সাগরতলে জেলিফিশের উপদ্রব
৪ জানুয়ারি ২০০৯জেলিফিশ৷ নামের সঙ্গে ফিশ জুড়ে দেয়া হলেও আসলে জেলিফিশ কোন মাছ নয়, নিছক এক সামুদ্রিক প্রাণী৷ সাগর জলে নরম, তুলতুলে এই প্রাণীটির উপস্থিতি দিন দিনই বাড়ছে৷ হাওয়াই, মেক্সিকো উপসাগর, অস্ট্রেলিয়া, বেরিং, কৃষ্ণ কিংবা জাপান সাগরের উপকূলই বলুন আর গভীর জলে হোক সব জায়গাতেই ঝাঁকে ঝাঁকে জেলিফিশের দল৷ কোথাও কোথাও শত শত বর্গমাইল এলাকা জুড়ে থাকে জেলিফিশের ঝাঁক৷ সম্প্রতি মার্কিন এক গবেষণায় দেখা গেছে, এই জেলিফিশের উপদ্রব বেড়ে যাওয়ায় প্রতিবছর মাছের ব্যবসায় নামছে ধস৷ শুধু তাই নয় ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে পর্যটন শিল্পও৷ ১৯৮০-র দশক থেকে এ পর্যন্ত মাছ আর পর্যটন ব্যবসায় লোকসান হয়েছে শত শত কোটি ডলার৷ কিভাবে? মার্কিন ওই রিপোর্টে বলা হয়েছে, কৃষ্ণ-সাগরে জেলিফিশের প্রজনন মৌসুমে কেবল এক ঘনমিটার জায়গাতেই থাকে এক হাজারেরও বেশি মুঠো আকৃতির জেলিফিশ৷ এসব প্রাণীর খাবারই হলো মাছের ডিম৷ আর তার ফলে সাগরে মাছের পরিমাণ যাচ্ছে কমে, সেই সঙ্গে বিপন্ন হচ্ছে জেলেদের জীবিকা৷ শুধু কৃষ্ণ-সাগর নয়, এরকম চিত্র প্রায় সবখানেই৷ ক্যালিফোর্নিয়ার মন্টেরে উপকূলের জ্বলজ প্রাণীর এক-তৃতীয়াংশই জেলিফিশ৷
গবেষকদের হিসেবে, জেলিফিশের বিষাক্ত ছোঁয়ায় প্রতিবছর বিশ্বজুড়ে আহত হচ্ছে ১৫ কোটি মানুষ৷ আর যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডা, আটলান্টিক উপকূল, অস্ট্রেলিয়া আর কৃষ্ণ-সাগরে জেলিফিশের উপদ্রবটা বাড়াবাড়ি রকমের৷ এমনকি জেলিফিশের ছোঁয়ায় মৃত্যু পর্যন্ত হয়েছে বেশ কয়েকজনের৷ এজন্য ওসব উপকূলে পর্যটকের সংখ্যা যাচ্ছে কমে৷ জেলিফিশের কারণে কৃষ্ণ-সাগরে মাছ ব্যবসা আর পর্যটন শিল্পে লোকসান হয়েছে ৩৫ কোটি ডলার৷
গবেষকদের মতে, জেলিফিশের বিস্তার ঘটছে প্রাকৃতিক নিয়মেই৷ তবে বর্তমানে এই ব্যাপক বিস্তারের পেছনে মানুষের কর্মকান্ডকেও দায়ী করছেন তারা৷ সমুদ্রে দূষণের মাত্রা বৃদ্ধি, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে সাগরের পানির তাপমাত্রা বেড়ে যাওয়া, তেল ও গ্যাস উত্তোলনের জন্য সাগরে বিভিন্ন স্থাপনা এবং অতিরিক্ত মাছ ধরার কারণেই বেড়ে যাচ্ছে জেলিফিশের উপস্থিতি৷