1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

মুক্তিযুদ্ধের পাঠ বইয়ে নয়, বাস্তবে

হারুন উর রশীদ স্বপন ঢাকা
২৬ মার্চ ২০১৮

বই থেকে নয়, সরাসরি মুক্তিযুদ্ধকে জানা এবং অনুভব করার এক ব্যতিক্রমী উদ্যোগ নিয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়৷ উদ্যোগের নাম দেয়া হয়েছে ‘গণহত্যার চলমান জাদুঘর’৷ শিক্ষার্থীরা সরাসরি গণহত্যা ও মুক্তিযুদ্ধের জায়গাগুলো দেখছেন সেখানে৷

https://p.dw.com/p/2uxuW
ছবি: Bangla Tribune

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘সেন্টার ফর জেনোসাইড স্টাডিজ’ বিভাগ খোলা হয় ২০১৪ সালে৷ আর সেই বিভাগের প্রকল্প ‘চলমান জাদুঘর-৭১’-এর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও জেনোসাইড’-এর কাজ শুরু হয় ১৬ ফেব্রুয়ারি৷ উদ্বোধন করেন সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর৷

প্রতি শুক্রবার সকাল ১০টা থেকে ১২টা– এই সময়ের মধ্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে মুক্তিযদ্ধের স্মৃতিময় স্থান ও স্থপনাগুলো দেখানো হয়৷ এই সুযোগ পাচ্ছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রথম বর্ষে ভর্তি হওয়া শিক্ষার্থীরা৷ এক বিভাগের শিক্ষার্থীদের একদিন করে সুযোগ দেয়া হচ্ছে৷ এরইমধ্যে এটা ব্যাপক সাড়া জাগিয়েছে৷ শিক্ষার্থীরা দেখার সুযোগ পাচ্ছেন মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিময় বটতলা, কলা ভবন, শহীদ বুদ্ধিজীবীদের কবরস্থান, শহীদ সার্জেন্ট জহুরুল হক হল, জগন্নাথ হল, কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার, সোহরাওয়ার্দী উদ্যান, রমনা কালীমন্দির ও মধুর ক্যান্টিনসহ আরো কয়েকটি জায়গা৷

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছিল গণহত্যার এপিসেন্টার: অজয় দাসগুপ্ত

শিক্ষার্থীদের সঙ্গে থাকেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যলয়ের মুক্তিযুদ্ধের গবেষক, গণহত্যার প্রত্যক্ষদর্শী, সাংবাদিক অজয় দাসগুপ্ত৷ তিনি ২৫ মার্চ রাতে জগন্নাথ হলেই ছিলেন৷ দেশ স্বাধীন হওয়ার পর তিনি ১৯৭২ সালে জগন্নাথ হলের সাধারণ সম্পাদক হন৷ তিনি স্থাপনা এবং অন্যান্য জায়গাগুলো দেখানোর সঙ্গে সঙ্গে সেই সময়ের ঘটনাও বর্ণনা করেন একজন কথকের মতো৷

অজয় দাসগুপ্ত ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় স্বাধীনতা আন্দোলনসহ অনেক গণতান্ত্রিক আন্দোলনের সুতিকাগার৷ আর ২৫ মার্চ গণহত্যা এখান থেকেই শুরু হয়েছিল৷ এখানে আমরা ৬০টি জায়গা চিহ্নিত করেছি যা মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিবিজড়িত৷ আরো অনেক জায়গা এখনো চিহ্নিত করা হয়নি৷ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছিল গণহত্যার এপিসেন্টার৷ এখানে এমন কোনো জায়গা নেই যেখানে স্বাধীনতার জন্য রক্ত ঝরেনি৷’’

তিনি বলেন, ‘‘৫০ বছর আগে আমি এই বিশ্ববিদ্যালয়েল ছাত্র ছিলাম৷ আমি গণহত্যার প্রত্যক্ষদর্শী৷ আমরা চাই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এই প্রজন্ম মুক্তিযুদ্ধে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আত্মত্যাগের গৌরবোজ্জ্বল ইতিহাস সরাসরি জানুক, বুঝুক, অনুভব করুক৷’’

