1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

সাকিব, পাপন, আপনারা কবে থামবেন?

৮ মার্চ ২০২২

নাজমুল হাসান পাপন এবং সাকিব আল হাসানের ব্যাপারটার সঙ্গে এফডিসির নির্বাচনের মিল আছে কিন্তু! দুটোই বিরক্তি চরমে নিয়ে গিয়েও থামছে না৷ পাপন-সাকিব পর্ব চলছে কয়েক বছর ধরে আর এফডিসির প্যাঁচাল কয়েক মাস ধরে- এই যা পার্থক্য৷

https://p.dw.com/p/489n2
Shakib Al Hasan, Cricketspieler Bangladesch
ছবি: bdnews24.com

তবু ভালো এফডিসির নির্বাচন আদালতে গিয়ে ঠেকেছে, নইলে হয়ত প্রতিদিন প্রতি বেলায় দুই পক্ষের যথেচ্ছাচার দেখতে হতো৷

বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসান পাপনের অবশ্য কথা বলতে বেলা-অবেলার হিসেব লাগে না৷ কোন বিষয় তার এক্তিয়ারভুক্ত আর কোন বিষয় এক্তিয়ারের বাইরে সেই বিবেচনাবোধও তার খুব একটা আছে বলে মনে হয় না৷ বাংলাদেশের ক্রিকেট নিয়ে সব বিষয়েই বাণী দেন তিনি৷ দেখে-শুনে মনে হয় জাতীয় ক্রিকেট দলের কোচ, ফিজিও, নির্বাচক, গ্রাউন্ডসম্যান, পিওন, চাপরাশি- সবই তিনি!

তাকে এমন ‘হান্ড্রেড ইন ওয়ান' বানানোর পেছনে সংবাদ মাধ্যমের ভূমিকাও কম নয়৷ বিশ্বের আর কোনো দেশে ক্রিকেট বোর্ড প্রধানের কাছে সাংবাদিকেরা এত বিষয়ে জানতে চান না, আর কোনো দেশের বোর্ড প্রধান কিন্তু ‘সবজান্তা' ইমেজ গড়ার এমন সুযোগও পান না৷ বলিহারি সংবাদমাধ্যম আমাদের!

বোর্ড প্রধানই যদি সব জানেন, তাকেই যদি সব বিষয়ে কথা বলতে হবে, তাহলে বাকিদের কী গুরুত্ব বা প্রয়োজন, কে জানে!

এই লেখাকেও এফডিসির নির্বাচনের মতো দীর্ঘ এবং বিরক্তিকর না করে মূল প্রসঙ্গে ফেরা যাক৷

রোববার ব্যক্তিগত কাজে দুবাই গিয়েছেন সাকিব আল হাসান৷ যাওয়ার আগে বিমানবন্দরে পৌঁছে সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছেন, এই মুহূর্তে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট খেলার মতো শারীরিক ও মানসিক অবস্থায় তিনি নেই। এই অবস্থায় ক্রিকেট খেললে দলের জন্য ক্ষতিকর ও দেশের সঙ্গে গাদ্দারি হবে বলেও মনে করেন তিনি।

আগামী ১৮ মার্চ থেকে সাউথ আফ্রিকা সফর শুরু করবে বাংলাদেশ৷ তার মাত্র কয়েকদিন আগে সাকিবের পরোক্ষভাবে সিরিজ খেলতে অস্বীকৃতি জানানো নিঃসন্দেহে স্বেচ্ছাচারিতার নামান্তর৷ বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় আন্তর্জাতিক তারকা এমনটি আগেও করেছেন৷ তার মতো একজনের কাছ থেকে এমন আচরণ মোটেই প্রত্যাশিত নয়৷ সফর শুরুর আগে তার মতো অপরিহার্য খেলোয়াড় এমন করলে নির্বাচক এবং টিম ম্যানেজমেন্টকে যে বড় ধরনের বিপাকে পড়তে হয় তাতে বিন্দুমাত্র সন্দেহের অবকাশ নেই৷

Bangladesch Pressekonferenz BCB Präsident Nazmul Hassan Papon in Dhaka
‘ঘরোয়া ক্রিকেট, আম্পায়ারিং, পাতানো খেলা ইত্যাদি নিয়ে বিশেষ কিছু না করে জাতীয় দলের ক্রিকেটারদের ওপর সার্বক্ষণিক খবরদারি কোনো বোর্ড প্রধানের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কাজ হতে পারে না৷’ছবি: bdnews24

এমন পরিস্থিতে অনেক কথার মাঝে নাজমুল হাসান পাপন যথার্থই বলেছেন, " ও (সাকিব) যদি কোনো ফরম্যাটে খেলতে না চায়, কোনো অসুবিধা নেই। এরপর কারো কোনো সমস্যা থাকার কথা? এরপর আর এসব করা উচিত নয়। খেলতে না চাইলে খেলবে না, আমি তো মেনে নিয়েছি। কিন্তু সেটা আগেভাগে জানাতে তো হবে।”

আগে জানানোর দাবিটা একেবারে যথার্থ৷ বিশ্বের সব দেশের ক্রিকেটারকেই এ নিয়ম মানতে হয়৷ দেশের স্বার্থে, দেশের ক্রিকেটের স্বার্থে, নিজের ক্যারিয়ারের স্বার্থে, শৃঙ্খলার স্বার্থে, পেশাদারিত্বের স্বার্থেই মানতে হয়৷

এই নিয়ম মেনে নিজের ক্যারিয়ারের পাশাপাশি দেশের ক্রিকেটকেও আপন গতিতে চলতে দেয়ার অসংখ্য উদাহরণ দেয়া যাবে৷ অসংখ্য থেকে মাত্র দুটো উদাহরণ দেয়া যাক৷ এক, ‘ইউনিভার্সেল বস' ক্রিস গেইল তার আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারের শেষ আটটি বছর দেশের হয়ে একটি টেস্টও খেলেননি, ওয়ানডে খেলেননি শেষ তিন বছর- কই তার সাথে তো ওয়েস্ট ইন্ডিজ ক্রিকেট বোর্ডের তেমন কোনো সমস্যা হয়নি! ওয়েস্ট ইন্ডিজের বোর্ড প্রধানও  ‘‘গেইল দেশে দেশে ফ্র্যাঞ্চাইজি ক্রিকেট খেলে বেড়ানোর সুযোগ পেলে এভাবে ‘না' বলতে পারতেন কিনা'' প্রশ্ন তোলার সুযোগ পাননি৷

সাকিব দায়িত্ববোধ এবং দেশের প্রতি ‘কমিটমেন্ট' নিয়ে প্রশ্ন তোলার মতো আচরণ আগেও করেছেন৷ এক্ষেত্রে কোনো ফর্ম্যাটে খেলা-না খেলার সিদ্ধান্ত কর্তৃপক্ষকে যথাযথ নিয়মে, সবার জন্য সুবিধাজনক সময়ে জানানোটা অবশ্যই দরকার৷ তামিম ইকবাল এবং মাহমুদুল্লাহও তো এ নিয়ম মেনেছেন৷ এবং তাদের সিদ্ধান্তের প্রতি বিসিবি সম্মানও জানিয়েছে৷ সাকিব তা পারবেন না কেন?

Ashish Chakraborty
আশীষ চক্রবর্ত্তী, ডয়চে ভেলেছবি: DW/T. Mehedi

দ্বিতীয় উদাহরণটা নাজমুল হাসান পাপনের জন্য৷

সর্বশেষ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের আগে বিরাট কোহলি জানিয়েছিলেন, বিশ্বকাপের পর আর ভারতের টি-টোয়েন্টি দলের অধিনায়ক থাকবেন না৷ তাতে জল এত ঘোলা হলো যে, কোহলিকে ওয়ানডে অধিনায়কত্ব থেকেও সরিয়ে দিলো বিসিসিআই৷ তারপর  বিসিসিআই প্রধান সৌরভ গাঙ্গুলির বিবৃতি এবং তার জবাবে কোহলির পাল্টা বিবৃতি৷ ব্যস, অধিনায়কত্ব নিয়ে কথার লড়াই সেখানেই শেষ৷ ওই্ বিষয়ে আর একটি কথাও বলেননি সৌরভ গাঙ্গুলি৷ বিরাট কোহলিও মন দিয়েছেন নিজের কাজে৷

নাজমুল হাসান পাপনও যদি দরকারি-অদরকারি, এক্তিয়ারভুক্ত-এক্তিয়ার বহির্ভূত নানা বিষয়ে হাজারো কথা না বলে নিজের আসল কাজে বেশি করে মন দেন, তাতেই বাংলাদেশের ক্রিকেটের কল্যাণ৷

ঘরোয়া ক্রিকেট, আম্পায়ারিং, পাতানো খেলা ইত্যাদি নিয়ে বিশেষ কিছু না করে জাতীয় দলের ক্রিকেটারদের ওপর সার্বক্ষণিক খবরদারি কোনো বোর্ড প্রধানের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কাজ হতে পারে না৷

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য