মোদীকে চিঠি লিখেছেন বাংলাদেশের এক যৌনদাসী
৪ মে ২০১৭কিন্তু অরুণার মুক্তি মিললেও যে ভারতীয় রুপি তিনি জমিয়েছিলেন তা আর মিললো না৷ দুর্নীতি দমনের লক্ষ্যে গত নভেম্বরে পাঁচশ’ এবং এক হাজার রুপির নোট বাতিল করেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী৷ অরুণার জমিয়ে রাখা নোটগুলোও বাতিল হয়ে গেছে তখন৷ যদিও মোদীর উদ্দেশ্য ছিল কালো টাকা সাদা করা, বিশেষ করে যেসব দুর্নীতিবাজ টাকা জমিয়ে রেখেছিল তাদের টাকাবাজারে ফেরত আনা৷ কিন্তু নিষিদ্ধের ফলে অরুণার মতো অনেক সাধারণ মানুষও হয়েছেন ভুক্তভোগী৷ তারা এখন হয়ে পড়েছেন আরো অসহায়৷
অরুণা অবশ্য খুব বেশি জমাতে পারেননি৷ সাকুল্যে জমিয়েছিলেন দশ হাজার রুপি বা দেড়শ’ মার্কিন ডলার৷ বেঙ্গালুরুর যে যৌনপল্লীতে তাঁকে বেচে দেয়া হয়েছিল, সেই পল্লীর মালিকের চোখ এড়িয়ে প্যান্টের পকেটে রেখে এই টাকা জমিয়েছিলেন তিনি৷ চেয়েছিলেন, দেশে ফিরে এই টাকা দেখিয়ে বলবেন, ভারতে পোশাক শ্রমিকের কাজ করতেন তিনি৷
করুণা স্বেচ্ছায় যৌনকর্মীর পেশায় আসেননি৷ দেশে কাজ করতেন পোশাক শ্রমিক হিসেবে৷ তাঁর এক সহকর্মী তখন আরো বেশি বেতনে একই কাজ করানোর লোভ দেখিয়ে তাঁকে ভারতে নিয়ে যায়৷ এরপর বিক্রি করে দেয় বেঙ্গালুরুর এক যৌনপল্লীতে৷ সেখানে দেড় বছর রাখার পর তাঁকে পুনরায় বিক্রি করা হয় পুনের আরেক পতিতালয়ে৷ তবে সেই পতিতালয়ে যাবার একদিন পর গত ডিসেম্বরে তাঁকে উদ্ধার করে মুম্বইভিত্তিক সংগঠন ‘রেসকিউ ফাউন্ডেশন’৷ যে ট্রাঙ্কে টাকাগুলো ছিল সেটা পুলিশ পরবর্তীতে উদ্ধার করে৷ আর ততদিনে এসব নোট ফেরত দেয়ার সুযোগ শেষ হয়ে যায়৷
সেই ফাউন্ডেশনের সহায়তায় মোদীর উদ্দেশ্যে একটি চিঠি লিখেছেন তিনি, যা ফেসবুক এবং টুইটারে প্রকাশ করা হয়েছে৷ অরুণা তাতে লিখেছেন, ‘‘আমি পতিতালয়ের রক্ষকের চোখ এড়িয়ে পকেটে করে টাকা জমাতাম, যাতে তা সঙ্গে করে দেশে নিয়ে যেতে পারি৷ আমি অনেক কষ্টের বিনিময়ে এই অর্থ উপার্জন করেছি৷ এই অর্থ আমার কাছে অনেক গুরুত্বপূর্ণ৷ দয়া করে তা বিনিময়ের সুযোগ করে দিন৷’’
অরুণার চিঠির জবাবে মোদী অবশ্য কিছু বলেননি৷ তাঁর কার্যালয় থেকেও এই বিষয়ে কোনো মন্তব্য করা হয়নি৷ তবে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এই চিঠি প্রকাশের পর ভারতের কেউ কেউ অরুণাকে অর্থ সাহায্যের আগ্রহ প্রকাশ করেছে৷ সব ঠিক থাকলে আগামী ১৫ মে দেশের উদ্দেশ্যে যাত্রা করবেন বাংলাদেশের এই মেয়ে৷
এআই/এসিবি (থমসন রয়টার্স ফাউন্ডেশন)
প্রিয় পাঠক, আপনি কিছু বলতে চাইলে লিখুন নীচে মন্তব্যের ঘরে...