শরিয়তি আদালতের ফতোয়া মানতে বাধ্য করা অবৈধ
১৩ জুলাই ২০১৪একাংশ বলছে মুসলিম সমাজের মধ্যে পারিবারিক বিবাদ মেটাতে এটা মূলত একটা সালিশি ব্যবস্থা৷ ফতোয়া হলো সালিশির বিধান৷
ভারতে শরিয়তি আদালতের জারি করা ফতোয়ার কোনো আইনি বৈধতা নেই৷ তাই ঐ ফতোয়া বা নির্দেশ কাউকে মানতে বাধ্য করা যাবে না, যদিনা সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি নিজে থেকে স্বেচ্ছায় তা মেনে নিচ্ছে৷ ফতোয়া জারি করে কাউকে শাস্তি দেয়া যাবে না৷
সম্প্রতি ভারতের শীর্ষ আদালতের এক ডিভিশন বেঞ্চ শরিয়তি আদালতের সাংবিধানিক বৈধতা নিয়ে এক জনস্বার্থ মামলায় এই রায় দেন৷ দিল্লির এক আইনজীবীর অভিযোগ, শরিয়তি আদালতগুলি নিকাহ, তালাক থেকে নিয়ে মুসলিম মহিলাদের পোশাক পরিচ্ছদ নিয়ে ফতোয়ার পর ফতোয়া জারি করে চলেছে৷ শরিয়তি আদালতগুলি কার্যত ভারতের বিচার ব্যবস্থার সমান্তরাল হয়ে মুসলিম সমাজে কাজ করছে৷
সুপ্রিম কোর্টের রায়ে বলা হয়, ফতোয়া দেয়াটা অবৈধ নাও হতে পারে৷ কারণ কাজি, মুফতি বা মৌলবিদের জারি করা ফতোয়া তাঁদের ব্যক্তিগত মত বা বিধান হতে পারে, কিন্তু সেই মত বা বিধান অন্যের ওপর জোর করে চাপিয়ে দেয়াটা বেআইনি৷ অনেক সময় এই ফতোয়া মানবাধিকারের সীমা ছাড়িয়ে অমানুষিক শারীরিক বা মানসিক নিষ্ঠুরতার পর্যায়ে চলে যায়৷ যেমন, জনস্বার্থ মামলায় উল্লেখিত একটি ঘটনার প্রসঙ্গ তুলে ধরা হয়৷ ২০০৫ সালে উত্তর প্রদেশের মজ:ফরনগরে এক বিবাহিতা মহিলাকে ধর্ষণ করে তাঁর শ্বশুর৷ মহিলা মুসলিম পঞ্চায়েতে অভিযোগ করলে পঞ্চায়েত বিধান দেয় মহিলার সঙ্গে শ্বশুরের যৌন সংসর্গ হওয়ায় ঐ শ্বশুরই হবে তাঁর স্বামী এবং তাঁর আসল স্বামীকে দেখতে হবে নিজের ছেলে হিসেবে৷
দেওবাঁধের দার-উল-উলুম ২০১০ সালে ফতোয়া জারি করে বিমা পলিসি অ-ইসলামিক৷ এতে সুদ এ ফাটকাবাজি মিশে আছে৷ ২০০৭ সালে ফতোয়া দেন, মুসলিম মেয়েরা টাইট জিনস পরতে পারবেন না৷ যেসব দম্পতি জন্ম নিরোধক ব্যবহার করতে চান, তাঁদেরকে প্রথমে হাকিম বা উনানির পরামর্শ নিতে হবে৷
সুপ্রিম কোর্টের এই বিতর্কিত রায় সম্পর্কে শরিয়তি আদালতের বিভিন্ন শীর্ষ প্রতিষ্ঠানগুলি কী বলছে? এদের মধ্যে দেখা দিয়েছে মতভেদ৷ দার-উল-কাজা, দার-উল-ইফতা এবং নিজাম-ই-কাজার মতো শরিয়তি প্রতিষ্ঠান আছে ভারতে৷ দারুল-ইফতা ফতোয়া জারি করে কোরান বা হাদিসের ব্যাখ্যা অনুসারে৷ কাজাও কার্যত তাই৷ বিচার নয় বিধান৷ দার-উল-কাজা এবং নিজাম-ই-কাজা যা শরিয়তি আদালত বলে পরিচিত৷
এই রায় সমর্থন করে মুসলিম পার্সোনাল ল-বোর্ডের কৌঁসুলি সওয়াল করেন, ফতোয়া মানতে কাউকে বাধ্য করা হয়না৷ আপত্তি থাকলে ঐ ব্যক্তি আদালতে যেতে পারেন৷ এটা বৈধ আদালতের সমান্তরাল বিচার ব্যবস্থা নয়৷ বাদি ও বিবাদিপক্ষ যদি স্বেচ্ছায় ঘরোয়া সমস্যা সমাধানের জন্য শরিয়তি আদালতের দ্বারস্থ হন, তাহলে ঐ আদালত সমস্যার ফয়সালা করতে তাদের মত বা বিধান দিয়ে থাকে৷ তা মানা বা না মানার জন্য জোর করা হয় না৷ এরফলে সাংবিধানিক আদালতের সময় এবং ঝামেলা লাঘব হয়৷
উত্তর প্রদেশের দেওবাঁধের দার-উল-উলুম রেক্টর মৌলানা মুফতি আবুল কাশিম নোমানি বলেন, সুপ্রিম কোর্টের রায় আমরা খারিজ করছি না আবার স্বাগত জানাচ্ছি না৷ তবে সিদ্ধান্ত নিতে সময় লাগবে৷ হিন্দ ইমাম অ্যাসোসিয়েশনের প্রেসিডেন্ট মৌলানা মহম্মদ সাজিদ রসিদ মনে করেন, ধর্মীয় আচার আনুষ্ঠান বা রীতি নীতি পালন সাংবিধানিক আদালতের এক্তিয়ারে পড়ে না৷ কাজেই এইসব বিষয় নিয়ে আদালতে যাওয়া উচিত নয়৷ কেউ ইসলাম ধর্ম মানলে তাঁকে ধর্মের সবকিছুই মানতে বে৷ অর্থাৎ শরিয়ত না মানলে সে মুসলিম হতে পারেন না৷