1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

সিঙ্গুর ও টাটাদের নিয়ে মমতা কি সত্যি বলছেন?

২১ অক্টোবর ২০২২

মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জানিয়েছেন, সিঙ্গুর থেকে টাটাদের তিনি তাড়াননি। তাড়িয়েছে সিপিএম। ঠিক বলছেন মুখ্যমন্ত্রী?

https://p.dw.com/p/4IVY1
মুখ্যমন্ত্রীর দাবি, টাটাকে সিঙ্গুর থেকে সিপিএম তাড়িয়েছে।
মুখ্যমন্ত্রীর দাবি, টাটাকে সিঙ্গুর থেকে সিপিএম তাড়িয়েছে। ছবি: Satyajit Shaw/DW

হঠাৎ করেই আবার সিঙ্গুর থেকে টাটাদের তাড়ানোর প্রসঙ্গ তুলেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। প্রথমে শিলিগুড়িতে বিজয়া সম্মেলনীতে তারপর বৃহস্পতিবার মধ্য কলকাতায় কালীপুজোর মণ্ডপ উদ্বোধন করে তিনি বলেছেন, ''কেউ কেউ বাজে কথা বলছে। আমি টাটাকে তাড়িয়ে দিয়েছি। আমি তাড়াইনি। সিপিএম তাড়িয়েছে। আপনারা জোর করে জমি দখল করতে চেয়েছিলেন। আমরা জমি ফেরত দিয়েছি। জায়গার তো অভাব নেই। জোর করে কেন জমি নেবে?''

টাটারা সিঙ্গুর থেকে চলে যাওয়ার পর থেকেই বামেদের অভিযোগ ছিল, মমতাই টাটাদের তাড়িয়েছেন। সেসময় সিঙ্গুরের জমি কৃষকদের কাছে ফেরত দেয়ার জন্য মমতা অনশন করেছেন। লাগাতার আন্দোলন করেছেন। বিক্ষোভ দেখিয়েছেন। হঠাৎ, এতদিন পর তিনি এই কথা বললেন। তারপরই প্রশ্ন উঠেছে মুখ্যমন্ত্রী কি সত্য কথা বলছেন?

অধীর যা বললেন

কংগ্রেসের লোকসভার নেতা এবং পশ্চিমবঙ্গের সভাপতি অধীররঞ্জন চৌধুরী ডয়চে ভেলেকে বলেছেন, ''মুখ্যমন্ত্রী সত্যকে মিথ্যা প্রতিপন্ন করতে চান। সত্য কী তা সবাই জানে। তাই এসব কথা বলে কোনো লাভ নেই।''

অধীরের মতে, ''মমতা আসলে অপরাধবোধে ভুগছেন। তিনি শিল্পপতিদের কাছে ব্লু আইড গার্ল হতে চাইছেন। রাজ্যে শিল্প বলে তো কিছু নেই। তিনি তাই এই ধরনের কথা বলছেন।''

অধীর রঞ্জন চৌধুরী।
অধীর রঞ্জন চৌধুরী। ছবি: Syamantak Ghosh/DW

মহম্মদ সেলিমের মত

সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিমও এই বিষয়ে অধীরের সঙ্গে একমত যে, মুখ্যমন্ত্রী সত্য কথা বলছেন না। সেলিমের বক্তব্য, ''রতন টাটা বলেছিলেন, বন্দুকের ট্রিগার চালিয়ে তাকে তাড়ানো হয়েছে। সেই ট্রিগার কে চেপেছিল? কাকে ইঙ্গিত করেছিলেন তিনি?''

সেলিম জানিয়েছেন, ''রাজ্যপালের মধ্যস্থতায় বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য যখন বলেছিলেন, যতটা মানা সম্ভব মানুন। কারখানাটা হতে দিন। তিনি সেটাও মানেননি। অন্য গাড়ি প্রস্তুতকারকরা চায়নি, পূর্ব ভারতে গাড়ি তৈরির হাব হোক। যারা এটা চায়নি, মমতা তাদের মুখপাত্র হয়েছিলেন।''

