ণাঙ্গ মেয়ে শিল্পীরা সিস্টার্স কিপার্স নামের ব্যান্ড গড়েও গানটি গেয়েছেন৷ এমন গানের উদ্দেশ্য জানাতে গিয়ে ওদুকোয়া বলেন, ‘‘আমরা আসলে জার্মানত্বকে ঘিরে একটা আলোচনা শুরু করতে চেয়েছিলাম৷ কারণ, আমাদের সবসময় মনে হয়, এখানে জার্মান হওয়া মানে হলো অশ্বেতাঙ্গদের বাদ দিয়ে একটা কিছু৷ আমার মনে হয়, আদ্রিয়ানো- লেটসটে ভার্মুংয়ের মতো গানের মাধ্যমে জার্মানিতে বড় পরিসরে সেই আলোচনার সূচনা করতে পেরেছি৷’’
জার্মানিতে বর্ণবাদের চিত্র
২০১৯ সালে জার্মানিতে বর্ণবৈষম্যসূচক ঘটনাগুলো নিয়ে একটা প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে কেন্দ্রীয়বৈষম্যবিরোধীসংস্থা (এডিএস)৷ বর্ণবাদ বৃদ্ধির ইঙ্গিত স্পষ্ট ধরা পড়েছে প্রতিবেদনে৷ প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০১৯ সালে সারা দেশে এক হাজার ১৭৬টি বর্ণবাদী আচরণ বা কর্মকাণ্ডের অভিযোগ পেয়েছে এডিএস৷ ২০১৮ সালে এর শতকরা দশভাগ কম অভিযোগ জমা হয়েছিল আর ২০১৫ সালে জমা পড়েছিল ঠিক অর্ধেক৷
বৈষম্যবিরোধী সংস্থা আমাদেউ আন্তনিও ফাউন্ডেশনের চেয়ারপার্সন আনেটা কাহানে মনে করেন, প্রকৃত অবস্থা তার চেয়ে অনেক ভয়াবহ৷ তার মতে, ‘‘জার্মানিতে বর্ণবাদ এখন খুব বড় সমস্যা৷’’
অবাক করা প্রশ্ন
শ্লেসভিগ-হোলস্টাইন অঞ্চলের রাজনীতিবিদ আমিনাটা ট্যুরে মনে করেন, অনেক জার্মান বর্ণবাদের বাস্তব পরিস্থিতি সম্পর্কে হয়ত একেবারেই অবগত নন, ‘‘জার্মানিতে যখনই বর্ণবাদ নিয়ে কথা বলবেন,তখনই একটা প্রশ্ন রাখা হবে- জার্মানিতে কি বর্ণবাদ আছে? জার্মানিতে মানুষ কতটা বৈষম্যমূলক আচরণের শিকার সে সম্পর্কে আমরা যে মোটেই অবগত নই, এই প্রশ্ন তারই প্রমাণ৷’’
আসল রূপ
শিল্পী ওদুকোয়া মনে করেন, জার্মান আর শ্বেতাঙ্গ এক হয়ে গেছে জার্মানিতে, ‘‘আমার এমন বন্ধু আছে, যাদের প্রপিতামহ পোল্যান্ড থেকে রুটি-রুজির জন্য এখানে এসেছিলেন৷ তাদের দ্বিতীয় বা তৃতীয় প্রজন্মকে এখন পুরোপুরি জার্মান মনে করা হয়, কেউ বিষয়টি নিয়ে কোনো প্রশ্ন তোলে না৷ অন্যদিকে আমার আফ্রো-জার্মান তৃতীয় প্রজন্মের এমন বন্ধুও আছে, যাদের এখনো স্রেফ অভিবাসী জার্মান হিসেবেই দেখা হয়৷’’
অ্যালেক্স ম্যাথিউস/এসিবি