রাবি শিক্ষক হত্যার দায়ে দুই জনের মৃত্যুদণ্ড বহাল
৫ এপ্রিল ২০২২ডয়চে ভেলের কনটেন্ট পার্টনার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের খবর অনুযায়ী, খালাস চেয়ে আসামিদের করা আপিল এবং যাবজ্জীবন সাজার দুই আসামির দণ্ড বাড়াতে রাষ্ট্রপক্ষের আবেদন খারিজ করে প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকীর নেতৃত্বে আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চ মঙ্গলবার এ রায় দেয়৷
সাজা বহাল থাকায় তাহেরের সহকর্মী ড. মিয়া মোহাম্মদ মহিউদ্দিন এবং তাহেরের বাসার তত্ত্বাবধায়ক মো. জাহাঙ্গীর আলমকে ফাঁসিকাষ্ঠেই যেতে হবে৷ জাহাঙ্গীরের ভাই শিবিরকর্মী আবদুস সালাম এবং জাহাঙ্গীরের স্ত্রীর ভাই নাজমুল আলমকে যাবজ্জীবন সাজা খাটতে হবে৷ তবে তারা আপিল বিভাগের রায় পর্যালোচনার আবেদন করতে পারবেন৷
রায় ঘোষণার সময় আদালতে উপস্থিত ছিলেন অধ্যাপক তাহেরের স্ত্রী সুলতানা আহমেদ, ছেলে সানজিদ আলভি আহমেদ এবং মেয়ে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী শেগুফতা তাবাসসুম আহমেদ৷
আদালতে রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করেন অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন এবং ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল বিশ্বজিৎ দেবনাথ৷ আসামিপক্ষে ছিলেন আইনজীবী এস এম শাহজাহান, ইমরান সিদ্দিকী ও শামছুর রহমান৷
রায়ের পর অ্যাটর্নি জেনারেল আমিন উদ্দিন সাংবাদিকদের বলেন, ‘‘পদোন্নতিতে বাধা সৃষ্টির জন্য একজন মানুষকে এভাবে হত্যা করা কোনোভাবেই মেনে নেওয়া যায় না, খুবই ঘৃণ্য কাজ৷’’
চূড়ান্ত রায়ের পর প্রতিক্রিয়ায় অধ্যাপক তাহেরের স্ত্রী সুলতানা আহমেদ বলেন, ‘‘ষোলো বছর এর জন্য অনেক সংগ্রাম করেছি৷ অনেক দুঃখ-কষ্ট ভোগ করেছি৷ রায়ে আমরা সন্তুষ্ট৷ রায় কার্যকর হলে পরিপূর্ণভাবে সন্তুষ্ট হব৷’’
ভূতত্ত্ব ও খনিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক তাহের ২০০৬ সালের ১ ফেব্রুয়ারি নিখোঁজ হন৷ ৩ ফেব্রুয়ারি বিশ্ববিদ্যালয়ের বাসার বাইরে ম্যানহোলে তার লাশ পাওয়া যায়৷ তার ছেলেমেয়েরা তখন ঢাকার উত্তরায় একটি বাসায় থেকে লেখাপড়া করছিলেন৷ ঘটনার দিন তার স্ত্রী ছেলেমেয়েদের সাথে ছিলেন, রাজশাহীর বাসায় তাহের একা ছিলেন৷
লাশ উদ্ধারের পরদিন তার ছেলে সানজিদ আলভি মতিহার থানায় মামলা করেন৷ তদন্ত কর্মকর্তা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের তৎকালীন উপপরিদর্শক আচানুল কবির ২০০৭ সালের ১৮ মার্চ ছয়জনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দেন৷ সেখানে তাহেরের এক সময়ের ছাত্র ও পরে বিভাগীয় সহকর্মী মিয়া মোহাম্মদ মহিউদ্দিন, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রশিবিরের তৎকালীন সভাপতি মাহবুবুল আলম সালেহী, তাহেরের বাসভবনের তত্ত্বাবধায়ক জাহাঙ্গীর, জাহাঙ্গীরের ভাই শিবিরকর্মী আবদুস সালাম, তাদের (জাহাঙ্গীর ও আবদুস সালাম) বাবা আজিমুদ্দীন এবং জাহাঙ্গীরের স্ত্রীর ভাই নাজমুল আলমকে আসামি করা হয়৷
গ্রেপ্তার হওয়ার পর জাহাঙ্গীর, নাজমুল ও সালাম আদালতে ১৬৪ ধারায় দেওয়া স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে বলেছিলেন, মহিউদ্দিন ও সালেহী তাদের কম্পিউটার, টাকা-পয়সা এবং বিশ্ববিদ্যালয়ে চাকরির প্রলোভন দেখিয়ে তাহের আহমেদকে হত্যা করার কাজে লাগান৷ তবে মিয়া মহিউদ্দিন আদালতে নিজেকে নির্দোষ দাবি করেছিলেন৷
পরে পুলিশের তদন্তে উঠে আসে, তখনকার সহযোগী অধ্যাপক মিয়া মহিউদ্দিন পদোন্নতি পেতে বিভাগে আবেদন করেছিলেন৷ পদোন্নতির ওই কমিটিতে ড. তাহেরও ছিলেন৷ তিনি মহিউদ্দিনের কয়েকটি প্রতারণা প্রাথমিকভাবে ধরে ফেলেন৷ তদন্ত কমিটির মাধ্যমে পরে এই সব প্রতারণা প্রমাণিত হয়৷ সেই অসন্তোষ থেকে মিয়া মহিউদ্দিন এই হত্যাকাণ্ডের পরিকল্পনা করেন৷ সে অনুযায়ী তাহেরকে বাসায় হত্যা করে লাশ ম্যানহোলে ঢুকিয়ে রাখা হয়৷
৩৯ জনের সাক্ষ্য জেরা নিয়ে ২০০৮ সালের ২২ মে রাজশাহীর দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল মিয়া মহিউদ্দিন, জাহাঙ্গীর, সালাম ও নাজমুলকে মৃত্যুদণ্ড দেয়৷ বাকি দুই আসামি সালেহী ও আজিমুদ্দিন মুন্সী সেই রায়ে খালাস পান৷
নিয়ম অনুযায়ী মৃত্যুদণ্ড অনুমোদনের জন্য মামলার নথিপত্র হাই কোর্টে যায়৷ আসামিদের আপিল ও ডেথ রেফারেন্সের শুনানি করে বিচারপতি মইনুল ইসলাম চৌধুরী ও বিচারপতি কাজী মো. ইজারুল হক আকন্দের হাই কোর্ট বেঞ্চ ২০১৩ সালের ২১ এপ্রিল রায় দেয়৷
সেখানে মিয়া মহিউদ্দিন ও জাহাঙ্গীরের মৃত্যুদণ্ড বহাল রেখে সালাম ও নাজমুমের সাজা কমিয়ে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া হয়৷ পরে আসামিরা ওই রায়ের বিরুদ্ধে আপিল বিভাগে আবেদন করেন এবং যাবজ্জীবন দণ্ডিত দুই আসামির দণ্ড বাড়াতে আপিল করে রাষ্ট্রপক্ষ৷
নয় বছর পর ১৬ মার্চ দুই পক্ষের শুনানি শেষে মঙ্গলবার এই চূড়ান্ত রায় দিল সর্বোচ্চ আদালত৷
এনএস/কেএম (বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম)