1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

লাগামহীন জামা-জুতার বাজার

হারুন উর রশীদ স্বপন ঢাকা
২৬ এপ্রিল ২০২২

বাংলাদেশে নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্য ছাড়া আর কোনো পণ্যের দাম নির্ধারণের স্বীকৃত কোনো পদ্ধতি নেই৷ উৎপাদনকারী ও বিক্রেতারা তাদের ইচ্ছেমতো দাম নির্ধারণ করেন৷ আর এ কারণেই ঈদের বাজারে নতুন জামা কাপড়-জুতার দামে চলছে নৈরাজ্য৷

https://p.dw.com/p/4ASGS
Bildergalerie Menschenmassen Bangladesh Einkaufszentren öffnen wieder
ছবি: Mortuza Rashed/DW

শুধু তাই নয়, আগের দামের ট্যাগের ওপরেই দাম বাড়িয়ে নতুন ট্যাগ লাগিয়ে পোশাক বিক্রি করা হচ্ছে৷ এই অভিযোগে কয়েকটি প্রতিষ্ঠানকে জরিমানা করেছে ভোক্তা অধিদপ্তর৷ আর কথা বলে জানা গেছে মূল্য হ্রাস বা ডিসকাউন্ট-এর বিষয়টি অনেকাংশেই ভুয়া৷ এটা হলো দাম বাড়িয়ে দিয়ে আগের দামে বা তার চেয়েও বেশি দামে বিক্রির কৌশল৷ একজন ব্যবসায়ী উদাহরণ দিয়ে বলেন, যে পাঞ্জাবির দাম আগে ছিলো দুই হাজার টাকা তাতে চার হাজার টাকার ট্যাগ লাগিয়ে শতকরা ৫০ ভাগ ডিসকাউন্ট দেয়া হয়৷

ফ্যাশন হাউজ রিচম্যান ও লুবনানের মুনীরুল হক জানান, তারা যে পাঞ্জাবি বিক্রি করেন তা প্রতিটি দুই হাজার ৫০০ টাকা থেকে ১৬ হাজার টাকা দামের৷ তারা মূল্য নির্ধারণ করেন ফেব্রিক, ডিজাইন, দোকানোর ভাড়া, কর্মচারির বেতন এগুলো বিবেচনায় নিয়ে৷ সব খরচ বাদ দিয়ে তার শতকরা ২০-৩০ ভাগ লাভ ধরে পোশাকের দাম নির্ধারণ করেন৷ তবে এর ওপর সরকারের বা বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের কোনো মনিটরিং নেই৷ তাদের ৮০ ভাগ ফেব্রিক বাংলাদেশি৷ বাকিটা আমদানি করেন৷ তিনি দাবি করেন, ‘‘আমরা যৌক্তিক মূল্য নির্ধারণ করি৷ তবে কেউ কেউ আছেন অনেক বেশি দাম নেন৷ সেটা নিয়ন্ত্রণের কোনো কর্তৃপক্ষ নেই৷''

বাংলাদেশের যে কাপড় সেই কাপড়ের একটি পাঞ্জাবির দাম ২০-২২ হাজার টাকা কীভাবে হয় জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘‘ডিজাইনের একটা বড় খরচ আছে৷ আবার বসুন্ধরা সিটি যদি হয় তাহলে দোকানের ভাড়া স্কয়ার ফুট হিসেবে দ্বিগুণ বেড়ে গেছে৷ তারপরও দাম নির্ধারণে সরকারের একটি সিস্টেম থাকলে ভালো হতো৷''

তার কথা, ‘‘যদি একটি জায়গা থাকত যে আমরা আমাদের উৎপাদিত পোশাকের ডিজাইনসহ উৎপাদন খরচ এবং লাভ ধরে দাম সেখানে পাঠিয়ে দিতাম৷ তারা দৈব চয়নের ভিত্তিতে এগুলো চেক করতেন, তাহলে নিয়ন্ত্রণে থাকত৷''

আলী আহাদ খান

ঈদের বাজারে ভারতীয় ও পাকিস্তানি পোশাকের বেশ কদর আছে৷ ব্যবসায়ীদের সাথে কথা বলে জানা গেছে নানা নামের ওইসব পোশাকের প্রকৃত দাম ক্রেতার পক্ষে ধারণা করা সম্ভব নয়৷ যে যেভাবে দরাদরি করে কিনতে পারেন৷ আর বিক্রেতারাও তাদের ইচ্ছেমত দাম হাঁকেন৷ আবার ফিক্সড প্রাইস বলে যেসব দোকান পোশাক বিক্রি করে তারাও তাদের ব্র্যান্ডের কারণে ওই সুবিধা নেয়৷ 

বিবিয়ানার থ্রিপিস দুই হাজার টাকা থেকে ছয়-সাত হাজার টাকা দামের৷ প্রতিষ্ঠানটির প্রধান লিপি খন্দকার বলেন, ‘‘আমরা সর্বোচ্চ শতকরা ২০ ভাগ লাভ ধরে দাম নির্ধারণ করি৷ এর বেশি ব্যবসা করা যায় না৷''

তবে তার কথা, দেশের ফেব্রিক ব্যবহার করলে একটি পাঞ্জাবির দাম ১৬-১৭ হাজার টাকা হতে পারে না৷ তবে ডিজাইন, ব্র্যান্ড আরো অনেক বিষয় থাকে৷ ক্রেতা ভালো মানের পোশাক চিনবেন কীভাবে, কাপড়ের মান যাচাই করবেন কীভাবে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘‘এটা তো দেখে বুঝবেন, অভিজ্ঞতা দিয়ে বুঝবেন৷'' ভারত ও পাকিস্তানের পোশাকের প্রকৃত দাম বোঝা আসলেই জটিল বলে জানান তিনি৷

বাংলাদেশ দোকান মালিক সমিতির সভাপতি ও এফবিসিসিআই এর সাবেক পরিচালক মো. হেলাল উদ্দিন নিজেও স্বীকার করেন যে জামা কাপড়, জুতা, প্রসাধনের দাম অনেক বেশি নেয়া হচ্ছে৷ তিনি নিজেও এর শিকার৷ তিনি বলেন, ‘‘দেশি ব্র্যান্ডের এক জোড়া জুতা কিনতে গিয়ে দেখি দাম ১৫ হাজার টাকা৷ এটা কীভাবে সম্ভব!''

তিনি মনে করেন, ‘‘এর একটা মনিটরিং থাকা দরকার৷ আর ক্রেতাকেও সচেতন হতে হবে৷ কেনার প্রতিযোগিতা নয়, প্রকৃত দামে কিনতে হবে৷''

লিপি খন্দকার

কনজ্যুমার অ্যাসেসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সহ-সভাপতি নাজের হোসেন বলেন, ‘‘আমরা বেশ কয়েকবার এই বিষয়টি নিয়ে কথা বলেছি৷ আমরা অনুসন্ধানে দেখেছি, এক হাজার টাকায় একটি পাঞ্জাবি কিনে শো রুমে তুলে ১০ হাজার টাকা বিক্রি করা হচ্ছে৷ ঈদের সময় এটা বেশি হয়৷ শাড়িসহ অন্যান্য পোশাকের ক্ষেত্রেও এটা ঘটছে৷ তাই এটা নিয়ন্ত্রণ নয়, মনিটরিং করা প্রয়োজন৷ এসেনশিয়াল প্রডাক্ট-এর জন্য আলাদা আইন আছে৷ তবে ভোক্তা অধিকার আইনে এটা মনিটরিং করার সুযোগ আছে৷ আর একটু অনুসন্ধান করলেই অতিরিক্তি দাম নিলে সেটা বের করে শাস্তির আওতায় আনা সম্ভব৷''

বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব আলী আহাদ খান জানান, ‘‘বাণিজ্য মন্ত্রণালয় চাল, ডাল,পেঁয়াজ, চিনি এরকম ১৭টি নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যের দাম নির্ধারণ করতে পারে৷ কিন্তু জামা, জুতা এগুলো আপনাকে দেখেই কিনতে হবে৷ তবে কেউ যদি অস্বাভাবিক দাম নেয় সেটা দেখার দায়িত্ব ভোক্তা অধিদপ্তরের৷'' তিনি বলেন, ‘‘কোনো আইন নাই তবে আমরা শতকরা ২০-৩০ ভাগ লাভকে স্বাভাবিক লাভ হিসেবে বিবেচনা করি৷''

আমদানি করা এই ধরনের পণ্যের দাম বেশি নেয়া হচ্ছে কী না তা ধরা সহজ৷ তবে দেশীয় পণ্যের অতিরিক্ত দামও একটু অনুসন্ধান করলেই চিহ্নিত করা যায় বলে মনে করেন তিনি৷

এ বিষয়ে ভোক্তা অধিদপ্তরের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তার বক্তব্য জানতে বার বার চেষ্টা করেও পাওয়া যায়নি৷

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য