বিজ্ঞানসম্মত পরামর্শের পক্ষে পোপ
২৯ এপ্রিল ২০২০করোনা সংকটের সময় সমবেত ধর্মীয় উপাসনার অধিকারের কতটা গুরুত্ব পাওয়া উচিত? মসজিদ, মন্দির বা গির্জার মতো উপাসনালয়ে মানুষ একত্রিত হলে সামাজিক ব্যবধান বজায় রাখা কি সম্ভব? অন্যান্য সমাবেশের মতো এ ক্ষেত্রেও ব্যাপক আকারে সংক্রমণের ঝুঁকি থেকে যায়৷ এমন কঠিন বাস্তব সত্ত্বেও ইউরোপের অনেক দেশে গির্জাসহ উপাসনালয় আবার খোলার জন্য চাপ বাড়ছে৷
ইটালিতে ৪ঠা মে থেকে লকডাউন শিথিল করা হলেও গির্জায় মাস বা সমবেত উপাসনার অনুমতি দেওয়া হচ্ছে না৷ করোনা সংকট কিছুটা সামলে উঠে ধীরে ধীরে স্বাভাবিক জীবনযাত্রায় ফেরার চেষ্টা করছে সে দেশ৷ প্রধানমন্ত্রী জুসেপে কন্টের সরকার অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ার অনুমতি দিলেও গির্জায় প্রার্থনার সুযোগ সম্পর্কে কোনো পূর্বাভাষ দেয়নি৷ ফলে সে দেশের ক্যাথলিক বিশপরা ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন৷ তাঁদের মতে, গির্জায় স্বাস্থ্যবিধি নিশ্চিত করতে সুনির্দিষ্ট প্রস্তাব দেওয়া সত্ত্বেও সরকার তা গ্রাহ্য করেনি৷ উপাসনার অধিকার সঙ্কোচন তাঁরা মানতে পারছেন না৷ সরকার জানিয়েছে, যত দ্রুত সম্ভব গির্জায় স্বাভাবিক পরিস্থিতি ফিরিয়ে আনার চেষ্টা চলছে৷ মনোমালিন্য সত্ত্বেও দুই পক্ষের মধ্যে আলোচনা চলছে৷ উল্লেখ্য, বিভিন্ন জনমত সমীক্ষা অনুযায়ী ইটালির মানুষ প্রধানমন্ত্রী কন্টের প্রতি যথেষ্ট সমর্থন দেখাচ্ছেন৷
এই বিতর্কের অবসান করতে আসরে নেমেছেন পোপ ফ্রান্সিস৷ তিনি ধর্মীয় অনুভূতির তুলনায় বৈজ্ঞানিক পরামর্শকেই প্রাধান্য দিচ্ছেন৷ সরকারের সিদ্ধান্তের প্রতি সমর্থন জানিয়ে তিনি ‘সুবুদ্ধি ও আনুগত্য'-সহ প্রোটোকল মেনে চলার ডাক দিয়েছেন৷ কোয়ারেন্টাইন থেকে বেরিয়ে আসার উদ্যোগের প্রেক্ষাপটে তিনি ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা করেন৷ তিনি বলেন, মহামারি যাতে আবার ফিরে না আসে, তা নিশ্চিত করতে ঈশ্বর যেন সব মানুষকে ‘সুবুদ্ধি ও আনুগত্য’ দেন৷ এর আগেও তিনি বর্তমান সংকট মোকাবিলার ক্ষেত্রে সমাজে দুর্বল শ্রেণির সুরক্ষা ও অর্থনৈতিক স্বার্থকে পেছনে রেখে সংহতির ডাক দিয়েছিলেন৷
আসলে অন্যান্য অনেক মানুষের মতো লকডাউনের কারণে পোপেরও ‘দমবন্ধ' হয়ে আসছে৷ প্রথমদিকে তিনি বলেছিলেন, মনে হচ্ছে যেন ‘খাঁচায় বন্দি' রয়েছেন৷ ভক্তদের সমাগম ও উপাসনা ছাড়া গির্জা যেন গির্জাই নয় বলে তাঁর মনে হয়েছিল৷ ভ্যাটিকান সিটির নিজস্ব লকডাউনের কারণে পোপ নিজেও প্রতিদিন খালি গির্জার মধ্যে একাই প্রার্থনা করে চলেছেন৷ ভ্যাটিকানেও এখনো পর্যন্ত দশ জনের শরীরে করোনা ভাইরাস ধরা পড়েছে৷
শুধু ইটালি নয়, বিশ্বের অনেক প্রান্তেই ধর্মীয় উপাসনার অধিকারের দাবিতে বিচ্ছিন্ন প্রতিবাদ দেখা যাচ্ছে৷ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ব্রাজিলসহ কিছু দেশে কয়েকজন খ্রিস্টান ইভাঞ্জেলিকাল যাজক সরকারি নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে উপাসনার আয়োজন করেছেন৷ দক্ষিণ কোরিয়া, ফ্রান্স ও ইরানের মতো দেশে ধর্মীয় সমাবেশের কারণে সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়েছে বলে অভিযোগ উঠেছিল৷
এসবি/এসিবি (এপি, রয়টার্স)