এখানে মুক্তিযুদ্ধ এবং গণহত্যার ওপর নিবিড় গবেষণা হয়: সালমা সোনিয়া

‘সেন্টার ফর জোনোসাইড স্টাডিজ’-এর রিসার্স অ্যাসোসিয়েট সালমা সোনিয়া ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘এখানে ডিপ্লোমা এবং পোস্ট গ্রাজুয়েট কোর্স আছে৷ মুক্তিযুদ্ধ এবং গণহত্যার ওপর নিবিড় গবেষণা হয়৷ সারাদেশেই আমাদের নানা ধরনের কার্যক্রম আছে৷ আর এবছর থেকে আমরা শুরু করেছি ওয়াকিং মিউজিয়াম, যার আওতায় আমরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সরসরি মুক্তিযুদ্ধ এবং গণহত্যার জায়গাগুলোতে নিয়ে যাচ্ছি৷’’

তিনি আরেক প্রশ্নের জবাবে বলেন, ‘‘মুক্তিযুদ্ধে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণহত্যা নজিরবিহীন৷ আমরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যলয়ে মুক্তিযুদ্ধের সঙ্গে যাঁরা জড়িত ছিলেন, যাঁরা প্রত্যক্ষদর্শী এবং যাঁরা ঘটনার শিকার হয়ে আজো বেঁচে আছেন, তাঁদের দিয়ে ঘটনাস্থলে  শিক্ষার্থীদের সামনে মুক্তিযুদ্ধকে তুলে ধরছি৷’’

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় যে একটা জাতির জন্ম দিয়েছে তা এখন বুঝতে পারছি: আদনান শাহীন

যেসব শিক্ষার্থী এরইমধ্যে ওয়াকিং মিউজিয়ামের মাধ্যমে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিময় জায়গা এবং স্থাপনা দেখেছেন, তাঁরা এর প্রয়োজনীয়তা উপলব্ধি করছেন ভালোভাবেই৷ তাঁদেরই একজন ক্রিমিনোলজি বিভাগের প্রথম বর্ষের ছাত্র এম এস আদনান শাহীন৷ তিনি ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘আমরা বইয়ের ইতিহাস জানি৷ কিন্তু এখন সরাসরি ইতিহাসের কাছে৷ এই দু'য়ের মধ্যে অনেক পার্থক্য৷ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় যে একটা জাতির জন্ম দিয়েছে তা এখন বুঝতে পারছি৷ আমরা প্রায়ই মধুর ক্যান্টিনে আসি৷ কিন্তু মধুদা'র আত্মত্যাগ যে কত বড় তা জানতাম না৷ জানতাম না যে, মধুদা পাকিস্তানি সেনাদের তথ্য দিতে অস্বীকার করায় তাঁকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়েছে৷’’

তিনি বলেন, ‘‘জগন্নাথ হলে যাই৷ কিন্তু জানতাম না সেখানে কতটা নৃশংসভাবে গণহত্যা চালানো হয়েছে৷ আমরা জানতে পারছি ২৫ মার্চ রাতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৯৫ জন শহিদের সম্পর্কে৷’’

ওই হলে যে মুক্তিযুদ্ধের সময় এতকিছু ঘটেছে, তা আমার জানা ছিল না: শিপন মিয়া

একই বিভাগের আরেকজন ছাত্র শিপন মিয়া ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘আমি জহুরুল হক হলে থাকি৷ কিন্তু ওই হলে (তখন ইকবাল হল) যে মুক্তিযুদ্ধের সময় এতকিছু ঘটেছে, তা আমার জানা ছিল না৷ আমি জানতাম না ২৫ মার্চ রাতে ওই হলে আক্রমণ এবং গণহত্যার কথা৷ বিশ্ববিদ্যালয়ের অনেক এলাকা দিয়ে হাঁটি৷ কিন্তু সেই সব এলাকাই যে মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিবিজড়িত তা এখন জানলাম৷ আর আমাদের সঙ্গে যিনি থেকে ঘটনা বর্ণনা করেন, তিনি যেন আমাদের সেই একাত্তরেই ফিরিয়ে নিয়ে যান৷’’

শিক্ষার্থীরা মনে করেন, তাঁদের এখন মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস জানার প্রতি আগ্রহ বাড়ছে৷ তাই তাঁরা চান এই চলমান জাদুঘর যেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়েই সীমাবদ্ধ না থাকে৷ এটা সারাদেশকে কেন্দ্র করেই হতে পারে বলে তাঁরা মনে করেন৷

‘সেন্টার ফর জেনোসাইড স্টাডিজ’ জানিয়েছে, এটা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় দিয়ে শুরু হলেও সারাদেশ নিয়েও তাদের পরিকল্পনা আছে৷ সেটা কিভাবে করা হবে, কাদের সম্পৃক্ত করা হবে, তা নিয়ে কাজ চলছে৷

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে মুক্তিযুদ্ধের স্থাপনা