আব্দুল মান্নানের বক্তব্য

পশ্চিমবঙ্গের সাবেক বিরোধী নেতা আব্দুল মান্নান ডয়চে ভেলেকে জানিয়েছেন, ''দেখে মনে হচ্ছে, মুখ্যমন্ত্রীর মানসিক চিকিৎসা দরকার। টাটাদের নিয়ে এই সব কথা বলে কোনো লাভ নেই। জনতা সব জানে। তিনি কীভাবে অনশন করেছেন, তাও তাদের জানা।''

মান্নানের সাফ কথা, ''কেউ যদি দুপুরবেলায় বসে বলেন, এখন রাত বারোটা তখন তার কথার প্রতিবাদ করা তো বৃথা। তখন বলা হবে, পাগল হয়ে গেছে। মানসিক বিকৃতি ছাড়া কেউ এটা বলতে পারে না। পাগলের প্রলাপের প্রতিবাদ করে তো কোনো লাভ নেই।''

আব্দুল মান্নান।
আব্দুল মান্নান।ছবি: DW/P. Samanta

মান্নানের বক্তব্য, ''তিনি কখনো বলেন, স্বাধীনতার পর বেলেঘাটায় গান্ধীজির অনশন ভাঙানোর জন্য রবীন্দ্রনাথ ফলের রস দিয়েছিলেন। কখনো বলেন ডহরবাবুর কথা। কখনো বলেন, বাচ্চার এক হাজার পাঁচশ কেজি ওজন হয়। এ সব কি মানসিক সুস্থতার উদাহরণ? তবে স্বৈরাচারীরা এরকমই করেন।''

রবীন্দ্রনাথ ভট্টাচার্যের কথা

সিঙ্গুরে রবীন্দ্রনাথ ভট্টাচার্যকে মাস্টারমশাই ডাকা হয়। সিঙ্গুর আন্দোলনের সময় তৃণমূলে ছিলেন, পরে মমতা মন্ত্রিসভায় মন্ত্রী হন। এখন অবশ্য দলবদল করে বিজেপি-তে। তিনি পুরো ঘটনার ব্যাখ্যা দিয়ে বলেছেন, ''টাটারা চলে গেছে আন্দোলনের জন্যই।  এই আন্দোলনের নেতৃত্ব দিয়েছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।''

তিনি বলেছেন, ''কৃষকের জমি কেড়ে নিয়ে শিল্প আমরা আগেও চাইনি, এখনো চাই না। কিন্তু সমঝোতার মাধ্যমে টাটারা শিল্প করলে ভালো হতো। সেই সুযোগ আর হয়নি।''

সিঙ্গুরের প্রতিবাদসভায় মমতা বন্দ্যোপাধ্য়ায়।
সিঙ্গুরের প্রতিবাদসভায় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ছবি: UNI

বেচারাম মান্নার দাবি

সিঙ্গুরের তৃণমূল বিধায়ক ও মন্ত্রী বেচারাম মান্না বলেছেন, ''মুখ্যমন্ত্রী একেবারে ঠিক কথা বলেছেন। সিপিএম সিঙ্গুরে রাজনীতি করতে এসেছিল। না হলে রাজভবনে রাজ্যপাল ও মুখ্যমন্ত্রীর উপস্থিতিতে যে চুক্তি হয়েছিল, তা মানলে সিঙ্গুরে শিল্প হতো। কৃষিও থাকত।''

স্থানীয় বাসিন্দাদের বক্তব্য

সিঙ্গুরের স্থানীয় বাসিন্দা ও ইচ্ছুক জমিদাতাদের সঙ্গে কথা বলেছে টিভি৯ বাংলা। তাদেরকে সিঙ্গুরের বাসিন্দা কৃষ্ণপদ সানা বলেছেন, ''মুখ্যমন্ত্রী এরকম কথা বলতে পারেন কী করে কী করে তিনি বললেন, সিপিএম টাটাদের তাড়িয়েছে?''

আবার জমি নিয়ে আন্দোলনে অংশ নেয়া ভুবন বাগুই বলেছেন, ''বামেদের জন্যই টাটারা যেতে বাধ্য হয়েছিল। রাজভবনের চুক্তি বামেরা মানেনি বলেই টাটাদের যেতে হয়।''

জমিদাতা শক্তিপদ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছেন, ''কারখানা যাতে না হয়, সেজন্য তিনি মঞ্চ গড়ে বসেছিলেন। সবাই জানে কে টাটাদের তাড়িয়েছিল।''

জিএইচ/এসজি (পিটিআই)