সাংবাদিকতা কি এখন ফেসবুক, ইউটিউব নির্ভর?
৮ নভেম্বর ২০১৯ফেসবুক ছবিটি সেন্সর করত৷ কারণ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমটির নগ্নতা বিষয়ক নীতিমালা লঙ্ঘন করত সেটি৷ অথচ ঐতিহাসিক গুরুত্ব বিবেচনা করলে এই ছবিটি বিষয়বস্তু মোটেই নগ্নতা নয়৷ বরং যুগ যুগ ধরে গণমাধ্যমে এটি ছাপা হয়েছে৷ ফেসবুকের এমন সিদ্ধান্ত মেনে নিতে পারেননি নরওয়ের এক পত্রিকার সম্পাদক৷ তাই নিজের পত্রিকার প্রথম পাতায় ফেসবুকের সহপ্রতিষ্ঠাতা মার্ক জাকারবার্গের উদ্দেশ্যে একটি চিঠি লেখেন৷ সেখানে তিনি জাকারবার্গের বিরুদ্ধে ক্ষমতার অপব্যবহারের অভিযোগ আনেন৷
ফেসবুক অবশ্য পরবর্তীতে ভিয়েতনাম যুদ্ধের সেই প্রতীকী ছবি আর সেন্সর না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে৷ এই ঘটনা তিন বছর আগের৷ তবে, এটা গণমাধ্যমের জন্য একটা শিক্ষা বলে আমি মনে করি৷ প্রচলিত গণমাধ্যম সতর্ক না হলে ফেসবুকের মতো মাধ্যমগুলোর ক্ষমতার অপব্যবহারের এমন উদাহরণ ক্রমশ বাড়তেই থাকবে৷
এটা সত্যি যে ফেসবুকের জনপ্রিয়তার পরিধি বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে প্রচলিত মূলধারার গণমাধ্যমের মধ্যেও এক ধরনের ভীতি তৈরি হচ্ছে৷ আর তা হচ্ছে পাঠক, দর্শক হারানোর ভয়৷ এই পাঠক হারানোর ভয় থেকে অনেক গণমাধ্যমই দ্রুত ফেসবুকের সঙ্গে মানানসই কন্টেন্ট তৈরির দিকে মনোযোগ দিচ্ছে৷ বিশ্বের বড় বড় গণমাধ্যম কখনো বর্গাকার, কখনো উলম্ব ভিডিও তৈরি করছে৷ ভিডিওর দৈর্ঘ্য কতটা হবে তাও নির্ধারণ হয় ফেসবুকের মানদণ্ড অনুযায়ী৷ আমি নিজেও এমন ভিডিও বানাই৷ কিন্তু, মন থেকে বিষয়টা কখনো কখনো নিতে পারিনা৷
এধরনের ভিডিও বানানোর উদ্দেশ্য একটাই৷ ফেসবুক এমন আকারের ভিডিও পছন্দ করে৷ তাই এরকম ভিডিও বানালে বেশি চলে৷ অথচ এখানে যে কন্টেন্ট নির্মাতা বা যে প্রতিষ্ঠান কন্টেন্ট তৈরির জন্য সম্মানি প্রদান করছেন কিংবা যিনি প্রতিষ্ঠানের সম্পাদক - কারোরই নিজস্ব মতামত গুরুত্ব পাচ্ছে না৷ ভিডিওর এমন আকার দিতে গিয়ে অনেক কন্টেন্ট সৌন্দর্য হারায়৷ কিন্তু সেটা কেমন যেন এড়িয়ে যান সবাই, শুধু ফেসবুকে বেশি রিচ-ভিউ পাওয়ার আশায়৷
শুধু ভিডিওর কথা বলছি কেন৷ একটি প্রতিবেদনের শিরোনাম দিতে গেলেও ভাবতে হয় ফেসবুকে কী বেশি চলে৷ মানে এখানেও সম্পাদকের নিজস্ব বিবেচনার চেয়ে ফেসবুকের এলগরিদম বেশি গুরুত্বপূর্ণ!
বলছি না শুধু ফেসবুকের ক্ষেত্রেই এসব করতে হচ্ছে৷ ইউটিউব, টুইটার, ইন্সটাগ্রামের মতো অন্যান্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের মন জয় করতেও নানা কিছু করতে হচ্ছে কন্টেন্ট নির্মাতাদের৷
আমি পরিবর্তনের বিরোধী নই৷ এটাও অস্বীকার করছি না যে প্লাটফর্ম অনুযায়ী কনটেন্ট তৈরি করা উচিত৷ তবে, যেটা পছন্দ করছি না তাহচ্ছে গণমাধ্যমগুলো নিজের মতো করে কনটেন্ট প্রকাশের স্বাধীনতা ক্রমশ হারিয়ে ফেলছে৷ আর এমনটা চলতে থাকলে প্রচলিত গণমাধ্যমের একসময় নিজস্বতা বলে আর কিছু রক্ষা করতে পারবে বলে আমার মনে হয় না৷
বরং যুগের পরিবর্তনের সঙ্গে তাল মেলানোর পাশাপাশি গণমাধ্যমের উচিত নিজস্ব অবস্থান, স্বকীয়তা ধরে রাখা৷ ফেসবুক দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হওয়ার চেয়ে, ফেসবুককে নিয়ন্ত্রণের দিকে মনোযোগ দেয়া উচিত তাদের৷
প্রচলিত গণমাধ্যমের সবচেয়ে বড় শক্তি হচ্ছে বিশ্বাসযোগ্যতা৷ আরা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের সবচেয়ে বড় দুর্বলতা এটি৷ এই দুর্বলতা ভবিষ্যতে আরো প্রকট হবে৷ আর প্রচলিত গণমাধ্যমের জন্য সেটা হবে এক বড় সুযোগ নিজেকে ফিরে পাওয়ার৷ আশা করছি গণমাধ্যম সেই সুযোগটা কাজে লাগাবে৷
প্রিয় পাঠক, আপনার কি কিছু বলার আছে? লিখুন নীচের মন্তব্যের ঘরে৷