‘লকডাউন’ শেষের পর ৮৪ শতাংশের মৃত্যু
করোনা ঠেকাতে বাংলাদেশে মার্চের শেষ থেকে ৩০ মে পর্যন্ত সাধারণ ছুটির নামে লকডাউন কার্যকর করা হয়৷ ৩০ মে করোনায় মৃত্যুর সংখ্যা ছিল ৬১০৷ ২০ আগস্ট সংখ্যাটি দাঁড়ায় ৩,৮২২ জনে৷
প্রথম রোগী
৮ মার্চ বাংলাদেশে প্রথম কোভিড-১৯ রোগী শনাক্ত হয়৷
শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ
১৭ মার্চ সব ধরনের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করা হয়৷ এখনও তা বন্ধ আছে৷ থাকবে ৩১ আগস্ট পর্যন্ত৷
সাধারণ ছুটি
২৩ মার্চ এক সংবাদ সম্মেলন থেকে ২৯ মার্চ থেকে ২ এপ্রিল পর্যন্ত দেশজুড়ে সাধারণ ছুটি ঘোষণা করা হয়৷ এই সময় দেশের সব অফিস-আদালত বন্ধ থাকবে বলে জানানো হয়৷ তবে হাসপাতাল, ফায়ার সার্ভিসসহ জরুরি সেবা সংস্থাগুলোকে ছুটির আওতার বাইরে রাখা হয়৷ গণপরিবহন চলাচলও সীমিত করা হয়৷ ২৩ মার্চ পর্যন্ত বাংলাদেশে ৬২০ জনের দেহে করোনা টেস্ট করে ৩৩ জন রোগী পাওয়া গিয়েছিল৷ তখন পর্যন্ত মারা গিয়েছিলেন তিন জন৷
পোশাক শ্রমিকদের হয়রানি
৫ এপ্রিল থেকে পোশাক কারখানা খোলা হবে এমন খবরে ৪ এপ্রিল থেকে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে শ্রমিকরা ঢাকায় আসা শুরু করেছিলেন৷ ফলে গাজীপুরে, টাঙ্গাইলে বঙ্গবন্ধু সেতু মহাসড়কে, নারায়ণগঞ্জে, শিমুলিয়া-কাঁঠালবাড়ী এবং পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া নৌরুটে ফেরিতে মানুষের ঢল নেমেছিল৷ পরে শ্রমিকরা ঢাকায় পৌঁছার পর রাত ১০টায় বিজিএমইএ থেকে কারখানা বন্ধের ঘোষণা দেয়া হয়৷ এরপর ২৬ এপ্রিল থেকে সীমিত পরিসরে পোশাক কারখানা খোলা শুরু করে৷
জানাজায় লক্ষাধিক মানুষ
সাধারণ ছুটির মধ্যেই ১৮ এপ্রিল ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় এক জানাজায় লাখো মানুষ উপস্থিত হন৷ স্থানীয় প্রশাসন এ অবস্থায় নীরব ভূমিকা পালন করে বলে অভিযোগ উঠেছিল৷ ইসলামী আলোচক ও বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের সিনিয়র নায়েবে আমির মাওলানা জোবায়ের আহমদ আনসারীর জানাজা ছিল এটি৷
ঈদের জন্য ছাড়
৩০ মে পর্যন্ত সাধারণ ছুটি থাকলেও ২৫ মে রোজার ঈদ সামনে রেখে ১০ মে থেকে শর্তসাপেক্ষে শপিং মল, মার্কেট, দোকানপাট খোলার অনুমতি দিয়েছিল সরকার৷ শর্তের মধ্যে ছিল স্বাস্থ্যবিধি মানা, সামাজিক দূরত্ব মানা ও বিকাল চারটার মধ্যে দোকানপাট বন্ধ করা৷ অবশ্য এসব শর্ত বাস্তবায়ন নিশ্চিত করা সম্ভব না হওয়ায় সপ্তাহখানেক পর বেশিরভাগ জেলায় দোকানপাট বন্ধ করে দিয়েছিল প্রশাসন৷
ঈদযাত্রা
২৫ মে রোজার ঈদকে ঘিরে এক জেলা থেকে অন্য জেলায় যাতায়াত না করতে সরকারি বিধিনিষেধ ছিল৷ কিন্তু অনেককেই তা মানতে দেখা যায়নি৷ গণপরিবহন না চললেও বিভিন্নভাবে তারা ঢাকা থেকে অন্য জেলায় যাওয়া শুরু করেন৷ এক পর্যায়ে ২১ মে সরকার থেকে বলা হয়, ব্যক্তিগত গাড়ি নিয়ে গ্রামের বাড়ি যাওয়া যাবে৷ ছবিটি ২৩ মে মুন্সিগঞ্জ থেকে তোলা৷
টানা ৬৬ দিন ছুটি
প্রথমে পাঁচদিন সাধারণ ছুটি দেয়া হয়েছিল৷ এরপর কয়েক দফায় মেয়াদ বাড়ানো হয়৷ অবশেষে টানা ৬৬ দিন ছুটি শেষে ৩১ মে থেকে সীমিত পরিসরে (সচিবালয়ে একসঙ্গে সর্বোচ্চ ২৫ শতাংশ কর্মকর্তা-কর্মচারী উপস্থিত থাকতে পারবেন বলে জানানো হয়েছিল) অফিস ও যানবাহন চলাচল শুরু হয়৷ ৩০ মে পর্যন্ত দুই লাখ ৯৭ হাজার ৫৪ জনের করোনা টেস্ট করা হয়েছিল৷ এর মধ্যে ৪৪ হাজার ছয়শ আট জনের করোনা শনাক্ত হয়৷ তখন পর্যন্ত মৃতের সংখ্যা ছিল ৬১০ জন৷
মৌখিক নির্দেশনা
১ জুন থেকে সর্বোচ্চ ২৫ শতাংশ সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী সচিবালয়ে কাজ করছিলেন৷ তবে ৬ আগস্ট মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম বাংলাদেশে ডয়চে ভেলের কন্টেন্ট পার্টনার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান বয়স্ক, অসুস্থ ও সন্তান সম্ভবা ছাড়া সব সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীকে অফিসে উপস্থিত থাকতে বলা হয়েছে৷
বর্তমান পরিস্থিতি
২০ আগস্ট পর্যন্ত বাংলাদেশে ১৪ লাখ সাত হাজার ৫৫৬ জনের করোনা টেস্ট করা হয়েছে৷ এর মধ্যে করোনা শনাক্ত হয়েছে দুই লাখ ৮৭ হাজার ৯৫৯ জনের৷ আর মৃত্যুর সংখ্যা তিন হাজার ৮২২ জন৷ অর্থাৎ সাধারণ ছুটি শেষ হওয়ার পর ৮২ দিনে দুই লাখ ৪৩ হাজার ৩৫১ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে৷ এই সময়ে মারা গেছেন তিন হাজার ২১২ জন, যা মোট মৃত্যু সংখ্যার ৮৪ শতাংশ৷