সংগীত চর্চায় সমাজের খড়গ
বর্তমানে ধ্রুপদী ধারায় অন্তর্ভুক্ত হলেও একসময় টপ্পা, ঠুমরি নিষিদ্ধ ছিল ‘ভদ্র সমাজে’৷ রবীন্দ্র সংগীত চর্চায় ছিল প্রাতিষ্ঠানিক বিধিনিষেধ৷ অপসংস্কৃতি হিসেবে বিবেচিত ছিল ব্যান্ড৷ পশ্চিমে আজকে সমাদৃত জ্যাজ নিয়ে ছিল চরম বিরোধ৷
টপ্পা দমন আন্দোলন
ভারতীয় মার্গ সংগীতের প্রধান চারটি ধারার একটি টপ্পা৷ বাংলাপিডিয়ার তথ্য অনুসারে, আঠারো শতকে বাংলায় টপ্পার সূত্রপাত করেন রামনিধি গুপ্ত ওরফে নিধুগুপ্ত৷ শ্রোতাপ্রিয় হলেও রামনিধি গুপ্তের জীবিত অবস্থাতেই ‘ভদ্রসমাজে’ এই গান নিষিদ্ধ হয়েছিল৷ ‘নিধুবাবুর টপ্পা ভদ্রসমাজে গাইতে মানা’ - এমন স্লোগান নিয়ে রক্ষণশীলরা তার বিরুদ্ধে জোটবদ্ধ হয়৷ অশ্লীলতার অভিযোগ এনে এই গান বর্জনের ডাক দেয় তারা৷
‘বাইজিবাড়ির গান’ ঠুমরি
কাজরি, ঠুমরি বা ঠুম্রিতে উত্তর ভারতের লোকসংগীতের প্রভাব বিরাজমান৷ একসময় এই ঠুমরি নিয়েও সমাজের অনেকের আপত্তি ছিল৷ বাইজিবাড়ির গান বলে প্রচলিত থাকায় ভদ্রসমাজে এই গান কার্যত নিষিদ্ধ ছিল এবং যারা গাইতেন তারা বাইজিপাড়ার মানুষ হিসেবেই চিহ্নিত হতেন৷ যদিও পরবর্তীতে কাজরি ও ঠুমরি ভারতীয় ধ্রুপদী সংগীতের অন্যতম শাখায় পরিণত হয়৷
রবীন্দ্র সংগীত গাইতে মানা
স্বনামধন্য রবীন্দ্র সংগীত শিল্পী দেবব্রত বিশ্বাসকেও রবীন্দ্র সংগীত গাওয়া নিয়ে বিপাকে পড়তে হয়েছিল৷ ১৯৬৪ সালে তার দুইটি গান নিয়ে আপত্তি তোলে বিশ্বভারতী মিউজ়িক বোর্ড৷ স্বরলিপি না মানা আর অতিরিক্ত যন্ত্রানুষঙ্গ ব্যবহারের অভিযোগে ১৯৬৯ সালে আরো দুইটি গানকে রীতিমত বাতিল করে তারা৷ রবীন্দ্র সংগীত গেয়ে প্রবল সমালোচনার মুখে পড়েছিলেন বাংলাদেশে ব্যান্ডশিল্পী মাকসুদও৷
ব্যান্ড সংগীত ‘অপসংস্কৃতি’
আশির দশকে বাংলাদেশে ব্যান্ড সংগীত বিস্তার লাভ করে৷ বর্তমানে জনপ্রিয় হলেও শুরুর দিকে এই ধরনের গান নিয়ে সমাজের এক অংশের ব্যাপক আপত্তি ছিল৷ ব্যান্ড সংগীতকে দেখা হতো ‘পশ্চিমা সংস্কৃতির আগ্রাসন’ বা ‘অপসংস্কৃতি’ বা এমনকি ‘বাজে ছেলেদের’ গান হিসেবেও অভিহিত ছিল৷ তবে তরুণদের মধ্য এই গান ঠিকই জনপ্রিয়তা পায়৷
‘ভদ্র সমাজে’ নিষিদ্ধ জ্যাজ
নিউ অরলিয়েন্সের অ্যাফ্রো-অ্যামেরিকানদের হাত উনিশ-বিশ শতকে জ্যাজ সংগীতের সূচনা ঘটে৷ বর্তমানে এটি গানের জনপ্রিয় একটি ধারা হলেও শুরুর দিকে তা সর্বমহলে গ্রহণযোগ্য ছিল না৷ বয়স্ক প্রজন্ম জ্যাজকে পুরনো সাংস্কৃতিক মূল্যবোধের পরিপন্থী হিসেবে বিবেচনা করতেন৷ অনেকে এটিকে সংগীত বলেই মানতেন না৷ জ্যাজ স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর এমন খবরও ছড়ানো হয়েছিল৷ পাবলিক স্কুলগুলোতে এই সংগীত নিষিদ্ধ ছিল৷
‘ভদ্র সমাজে’ নিষিদ্ধ জ্যাজ
নিউ অরলিয়েন্সের অ্যাফ্রো-অ্যামেরিকানদের হাত উনিশ-বিশ শতকে জ্যাজ সংগীতের সূচনা ঘটে৷ বর্তমানে এটি গানের জনপ্রিয় একটি ধারা হলেও শুরুর দিকে তা সর্বমহলে গ্রহণযোগ্য ছিল না৷ বয়স্ক প্রজন্ম জ্যাজকে পুরনো সাংস্কৃতিক মূল্যবোধের পরিপন্থী হিসেবে বিবেচনা করতেন৷ অনেকে এটিকে সংগীত বলেই মানতেন না৷ জ্যাজ স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর এমন খবরও ছড়ানো হয়েছিল৷ পাবলিক স্কুলগুলোতে এই সংগীত নিষিদ্ধ ছিল৷