মুক্তিযুদ্ধকে ‘অনুভব করার’ গেম
৩ ডিসেম্বর ২০১৬মাহবুব এবং তাঁর দল বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের ওপর সবচেয়ে বড় কম্পিউটার গেম নির্মাণের কাজে হাত দিয়েছেন৷ ২০২১ সাল নাগাদ গেমটির ২১টি এপিসোড নির্মাণ করবেন তারা৷ এরইমধ্যে আড়াই বছরের চেষ্টায় একটি পর্ব নির্মাণ করেছেন৷ যা এখন সবার জন্য উন্মুক্ত হওয়ার অপেক্ষায় আছে৷ একটি ডেমো সংস্করণ এরইমধ্যে প্রকাশ করা হয়েছে৷
মাহবুব আলম জানান, ‘‘প্রথম পর্বে আমরা মুক্তিযুদ্ধের মার্চ-এপ্রিল সময়কালকে তুলে এনেছি৷ আমরা এই সময়টাকে দেখছি মুক্তিযুদ্ধের প্রস্তুতির সময় হিসবে৷ আমরা আসলে মুক্তিযুদ্ধের একদম সঠিক তথ্যনির্ভর গেম তৈরিতে হাত দিয়েছি৷ তাই শুরুতে আমাদের সময় অনেক বেশি লেগেছে৷ আমরা মুক্তিযুদ্ধের সময়ের বাংলাদেশকে গেমের ২১টি পর্বে তুলে ধরার চেষ্টা করছি৷''
গেমটির ২১ পর্ব নির্মাণে কাজ করছে বড় এক কর্মীবাহিনী৷ খরচও প্রচুর৷ এই খরচের টাকা কোথা থেকে আসবে? এটা কি বাণিজ্যিক ভিত্তিতে বাজারজাত করা হবে? এমন প্রশ্নের জবাবে মাহবুব আলম বলেন, ‘‘না, এই গেমটি সবার জন্য উন্মুক্ত থাকবে৷ গেমটি পেতে বা খেলতে কোনো টাকা খরচ করতে হবে না৷ আমাদের গেম এবং অ্যাপ নির্ভর ব্যবসা আছে, সেখান থেকেই আমরা অর্থের যোগান দেবো৷''
‘‘আমরা চাই বাংলাদেশের এই সময়ের মানুষকে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস জানাতে৷ আর এটা বই পড়ার মত নয়, একজন মুক্তিযোদ্ধার চরিত্রে নিজেকে স্থাপন করে মুক্তিযুদ্ধকে সত্যিকারভাবে অনুভব করার মাধ্যমে,'' বলেন তিনি৷
প্রসঙ্গত, বাংলাদেশের সর্বাত্মক মুক্তিযুদ্ধের মধ্যে আরো অনেক যুদ্ধ আছে৷ সন্তান হারানো মায়ের যুদ্ধ, যুদ্ধশিশুকে মায়ের আর ফিরে না পওয়ার যুদ্ধ, ভারতে শরণার্থী হয়ে যাওয়া এককোটিরও বেশি বাঙালির শরণার্থী জীবনের যুদ্ধ৷ আরো আছে চীন, ভারত, রাশিয়া, অ্যামেরিকার ভূমিকা নিয়ে আরেক যুদ্ধ৷ একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ এবং মুক্তিযুদ্ধকে কেন্দ্র করে আরো অনেক যুদ্ধে নিয়েই এই গেম৷ আর একারণেই গেমটির নাম দেয়া হয়েছে ‘ম্যাসিভ যুদ্ধ৭১৷'
মাহবুব আলম ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘প্রাথমিকভাবে এই গেমের ভাষা বাংলা৷ এরপর আমরা এটা ইংরেজি ও জাপানি ভাষাসহ আরো কয়েকটি ভাষায় প্রকাশ করবো৷ আমাদের সঙ্গে এরইমধ্যে জাপানের দু'টি বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে কথা হয়েছে৷ আমরা চাই বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধের প্রকৃত ইতিহাস সবদেশের সব মানুষের কাছে ছড়িয়ে পড়ুক মুক্তিযুদ্ধের অনুভূতিতে৷''
‘ম্যাসিভ স্টার' বাংলাদেশে বাণিজ্যিকভাবে কম্পিউটার গেমস নির্মাণ শুরু করে ২০১৩ সালে৷ তাদের প্রথম গেম ‘হাতিরঝিল ড্রিম বিগিন্স৷' এরপর তারা কয়েকটি শিক্ষামূলক গেমস তৈরি করেছে৷ মাহবুব জামান জানান, গেমসের মাধ্যমে শিক্ষাসহ আরো অনেক ভালো কিছু করা সম্ভব৷ ‘ম্যাসিভ যুদ্ধ৭১' সেরকমই একটি বড় কাজ৷
গেমটির ২১ পর্বের আলাদা আলাদা কোনো শিরোনাম থাকবেনা৷ তবে পর্বের নম্বর দিয়ে আগাবে৷ কোন পর্বে কী থাকবে তা এখনো চুড়ান্ত হয়নি৷ তবে গবেষণা শেষ হয়েছে বলে জানিয়েছেন নির্মাতারা৷ কমবেশি ২০০ মুক্তিযোদ্ধার চরিত্রায়নের মাধ্যমে মুক্তিযুদ্ধের ভিতরেই একজনকে নিয়ে যেতে চায় গেমটি৷
আপনি কি গেমটি খেলবেন? লিখুন মন্তব্যে৷