মিশরে পরিস্থিতি
৪ ফেব্রুয়ারি ২০১২বুধবার পোর্ট সইদে একটি ফুটবল ম্যাচের পর দাঙ্গায় ৭৪ জন মানুষ প্রাণ হারায়৷ কায়রো থেকে আগত আল-আহলি দল স্থানীয় দল আল-মাসরি'র কাছে অপ্রত্যাশিতভাবে ১-৩ গোলে হারার ফলেই শুধু ঘটনাটা সংঘটিত হয়েছে, এ'কথা এখন কেউই বিশ্বাস করে না৷ স্টেডিয়ামে পুলিশ ও রায়ট পুলিশের নিষ্ক্রিয়তাকেই অনেকে তাদের যোগসাজসের প্রমাণ হিসেবে দেখছে৷
ওদিকে রয়েছে, কায়রো থেকে আল-আহলি'র যে গোঁড়া ফ্যানরা পোর্ট সইদে এসেছিল, সেই ‘আল্ট্রা'-রাই মিশরের অভ্যুত্থানে নিরাপত্তা বাহিনীর সঙ্গে বিভিন্ন সংঘর্ষে লিপ্ত হয়েছিল৷ কাজেই কায়রোর আল-আহলি সমর্থকদের এখন ধারণা যে, বুধবার পোর্ট সইদে আল-মাসরি সমর্থকরা যখন মারমুখি হয়ে ওঠে, তখন পুলিশ জেনেশুনেই নিষ্ক্রিয় থাকে৷
মুবারকের পতনের পর মিশরের মানুষদের আকাশছোঁয়া আশার সিকির সিকিও পূরণ করতে পারেনি ফিল্ড মার্শাল হুসেইন তান্তাউয়ি'র সামরিক প্রশাসন৷ পোর্ট সইদের ঘটনা সেই অসন্তোষের বারুদে আগুন ছুঁইয়েছে৷ কাজেই মিশরীয় বিপ্লবের এই নতুন ঢেউ'এর দাবি: অবিলম্বে বেসামরিক সরকারের হাতে ক্ষমতা তুলে দিতে হবে৷ কিছু কিছু মহলের দাবি: প্রেসিডেন্ট নির্বাচনও জুন'এর পরিবর্তে এপ্রিলে করতে হবে৷
বুধবারের ফুটবল ট্র্যাজেডি যাবৎ গত তিন দিনের সহিংসতায় প্রাণ হারিয়েছে আরো ১১ জন৷ তাদের বেশ কয়েকজন নাকি ছররা বুলেটের আঘাতে নিহত হয়েছে, বলেছেন পথেঘাটে সৃষ্ট ফিল্ড হসপিটালের চিকিৎসকরা৷ তাহরির চত্বরের কাছে নিহত পাঁচজন বিক্ষোভকারীর বয়স ১৮ থেকে ২১'এর মধ্যে, বলে জানিয়েছে সরকারি মেনা সংবাদ সংস্থা৷ গত তিন দিনে আহতের সংখ্যা সব মিলিয়ে আড়াই হাজারের বেশি৷ হতাহতের খবর এসেছে সুয়েজ ও আলেক্সান্দ্রিয়া থেকে৷ এই ফুঁসে ওঠা, উছলে ওঠা বিক্ষোভের শিকড় যতো গভীরেই হোক না কেন, সুপ্রিম কাউন্সিল অফ দ্য আর্মড ফোর্সেস বা স্ক্যাফ দেখছে ‘‘বিদেশি এবং দেশি'' শত্রুদের হাত৷ স্ক্যাফ চায়, স্থিতিশীলতায় প্রত্যাবর্তন৷
মিশরীয় ফুটবল সমিতির হর্তাকর্তাদের স্কেপগোট করে এই সংকটের সামাল দেওয়া যায়নি৷ এছাড়া বিপদ ঘনাচ্ছে অন্যদিকে: আরব বসন্তের তোলপাড়ের পর মিশরের পর্যটন শিল্প আবার কিছুটা পায়ে উঠে দাঁড়াতে চলেছিল৷ কিন্তু শুক্রবার সাইনেয়াই'তে দু'জন মার্কিন পর্যটক ও তাদের গাইডকে স্বল্পকালের জন্য অপহরণ করে, পরে আবার ছেড়ে দেওয়া হয়৷ সে খবরটা হবু পর্যটকদের কাছে অন্যরকম গুরুত্ব পেতে পারে৷
প্রতিবেদন: অরুণ শঙ্কর চৌধুরী
সম্পাদনা: হোসাইন আব্দুল হাই