1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

‘মিয়ানমার সীমান্তে বাংলাদেশ ‘স্ট্রং' অবস্থান নিয়েছে’

Sanjiv Burman২১ সেপ্টেম্বর ২০২২

পররাষ্ট্রমন্ত্রী একে আব্দুল মোমেন এখনও বিশ্বাস করতে চান, মিয়ানমারের গোলা ‘ভুলক্রমে' বাংলাদেশে এসে পড়েছে এবং ভবিষ্যতে আরও সতর্ক থাকার যে অঙ্গীকার ইয়াঙ্গন করেছে, তা তারা পূরণ করবে৷

https://p.dw.com/p/4H8T8
Bangladesch Außenminister Abdul Momen
বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন (ফাইল ফটো)ছবি: Abdullah Al Momin/bdnews24.com

বাংলাদেশ এ বিষয়ে যথেষ্ট শক্ত অবস্থান নিচ্ছে কিনা, সেই প্রশ্নের উত্তরে পাল্টা প্রশ্ন হেনে এক সাংবাদিককে মন্ত্রী বলেছেন, তিনি যুদ্ধ বাধাতে চান কি না৷

তবে নতুন করে কোনো রোহিঙ্গা যাতে বাংলাদেশে ঢুকতে না পারে, সে বিষয়ে বাংলাদেশের ‘স্ট্রং' অবস্থানের কথা আবারও জানিয়েছেন মোমনে৷ জাতিসংঘ অধিবেশন উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রীর সফরসঙ্গী হিসেবে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এখন আছেন নিউ ইয়র্কে৷ সেখানেই মঙ্গলবার রাতে এক ব্রিফিংয়ে মিয়ানমারের প্রসঙ্গ আসে৷

জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক হাই কমিশনার ফিলিপ্পো গ্র্যান্ডি এদিন প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক করেন৷ সেখানে রোহিঙ্গা সঙ্কট নিয়ে আলোচনা হয়৷

যুক্তরাষ্ট্র থেকে প্রকাশিত একটি বাংলা সাপ্তাহিকের একজন সাংবাদিক পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে বলেন, মিয়ানমারের গোলা বাংলাদেশে এসে পড়ছে এবং প্রাণহানি হচ্ছে; ঢাকায় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় মিয়ানমারের রাষ্ট্রদূতকে তলব করে প্রতিবাদ জানাচ্ছে৷ বাংলাদেশ এ বিষয়টি জাতিসংঘে তুলবে কি না, এ বিসয়ে সরকারের ‘স্ট্যান্ড আরো স্ট্রং হওয়া' উচিত কিনা৷

পররাষ্ট্রমন্ত্রী প্রথমে সেই সাংবাদিককে পাল্টা প্রশ্ন করে: ‘আপনি কি ধরনের স্ট্রং মনে করেন? কি হইলে স্ট্রং মনে করেন?' সেই সাংবাদিক বলেন, ‘বাংলাদেশের একটা সেনাবাহিনী আছে...' জবাবে পররাষ্ট্রমন্ত্রী তাকে বলেন, ‘আপনি কি যুদ্ধ বাধাতে চান?'

সাংবাদিক উত্তরে বলেন, ‘বাংলাদেশের স্ট্যান্ডটা আমি জানতে চাচ্ছি৷' পররাষ্ট্রমন্ত্রী তখন বলেন, ‘এই যে সংঘাত হচ্ছে, এটা মিয়ানমারের সংঘাত৷ তাদের এখানে দুই দল মারামারি করছে আর যেহেতু অনেকগুলো লোক রোহিঙ্গা, এই সব লোক বর্ডার এলাকায়, নো ম্যানস ল্যান্ডে৷ বর্ডার এলাকার নো ম্যানস ল্যান্ডে থাকে৷ তার ফলে তারা সেখানে এই মিয়ানমারের ঠিক সংঘাতে… সময়ে সময়ে সময়ে আপনার কিছু গোলাগুলি…৷''

মোমেন বলেন, ‘‘আমাদের বাংলাদেশের ওই এলাকার বর্ডারটা খুব ক্রিসক্রস৷ কখনো এটা বোঝা মুশকিল৷ তো সেই কারণে ওরা বলেছে যে তারা টার্গেট করে আমাদের এখানে কিছু ফেলছে না৷ একটা দুটো যে পড়েছে, সেইগুলো বাই মিসটেক৷সুতরাং আমরা তাদের ডেকেছি৷ তারা আমাদের অঙ্গীকার করেছে যে তারা এ ব্যাপারে সর্তকতা অবলম্বন করবে৷''

২০১৭ সালের আগস্টে রাখাইন রাজ্যে মিয়ানমার সেনাবাহিনীর অভিযানের মুখে বাংলাদেশ সীমান্তে রোহিঙ্গাদের ঢল নামে৷ সব মিলিয়ে ১১ লাখের বেশি রোহিঙ্গার অধিকাংশই সীমান্ত জেলা কক্সবাজারে শরণার্থী শিবিরে রয়েছেন৷

তাদের ফেরত নিতে দুই দেশের সরকার চুক্তিবদ্ধ হলেও পাঁচ বছরেও প্রত্যাবাসন শুরু হয়নি, আর সেজন্য মিয়ানমারকেই দায়ী করে আসছেন আন্তর্জাতিক বিশেষজ্ঞরা৷

সোমবার ঢাকায় আসিয়ানভুক্ত দেশগুলোর কূটনীতিবিদ এবং মঙ্গলবার বাকি সব দেশের মিশন প্রধানদের ডেকে বাংলাদেশের অবস্থান তাদের সামনে তুলে ধরেন ভারপ্রাপ্ত পররাষ্ট্র সচিব অবসরপ্রাপ্ত রিয়ার অ্যাডমিরাল খুরশেদ আলম৷ পরে তিনি সাংবাদিকদের ব্রিফ করতে এলে সাংবাদিকরা প্রশ্ন করেছিলেন, মিয়ানমার ইচ্ছাকৃতভাবে এদিকে গোলা পাঠাচ্ছে কি-না৷

নৌবাহিনীর সাবেক এই কর্মকর্তা উত্তরে বলেন, ‘সেটা আমাদের ধর্তব্যের বিষয় না৷ ইচ্ছা করে করুক বা যা কিছুই করুক, আমরা যেটা বলি যে, এটা এই অঞ্চলকে অস্থিতিশীল করে ফেলবে৷ কাজেই মিয়ানমার সরকারকে এটা বুঝতে হবে, তাতমাদোকে (মিয়ানমারের সেনাবাহিনী) বুঝতে হবে যে, তারা যেটা করতেছে…''

এদিকে ইয়াঙ্গনে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মনজুরুল করিম খান চৌধুরীকে ডেকে মিয়ানমারের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় তাদের ব্যাখ্যা তার সামনে তুলে ধরে সোমবার৷

সেখানে সীমান্তে মর্টার হামলার দায় আরাকান আর্মি ও আরাকান রোহিঙ্গা স্যালভেশন আর্মির (আরসা) ওপর চাপানো হয়৷ পাশাপাশি বাংলাদেশের ভেতরে আরাকান আর্মি ও আরসার ‘ঘাঁটি' থাকার অভিযোগ তুলে সেগুলোর তদন্ত ও অপসারণে দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়ার কথা বলা হয় মিয়ানমারের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তরফ থেকে৷

এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে খুরশেদ আলম বলেন, ‘‘এটা মিয়ানমার আজকের কথা না, তারা প্রথম থেকেই এ ধরনের কথা বলে আসতেছে৷ কিন্তু আমরা দৃঢ়ভাবে বলেছি, আমাদের প্রধানমন্ত্রীর যে নীতি সন্ত্রাসবাদের বিষয়ে শূন্য সহিষ্ণুতা… আমরা সেই নীতিতে বিশ্বাস করি৷''

‘‘কাজেই অন্য দেশের কোনো রকম কাউকেই আমরা বাংলাদেশে স্থান দিয়ে মিয়ানমারকে অস্থিতিশীল করার অভিপ্রায় বাংলাদেশের কোনোদিন ছিল না, এখনো নাই, ভবিষ্যতেও থাকবে না৷''

মিয়ানমারে সংঘাতের কারণে নতুন করে কোনো রোহিঙ্গাকে ‘মানবিক কারণে' আশ্রয় দেওয়া হবে কিনা, আরেক সাংবাদিক তা নিউ ইয়র্কের ব্রিফিংয়ে জানতে চেয়েছিলৈন পররাষ্ট্র মন্ত্রীর কাছে৷ উত্তরে তিনি বলেন, ‘‘এবারে আমরা আপনার স্ট্রং পজিশন নিয়েছি৷ আমরা আমাদের এনটায়ার বর্ডারটা সিল করে দিয়েছি৷ যাতে একটাও রোহিঙ্গা আমাদের এদিকে ঢুকতে না পারে৷''

এরই মধ্যে কিছু রোহিঙ্গা চীন সীমান্তের দিকে যাচ্ছে জানিয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘‘আমাদের দিকে সাহস করে আসেনি৷ কারণ আমরা খুব শক্ত অবস্থান নিয়েছি যে এবারে আমরা একটা লোককেও…৷ কারণ যেগুলো আছে, ওইগুলোই এখনো ফেরত পাঠাতে পারি নাই৷ শুধু আশায় আশায় আছি৷ ইনশাল্লাহ ওরা ফেরত যাবে৷''

এপিবি/কেএম (বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম)