1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

সাফল্য চান লুৎফুন নেসা

৩০ মে ২০১২

পাকিস্তানি সেনাদের নৃশংস গণহত্যা এবং তাদের বাঙালি দোসরদের নির্মমতা এখনও শিহরিত করে সাহসী নারী মুক্তিযোদ্ধা ডা. লুৎফুন নেসাকে৷ যুদ্ধাপরাধীদের বিচার প্রক্রিয়া সফল হোক সেটিই একান্ত কামনা তাঁর৷

https://p.dw.com/p/154Fe
ছবি: privat

‘‘স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় আমি তখন মুন্সীগঞ্জে আহত মুক্তিযোদ্ধাদের চিকিৎসা সেবা দিচ্ছিলাম৷ এসময় আমার ফুফাতো ভাইকে বেয়নেট দিয়ে খুঁচিয়ে পাক সেনারা পানিতে ফেলে দিল৷ তার লাশটা পর্যন্ত খুঁজে পাওয়া গেল না৷ স্রোতে ভেসে চলে গেছে৷ আমরাও পিছিয়ে যাইনি৷ তার প্রতিশোধ হিসেবে পরবর্তীতে ওদেরকে ধরে, আমরা বলেছি, তোমরা আমাদের সাথে যতো খারাপ আচরণ করেছো, আমরা ততোটা করবো না৷ তবে তোমাদের মাফ করতেও পারবো না৷  আমি নিজের হাতে কিছু করিনি৷ তবে আমার সামনেই আমার বাবা, অ্যাডভোকেট মুজিবুর রহমান এবং আরো অনেকে ছিল - তারা ওদেরকে চরম শাস্তি দিয়েছে৷ ওদেরকেও সেভাবে পানিতে ফেলে দিয়েছে৷ এসব ঘটনা এখনও আমার চোখের সামনে ভাসে৷'' এভাবেই মুক্তিযুদ্ধের করুণ স্মৃতি ডয়চে ভেলের কাছে তুলে ধরলেন নারী মুক্তিযোদ্ধা ও বিশিষ্ট চিকিৎসক ডা. লুৎফুন নেসা৷

এছাড়া তাঁর স্মৃতিপটে একইভাবে বেসে ওঠে ঢাকার কয়েকটি জায়গায় পাক সেনাদের গণহত্যার নৃশংসতা৷ তাঁর ভাষায়, ‘‘জিনজিরায় যখন আক্রমণ হলো, সেখানে আব্বা তো ছিল৷ কিন্তু তাঁরা চলে যাওয়ার পর আমি যখন জিনজিরা পার হচ্ছি তখন দেখি কীভাবে মানুষ পড়ে রয়েছে, তার উপর দিয়ে পালিয়ে আমাদের যেতে হয়েছে৷ ডিঙিয়ে ডিঙিয়ে গিয়ে আমরা পার হয়ে প্রধান সড়কে গিয়েছি৷ সেখানে গিয়ে আমার অন্য ভাই-বোনদের সাথে মিলিত হয়েছি৷ একজন চিকিৎসক হিসেবে আমি অনেক মরা মানুষ, জ্যন্ত মানুষ নিয়ে কারবার করেছি৷ কিন্তু এভাবে লাশ মাড়িয়ে যাওয়ার ঘটনা আমাকে খুব নাড়া দেয়৷ এছাড়া আমাদের বাড়িটা ছিল বিডিআর সদর দপ্তরের কাছাকাছি৷ ফলে আমি এসএম হলের সামনেও মানুষদের গুলি করে মারতে দেখেছি৷ এগুলো ঘটনা আমার চোখে এখনও ভাসে৷''

Bangladesch Freiheitskämpferin Dr Lutfun Nessa
১৯৭১ সালে ডা. লুৎফুন নেসাছবি: privat

দেশমাতৃকার স্বাধীনতার জন্য চরম আত্মত্যাগের পরও দেশপ্রেমী বীর সাহসী নারীরা যথাযোগ্য মর্যাদা পাননি বলে আক্ষেপ ঝরে পড়েছে মুক্তিযোদ্ধা ডা. লুৎফুন নেসার কণ্ঠে৷ তিনি বলেন, ‘‘আমরা বাবা, মা, ভাই, বোন সবার থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছিলাম৷ শেষ পর্যন্ত দেশ স্বাধীন হওয়ার পর আবারও আমরা একত্রিত হতে পেরেছি৷ কিন্তু যুদ্ধে মারা গেছে এমন অনেক মায়ের ছেলে, অনেক বোনের স্বামী আর তো ফিরে আসেনি৷ তাদের জন্য মনটা খুব কাঁদে৷ অথচ তাদের আত্মত্যাগের জন্য উপযুক্ত সম্মান দিতে হলে, আমাদের মর্যাদা দিতে হলে, আমাদের সেভাবে সম্মান দিতে হতো৷ অথচ আমি কোন খেতাব পাইনি৷ সত্যি কথা বলতে কি - মুক্তিযুদ্ধের সময় এতো বিপুল সংখ্যক মেয়েরা কাজ করেছে, কিন্তু শুধু ডা. সিতারা রহমান এবং তারামন বিবিকে খেতাব দেওয়া হয়েছে৷''

যুদ্ধাপরাধীদের বিচার প্রক্রিয়া সম্পর্কে ডা. লুৎফুন নেসা বলেন, ‘‘যুদ্ধাপরাধীদের বিচার হোক, তা আমি একান্তভাবে চাই৷ কারণ আমি দেখেছি ওরা কীভাবে যুদ্ধের সময় মা-বোনদের ইজ্জত লুটেছে৷ আমি যেখানে ছিলাম মুন্সীগঞ্জে সেখানে আমি দেখেছি, অনেক বাঙালি যারা মুসলিম লিগ করতো তারা এ কাজে জড়িত ছিল৷ পাকিস্তানিরা তো কিছু চিনতো না৷ কিন্তু এই বাঙালিরা নারীদেরকে নিয়ে গিয়ে পাকিস্তানিদের ভেগ দিতো৷ মেয়েদের কোন ইজ্জত ছিল না, সম্মান ছিল না তাদের কাছে৷ এটার যে একটা বিচার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে৷ এটা সফল হোক সেটা আমি চাই মনে-প্রাণে৷'' 

স্বাধীনতা যুদ্ধে সাহসী ভূমিকা রাখার জন্য জাতীয় মহিলা সংস্থা, সাংস্কৃতিক সংসদ এবং জগন্নাথ কলেজ থেকে সংবর্ধনা পেয়েছেন মানবসেবায় রত বীর নারী ডা. লুৎফুন নেসা৷ স্বাধীনতার ৪১ বছরে বাংলাদেশের অর্জন সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘‘দেশ স্বাধীন হওয়ার পর থেকেই বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এবং পরে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ যখনই দেশের উন্নয়নের জন্য কাজ শুরু করেছে তখনই স্বাধীনতা বিরোধী শক্তি নানাভাবে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে৷ এমনকি তারা ক্ষমতায় এসে বাংলাদেশের জন্মের ইতিহাসকেই পাল্টে দেওয়ার অপচেষ্টা করেছে৷ তবে বর্তমান প্রধানমন্ত্রীকে সাধুবাদ জানাই যে, তাঁর বলিষ্ঠ নেতৃত্বে দেশে তথ্য প্রযুক্তির পরিষেবা ব্যাপকভাবে সম্প্রসারিত হয়েছে এবং নারীদের স্বাবলম্বী করার যে প্রচেষ্টা সেটা অত্যন্ত প্রশংসনীয়৷''

প্রতিবেদন: হোসাইন আব্দুল হাই

সম্পাদনা: দেবারতি গুহ

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য