সুড়ঙ্গে শিশুদের হাসপাতাল থেকে অস্কারের মঞ্চে
৯ ফেব্রুয়ারি ২০২০১০ ফেব্রুয়ারি অ্যামেরিকার লস এঞ্জলেসে ঘোষিত হবে ২০২০ সালের অস্কার পুরস্কারজয়ীদের নাম৷ বিশ্বখ্যাত চিত্রতারকাদের সাথে এবার থাকবে সিরিয়ার এক চিকিৎসকের নামও৷
আমানি বালোর সিরিয়ায় সারিয়ে তুলেছেন হাজার হাজার রোগীকে৷ পেশায় শিশু চিকিৎসক আমানি সিরিয়ার গল্প বলে ‘দ্য কেভ' নামের ১০২-মিনিট দৈর্ঘ্যের একটি তথ্যচিত্র৷ অস্কারের সেরা তথ্যচিত্রের পুরস্কারের জন্য মনোনীত হয়েছে এই ছবিটি৷ আমানির মতে, এই ছবিটির আগাগোড়া বাস্তব, কোনো কল্পনা নেই৷
সিরিয়ায় যুদ্ধবিধ্বস্ত পূর্ব ঘোটা এলাকায় কাজ করতেন৷ এই অঞ্চল পাঁচ বছর ধরে ছিল ইসলামিক স্টেটের দখলে৷ সেখানে ব্যাপক গোলাগুলি, বিষাক্ত গ্যাসবোমা ও হামলার পরিবেশে দিনরাত আমানি লেগে থাকতেন ক্ষতিগ্রস্ত শিশুদের সারিয়ে তুলতে৷
হামলাকারীদের নজর এড়াতে মাটির নিচেই হাসপাতাল গড়ে তোলেন তিনি৷
মাটির নিচে যত লড়াই
২০১৮ সাল থেকে তুরস্কে নির্বাসনে রয়েছেন আমানি৷ যুদ্ধ থেকে নিরাপদ দূরত্বে গিয়েও খুশি নন আমানি৷ তিনি বলেন, ‘‘দেশে থাকলে মানুষের পাশে থাকতে পারতাম৷ চারদিকে এত হানাহনি, অনাহার, মৃত্যু থাকা সত্ত্বেও সেখানে আমি তুলনামূলকভাবে শান্ত ছিলাম৷''
তাঁর কাজের জন্য সম্প্রতি কাউন্সিল অফ ইউরোপ রাউল ওয়ালেনবের্গন পুরস্কার দিয়েছে তাঁকে৷
৩২ বছর বয়েসি আমানিকে এখনও সিরিয়ার স্মৃতি তাড়া করে৷ বিশেষ করে একটি স্কুলের শিক্ষার্থীর কথা বেশি মনে পড়ে তাঁর৷
তিনি বলেন, ‘‘একটি ছেলে ছিল আবদেল৷ ওর বয়েস মাত্র ১১৷ বোমা হামলায় তার সমস্ত সহপাঠীদের সাথে নিজের দুটি পাও সে হারায়৷ আমায় সে দিনরাত প্রশ্ন করত৷ জানতে চাইত কী হচ্ছে বাইরে, কেন যুদ্ধ হচ্ছে, কেনই বা তাদের ওপর বোমা হামলা হচ্ছে৷ আমি কিছুই বোঝাতে পারতাম না৷''
মাটির নিচের সেই হাসপাতালে এক সময় মৃতদেহ রাখার জায়গা ছিল না, স্মৃতিচারণ করেন আমানি৷ কিন্তু সেখানে এক শিশুর জন্মদিন উপলক্ষে সার্জিকাল হাতমোজাকে বেলুন বানিয়ে ওড়ানোর দৃশ্যের মতো কিছু ভালো মূহুর্তও উঠে এসেছে ফিরাস ফায়াদ পরিচালিত এই তথ্যচিত্রে৷
শুধু যুদ্ধই নয়, সুড়ঙ্গের হাসপাতালে মৃত্যুর পাশাপাশি আমানিকে রোজ লড়তে হতো পুরুষতান্ত্রিক চিন্তার সাথেও৷ এপ্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘‘প্রথম দিকে আমি অন্যদের শুনতাম আমার দক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন করতে৷ নারী বলে নিশ্চয়ই ভালো ডাক্তার নই, এমন আচরণেরও সম্মুখীন হয়েছি৷''
১০ ফেব্রুয়ারি লস এঞ্জলেসে অস্কারের অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকবেন আমানি৷ মার্কিন ভিসাও পেয়ে গেছেন তিনি৷ এখন শুধু পুরস্কার ঘোষণার অপেক্ষা৷
এসএস/কেএম (এএফপি)