সুন্দরবনে রামপালের ক্ষতি
বৈশ্বিক জলবায়ু পরিবর্তেনের প্রভাবে বৃহত্তম শ্বাসমূলীয় বন সুন্দরবনের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে বিভিন্ন সময়ে৷ তবে সুন্দরবন ঘেঁষে গড়ে ওঠা ১৩২০ মেগাওয়াট কয়লা বিদ্যুৎ কেন্দ্রকে এ অঞ্চলের সবচেয়ে বড় হুমকি মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা৷
সুন্দরবন কত দূরে
রামপাল কয়লা বিদ্যুৎ প্রকল্প এলাকা থেকে সুন্দরবনের সংরক্ষিত বনাঞ্চলের দূরত্ব মাত্র ১৪ কিলোমিটার৷ তবে বাংলাদেশ সরকারের হিসেবে প্রকল্প এলাকা থেকে সুন্দরবনের দূরত্ব নাকি ৬৯ কিলোমিটার৷ ইউনেক্সো ঘোষিত বিশ্ব ঐতিহ্যের অংশ সুন্দরবন কি সত্যিই রামপাল কয়লা বিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে নিরাপদ দূরত্বে রয়েছে?
মংলার পর থেকেই সুন্দরবনের শুরু
মংলা শহরের পশ্চিম পাড়ে ঢাংমারী এলাকা থেকেই মূলত সুন্দরবনের শুরু৷ এ এলাকা থেকেই বেঙ্গল টাইগারসহ সুন্দরবনের প্রায় সব বন্যপ্রাণীর বিচরণ আছে৷ রামপাল কয়লা বিদ্যুৎ প্রকল্প এলাকা থেকে এই ঢাংমারীর দূরত্ব মাত্র ১৪ কিলোমিটার৷
দীর্ঘ সময় ধরে নির্মাণ
রামপালে ৬৬০ মেগাওয়াটের দু’টি বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণে সময় লাগবে প্রায় সাড়ে চার বছর৷ এই দীর্ঘ সময়ে নির্মাণ কাজের ফলে সুন্দরবনের পরিবেশের উপর প্রভাব পড়বেই৷
নির্মাণ সামগ্রী পরিবহন
নির্মাণ সামগ্রী ও যন্ত্রপাতি সুন্দরবনের ভেতর দিয়ে নদী পথে পরিবহন করার ফলে বাড়তি নৌযান চলাচল, তেল নিঃসরণ, শব্দদূষণ, আলো, বর্জ্য নিঃসরণ ইত্যাদি কারণে সুন্দরবনের ইকো সিস্টেম ক্ষতিগ্রস্ত হবে৷
বায়ুদূষণ
রামপালের কয়লা বিদ্যুৎ কেন্দ্র চালু হলে প্রতিদিন প্রচুর পরিমাণে বিষাক্ত সালফার ডাই-অক্সাইড ও নাইট্রোজেন ডাই-অক্সাইড নির্গত হবে, যার সরাসরি শিকার হবে বিশ্ব ঐতিহ্যের অংশ সুন্দরবন৷
ছাই দূষণ
কয়লা বিদ্যুৎ কেন্দ্রে বছরে ৪৭ লক্ষ ২০ হাজার টন কয়লা পুড়িয়ে প্রায় ৭ লক্ষ ৫০ হাজার টন ‘ফ্লাই অ্যাশ’ ও ২ লক্ষ টন ‘বটম অ্যাশ’ উৎপাদিত হবে৷ এই ফ্লাই অ্যাশ, বটম অ্যাশ, তরল ঘনীভূতি ছাই বা স্লারি ব্যাপক মাত্রায় সুন্দরবনের পরিবেশ দূষণ করবে৷
কয়লা পরিবহন
রামপাল বিদ্যুৎ কেন্দ্রে পোড়ানোর জন্য হাজার হাজার টন আমদানীকৃত কয়লা সুন্দরবনের ভেতর দিয়ে পরিবহন করা হবে৷ যে কারণে সুন্দরবনের ভেতর দিয়ে প্রায় সারা বছর ধরে কয়লা পরিবহনকারী জাহাজ চলাচল করে গোটা সুন্দরবনের পরিবেশকে ক্ষতাগ্রস্ত করবে৷
কয়লা খালাস
রামপাল বিদ্যুৎ কেন্দ্রের জন্য ইন্দোনেশিয়া, অস্ট্রেলিয়া ও দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে সমুদ্র পথে যে কয়লা আমদানী করা হবে, সেগুলো সুন্দরবনের ভেতর দিয়ে জাহাজের মাধ্যমে পশুর নদীর বিভিন্ন এলাকায় খালাস করার কারণে প্রচুর কয়লা সরাসরি নদীতে পড়তে পারে, যা সৃষ্টি করবে দূষণের৷
জাহাজ চলাচলে জীব বৈচিত্রের ক্ষতি
কয়লা পরিবহনকারী জাহাজ থেকে কয়লা, তেল, ময়লা আবর্জনা, দূষিত পানিসহ বিপুল পরিমাণ বর্জ্য নিঃসৃত হয়ে নদী-খাল-মাটিসহ গোটা সুন্দরবন দূষিত হবে৷ এছাড়া জাহাজের ঢেউয়ে দু’পাশের তীরের ভূমি ক্ষয় হবে, রাতে জাহাজ চলাচল করলে সার্চ লাইটের আলো মারাত্বক প্রভাব ফেলবে বন্যপ্রাণীদের জীবনচক্রের উপরও৷
রামপাল সবদিক দিয়েই ক্ষতিকর
তেল গ্যাস খনিজ সম্পদ ও বিদ্যুৎ বন্দর রক্ষা জাতীয় কমিটির সদস্য সচিব অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ মনে করেন রামপাল কয়লা ভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের জন্য সুন্দরবন যে কতটা ক্ষতির সম্মুখীন হবে, তা জানতে বিশেষজ্ঞ হওয়ার প্রয়োজন নেই৷ এই বিদ্যুৎ কেন্দ্র শুধু নিজেই ক্ষতি করছে না, একে কেন্দ্র করে নানান যে ব্যবসা বাণিজ্য আসছে, সেগুলোও সুন্দরবনের জন্য মারাত্মক ক্ষতির কারণ হবে৷