সিবিআই হেফাজতে লালন শেখের মৃত্যু ও তীব্র বিতর্ক
সিবিআই হেফাজতে মৃত্যু বগটুইকাণ্ডের মূল অভিযুক্ত লালন শেখের। তারপর সিবিআই, পুলিশ, পরিবার মিলিয়ে সরগরম রাজ্য।
বগটুইকাণ্ড
গত ২১ মার্চ বীরভূমের বগটুইতে ঘটেছিল নৃশংস ঘটনা। একাধিক বাড়িতে আগুন দেয়া হয়। বাড়ি বাইরে থেকে আটকে দেয়া হয়। পুড়ে মারা যান অনেকে। কলকাতা হাইকোর্টের নির্দেশে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা বা সিবিআই এই ঘটনার তদন্ত শুরু করে।
লালন শেখের মৃত্যু
গত সোমবার সিবিআই হেফাজতে লালন শেখের মৃত্যু হয়। তার দেহ বাথরুমের শাওয়ার থেকে ঝুলতে দেখা যায়। সিবিআই বলছে, গলায় গামছা জড়িয়ে লালন আত্মহত্যা করেছে। কিন্তু তার পরিবারের অভিযোগ, খুন করা হয়েছে।
সিবিআই অফিসে নিরাপত্তার প্রশ্ন
সিবিআই অফিসে নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকে কেন্দ্রীয় বাহিনী সিআইএসএফ। অভিযোগ, লালনের মৃত্যু যখন হয়েছে, তখন সেখানে মাত্র একজন সিআইএসএফ জওয়ান ছিল। মঙ্গলবার লালনকে আদালতে তোলার কথা ছিল। দুই সিবিআই কর্মকর্তা গিয়েছিলেন আদালতে। প্রশ্ন উঠছে, এত ঢিলেঢালা নিরাপত্তা ব্যবস্থা কেন ছিল?
মৃত্যু নিয়ে এফআইআর
শেখের মৃত্যু নিয়ে পুলিশের এফআইআরে সিবিআইয়ের সাতজন অফিসারের নাম আছে। সিবিআইয়ের ডিআইজি, এসপি, গরুপাচার নিয়ে তদন্তকারী অফিসারদের নাম আছে বলে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা জানিয়েছে। সিবিআই বিষয়টি নিয়ে কলকাতা হাইকোর্টে আবেদন জানায়।
পুলিশ ও সিবিআই
লালন শেখের মৃত্যু নিয়ে পুলিশ তদন্ত শুরু করেছে। ফরেনসিকের অফিসারেরা সিবিআই অফিসে গিয়ে বাথরুম দেখেছেন। শাওয়ার থেকে ঝুলে আত্মহত্যা সম্ভব কি না, সেটাও তারা খতিয়ে দেখেছেন। সিআইডি-র আইজি ও অন্য অফিসাররা সিবিআই দপ্তরে গিয়েছিলেন। তারা সিবিআইয়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলেছেন। শৌচাগার দেখেছেন।
লালনের স্ত্রীর অভিযোগ
লালনের স্ত্রী রেশমা শেখ জানিয়েছেন, সিবিআই বলতো, লালনকে মারধর করে বড় মাথার নাম বের করবে। লালনকে সোমবার বাড়িতে নিয়ে আসে সিবিআই। লালন তখন স্ত্রীকে জানায়, ''আমাকে শেষবার দেখে নাও।'' থানায় তার উপস্তিতিতে এফআইআর হয়েছিল বলে রেশমা জানিয়েছেন।
রাস্তায় বিক্ষোভ
সিবিআইয়ের হেফাজতে লালনের মৃত্যুর পর রাস্তায় নেমে বিক্ষোভ শুরু হয়েছে। টায়ার পোড়ানো হয়েছে। প্রচুর নারী রাস্তায় নেমে বিক্ষোভ দেখিয়েছেন।
সিবিআই বনাম রাজ্য সরকার
সিবিআই আদালতে অভিযোগ করেছে, রাজ্য সরকার চাইছে না, তারা রাজ্যের বিভিন্ন ঘটনা নিয়ে তদন্তের কাজ করক। তাই রাজ্যের মদতে তাদের সাতজন অফিসারের নামে এফআইআর করা হয়েছে। অন্যদিকে তৃণমূলের মুখপাত্র কুণাল ঘোষ বলেছেন, সিবিআইকে বিজেপি যখন ব্যবহার করে, তখন তো প্রশ্ন উঠবেই। বিজেপি বলছে, কাকে ধরে আনতে হবে, কবে ধরতে হবে। সিবিআই নয়, তদন্ত করছে বিজেপি।
আদালতের প্রস্তাব
কলকাতা হাইকোর্টের প্রশ্ন, লালন শেখের হত্যার তদন্ত বর্তমান কোনো বিচারক বা বিচারপতির তত্ত্বাবধানে হলে সরকার বা সিবিআইয়ের আপত্তি আছে কি? সিবিআই বলেছে, তাদের কোনো আপত্তি নেই। কিন্তু রাজ্য সরকার চায়, সিআইডি তার মতো তদন্ত করুক। আর সিবিআই যে সব মামলার তদন্ত করছে, তা যথারীতি করে যাক।
বিতর্ক বাড়ছে
বগটুইকাণ্ডের মূল অভিযুক্ত লালন শেখের মৃত্যু নিয়ে বিতর্ক বাড়ছে। রাজনৈতিক দলের নেতারা নিয়মিত বিবৃতি দিচ্ছেন। বিক্ষোভ দেখানো হচ্ছে। এই ঘটনাকে সামনে এনে সিবিআই তদন্ত নিয়ে প্রশ্ন তুলছে তৃণমূল। বিজেপি-র মুখপাত্র শমীক ভট্টাচার্য বলেছেন, এই মৃত্যুতে কার লাভ তা সহজেই অনুমান করা যায়। সিপিএমের সুজন চক্রবর্তীর বক্তব্য, সিবিআই হেফাজতে মৃত্যু হলে প্রশ্ন উঠবেই। কংগ্রেসের দাবি, বিচারবিভাগীয় তদন্ত করতে হবে।