মুসলিম বিদ্রোহীদের কারণে ‘আতঙ্কে' থাই সেনারা
৭ নভেম্বর ২০১৮থাইল্যান্ডের দক্ষিণাঞ্চলের সংঘাতপ্রবণ এলাকার এক চেকপয়েন্টের কাছে ছবি তুলছিলেন এক সাংবাদিক৷ তাঁকে থামাতে দ্রুত সেখানে হাজির হন এক নিরাপত্তারক্ষী৷ সাংবাদিকের পরিচয় জানার পর অবশ্য শান্ত হন নিরাপত্তারক্ষী৷ চেকপয়েন্টে ঝুলিয়ে রাখা বিচ্ছিন্নতাবাদীদের ছবির দিকে ইঙ্গিত করে তিনি বলেন, ‘‘বিদ্রোহীরা যে ক্রমাগত কতটা নৃশংসতা চালাচ্ছে, তা আমার পক্ষে ভাষায় প্রকাশ করা কঠিন৷''
তিনি বলেন, ‘‘রাজার মৃত্যুর পর কিছুদিন সবকিছু শান্ত ছিল৷ কিন্তু এখন আবার সহিংসতা শুরু হয়েছে৷''
আরেক চেকপোস্টে থাকা এক সেনাকর্মকর্তা ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘আমরা সার্বক্ষণিক আতঙ্কে থাকি৷ সবচেয়ে ভয়াবহ ব্যাপার হচ্ছে, আমরা জানি না কখন এবং কোথায় বিচ্ছিন্নতাবাদীরা পরবর্তী হামলা চালাবে৷ তারা বিশেষ কোনো পোশাক বা প্রতীক ব্যবহার না করায় সাধারণ জনতা থেকে তাদের আলাদা করা এক দুরূহ ব্যাপার৷''
মালয়েশিয়ার সীমান্ত সংলগ্ন থাইল্যান্ডের দক্ষিণাঞ্চলে গত কয়েকমাস ধরে প্রায় প্রতিদিনই বিচ্ছিন্নভাবে বোমা বিস্ফোরণ এবং গোলাগুলির ঘটনা ঘটছে৷ বিচ্ছিন্নতাবাদীদের মূল লক্ষ্য সেনা এবং নিরাপত্তা সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা৷ সংশ্লিষ্ট অঞ্চলে অস্থিরতার দিকে নজর রাখা বেসরকারি উন্নয়নসংস্থা ‘ডিপ সাউথ ওয়াচ' জানিয়েছে, সাম্প্রতিক মাসগুলোতে সহিংসতার শিকারের সংখ্যা বেড়েছে৷
পাটানি, ইয়ালা এবং নারাথওয়াত রাজ্যকেথাইল্যান্ডের ‘ডিপ সাউথ' হিসেবে বিবেচনা করা হয়৷বৌদ্ধপ্রধান দেশটির এই রাজ্যগুলোতে মুসলমানদের বসবাস বেশি৷ গত দুই দশক ধরে বিচ্ছিন্নতাবাদীদের দাবি হচ্ছে, এই রাজ্যগুলোকে স্বায়ত্তশাসনের অধিকার দিতে হবে৷ কিন্তু থাই সরকার সেই দাবি মেনে নেয়নি৷ বরং দেশটির সেনাবাহিনী বিচ্ছিন্নতাবাদীদের দমনে কড়া পদক্ষেপ নিয়েছে৷
উল্লেখ্য, ২০০৪ সাল থেকে সংশ্লিষ্ট অঞ্চলে নিয়মিত সহিংস ঘটনা ঘটতে শুরু করে৷ আর তখন থেকে এখন অবধি বিচ্ছিন্নতাবাদী এবং থাই সরকারের মধ্যে সংঘাতে প্রাণ হারিয়েছেন সাত হাজারের মতো মানুষ৷ আহত হয়েছেন চৌদ্দ হাজারের মতো৷ মাঝখানে সহিংসতা কমলেও অস্থির পরিস্থিতির অবসানের কোনো লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না৷ বরং যে-কোনো সময় পরিস্থিতি চরম আকার ধারণ করতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে৷
প্রতিবেদন: জুলিয়ান কুং (ব্যাংকক) / এআই