রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ে আটক শিক্ষক ও কর্মকর্তারা
২৫ অক্টোবর ২০২১রোববার বিকাল থেকে ১৫ জন শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারী মিলিয়ে বেশ কয়েকজন অবরুদ্ধ হয়ে আছেন একাডেমিক ভবনে৷ শিক্ষার্থীরা ভবনের প্রধান ফটকে তালা দিয়ে সামনে অপেক্ষা করছে তারা৷ বিকাল সাড়ে ৪টা থেকে এ অবস্থা চলছে বলে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থী সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য ও বাংলাদেশ অধ্যায়ন বিভাগের প্রথম বর্ষের ছাত্র জাহিদুর রহমান শিরাত জানিয়েছেন ডয়চে ভেলের কন্টেন্ট পার্টনার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে৷তিনি বলেন, "মহাসড়ক অবরোধ থেকে ক্যাম্পাসে ফিরে আমরা ঘোষণা দিয়েছিলাম, ২৪ ঘণ্টার মধ্যে অভিযুক্ত শিক্ষিকা ফারহানা ইয়াসমিন বাতেনকে স্থায়ী বরখাস্ত না করা হলে, আমরা আবারও মহাসড়ক অবরোধ করব৷ এ অবস্থায় ক্যাম্পাসে অবস্থান কর্মসূচি চলাকালে বিকালে রেজিস্ট্রার, প্রক্টর, শিক্ষক এবং কর্মকর্তা-কর্মচারী মিলিয়ে প্রায় ৩০/৩৫ জন ক্যাম্পাসে আসেন৷ আমাদের সাথে ফলপ্রসূ আলোচনা না হওয়ায় আমরা ভবনের গেটে তালা দিয়ে সকলকে ভবনের ভিতরে অবরুদ্ধ করেছি৷''
বিশ্ববিদ্যালয়ের রবীন্দ্র অধ্যয়ন বিভাগের চেয়ারম্যান লায়লা ফেরদৌস হিমেল আটক অবস্থায় বিডিনিউজ বলেন "আমরা ছাত্রদের বোঝাতে এসেছিলাম৷ আর তারা আমাদের অবরুদ্ধ করে রেখেছে, মোট ৩৪ জনকে অবরুদ্ধ করেছিল, রাত সাড়ে ১১টার দিকে ছাত্রদের সংখ্যা অনেকটা কমে এলে পেছনের গেইট দিয়ে ১২ জন কর্মকর্তা-কর্মচারী চলে গেছে৷ রেজিস্ট্রার, প্রক্টর ও শিক্ষকসহ ১৫ জন এবং কর্মকর্তা-কর্মচারী মিলে মোট ২২ জন এখন অবরুদ্ধ অবস্থায় রয়েছি৷''
বিডিনিউজকে লায়লা ফেরদৌস জানান, প্রশাসনের কার্যক্রমে শিক্ষার্থীদের ‘আস্থা নেই' বলে শিক্ষার্থীরা তাদের জানিয়েছেন৷
এদিকে শিক্ষার্থী জাহিদুর বলেন, "বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ইচ্ছা করলে দ্রুত ভার্চুয়ালি সিন্ডিকেট সভা করে অভিযুক্ত শিক্ষিকাকে স্থায়ী বরখাস্তের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে পারেন৷ কিন্তু তারা সে উদ্যোগ নিচ্ছেন না৷ এ অবস্থায় ভারপ্রাপ্ত ভিসি যদি এখানে আসেন, তাকেও অবরুদ্ধ করে আমরা একই দাবি করব৷ টানা ২৭ দিন ধরে এ বিষয়টি নিয়ে আন্দোলনে আছি, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে সেটা বুঝতে হবে৷''
২৬ সেপ্টেম্বর রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য ও বাংলাদেশ অধ্যয়ন বিভাগের ১৬জন শিক্ষার্থীর মাথার চুল কেটে দেওয়ার অভিযোগ উঠে বিভাগের চেয়ারম্যান ও সহকারী প্রক্টর ফারহানা ইয়াসমিন বাতেনের বিরুদ্ধে৷ যার প্রতিক্রিয়ায় পরদিন ঘুমের ওষুধ খেয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা করেন শিক্ষার্থী নাজমুল হাসান তুহিন৷
এবং শিক্ষার্থীরা ২৮ সেপ্টেম্বর পরীক্ষা বর্জন করে একাডেমিক এবং প্রশাসনিক ভবনে তাল ঝুলিয়ে বিক্ষোভ শুরু করে৷সে দিনই বিশ্ববিদ্যালয়ে সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য ও বাংলাদেশ অধ্যয়ন বিভাগের চেয়ারম্যান, সহকারী প্রক্টর ও সিন্ডিকেট সদস্য পদ থেকে ফারহানা বাতেন পদত্যাগ করেন৷
ঘটনা তদন্ত করতে পাঁচ সদস্যের একটি কমিটি গঠন করা হয়৷ এবং ৩০ সেপ্টেম্বর ফারহানা ইয়াসমিন বাতেনকে সাময়িক বরখাস্ত করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন৷ কিন্তু শিক্ষককে স্থায়ী বরখাস্তের দাবিতে শিক্ষার্থীদের৷ একপর্যায়ে শিক্ষামন্ত্রীর আশ্বাসে আন্দোলন থেকে সরে গিয়েছিল শিক্ষার্থীরা৷
গত ২২ অক্টোবর তদন্ত কমিটি প্রতিবেদন দেওয়ার পর বিশ্ববিদ্যালয় সিন্ডিকেট ফারহানা ইয়াসমিনকে স্থায়ীভাবে অপসারণের সিদ্ধান্ত না নেওয়ায় শনিবার থেকে শিক্ষার্থীরা আবারও আন্দোলন শুরু করে৷
রোববার বেলা সাড়ে ১২টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কর্মকর্তাদের উপস্থিতিতে একাডেমিক ভবনের সামনে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের মধ্যে দুজন পূর্ব ঘোষণা অনুযায়ী আত্মহত্যার চেষ্টায় কীটনাশক পান করতে গেলে তাদের হাসপাতালে নেওয়া হয়৷
এরপরে বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা সিরাজগঞ্জ-নগরবাড়ি মহাসড়কের বিসিক মোড়ে সড়ক অবরোধ করলে মহাসড়কের দু'পাশে দীর্ঘ যানজট লেগে যায়৷ পরে শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাসে ফিরে এসে একাডেমিক ভবনের সামনে অবস্থান নিয়ে তাদের শিক্ষক-কর্মকর্তাদের তালা দিয়ে আটকে রাখে৷
এনএস/কেএম (বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম)