1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

মানবতা সব ধর্মের ঊর্ধ্বে

সামিল শামস/এপিবি১৬ জুলাই ২০১৬

তিনি পরিচিত পাকিস্তানের ‘মাদার টেরেসা' হিসেবে৷ হ্যাঁ মাদার টেরেসার মতোই আর্তের জন্য জীবন উৎসর্গ করেছেন তিনি৷ পাকিস্তানের প্রখ্যাত সমাজসেবী আব্দুল সাত্তার ইদি ৮৮ বছর বয়সে মারা গেছেন গত ৮ জুলাই৷

https://p.dw.com/p/1JOjJ
পাকিস্তানের প্রখ্যাত সমাজসেবী আব্দুল সাত্তার ইদি
ছবি: DW/U. Fatima

এমন একটি দেশে তিনি জীবন কাটিয়েছেন, যে দেশ ধর্মীয় অসহিষ্ণুতা এবং সহিংসতার ভাগাড় হিসেবেই বেশি পরিচিত৷ আর সেখানে মানবতা আর অসাম্প্রদায়িকতার প্রদীপ জ্বালিয়েছিলেন আব্দুল সাত্তার ইদি৷ পাকিস্তানের দরিদ্র মানুষের জন্য সারাটা জীবন উৎসর্গ করেছেন তিনি৷ আর এ সব তাঁকে করতে হয়েছে সামাজিক কুসংস্কার আর ধর্মান্ধতার বেড়া জাল টপকে৷

ইদি বরাবরই নিজেকে ধর্মনিরপেক্ষ মানুষ হিসেবে উল্লেখ করতেন৷ যাঁর কাছে মানবতা ছিল সবকিছুর ঊর্ধ্বে, যা তিনি সারাজীবনে আর্তের সেবা করে তা প্রমাণ করে গেছেন৷ তিনি কাজ করেছেন সব ধর্ম, বর্ণ এবং দরিদ্র মানুষের জন্য৷ কিন্তু বিনিময়ে কিছুই চাননি৷

তাই তাঁর মৃত্যুতে পুরো পাকিস্তানে শোক নেমে এসেছিল৷ গণমাধ্যমে বলা হয়েছিল, পাকিস্তানের সবচেয়ে মানবিক এবং সম্মানিত ব্যক্তি আর নেই৷

যুবক বয়সেই ইদি সমাজসেবার কাজ শুরু করেছিলেন৷ তাঁর নামে প্রতিষ্ঠিত ইদি ফাউন্ডেশন এখন বিশাল এক সামাজিক প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়েছে, ছয় দশক আগে যার প্রতিষ্ঠা করেছিলেন আব্দুল সাত্তার ইদি নিজের হাতে৷ কেবল পাকিস্তানে নয়, পুরো দক্ষিণ এশিয়ায় কাজ করছে ফাউন্ডেশনটি৷ সবচেয়ে বড় অ্যাম্বুলেন্স সেবা, বাড়িতে গিয়ে নার্সিং সেবা, এতিমখানা, ক্লিনিক, নারী আশ্রয় কেন্দ্র, নারী ও শিশু পুনর্বাসন কেন্দ্র, মাদকাসক্ত ও মানসিক রোগীদের পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করে এই ফাউন্ডেশন৷ স্থানীয়রা জানালেন, যে কোনো দুর্গোগে সরকারি অ্যাম্বুলেন্সের আগে সব সময় পৌঁছে যায় ইদি ফাউন্ডেশনের অ্যাম্বুলেন্স৷

পাকিস্তানের একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. মেহেদি হাসান ডয়চে ভেলেকে জানান, ‘‘বিশ্বে পাকিস্তানের একটি নেতিবাচক দিক মানুষ জানে৷ এই দেশটির পরিচিতি কেবল সন্ত্রাসবাদ, দাঙ্গা – এ সব নিয়েই৷ দেশকে ইতিবাচকভাবে একমাত্র উপস্থাপন করেছিলেন ইদি৷ একটি অ্যাম্বুলেন্স দিয়ে ইদি তাঁর ফাউন্ডেশনের কাজ শুরু করেছিলেন, আর আজ দক্ষিণ এশিয়ায় সবচেয়ে বড় অ্যাম্বুলেন্স নেটওয়ার্ক তাঁরই ফাউন্ডেশনের৷''

তবে আশ্চর্যের বিষয় ফাউন্ডেশন বড় হলেও ইদি নিজে কিন্তু পাল্টে যাননি পাকিস্তানের অন্য রাজনীতিবিদ বা সমাজসেবীদের মতো৷ খুব সাধারণ জীবনযাপন করতেন তিনি৷ এ কারণেই মানুষ তাঁর ওপর আস্থা রেখেছে, আস্থা রেখেছে তাঁর ফাউন্ডেশনের ওপরও৷

পাকিস্তানের জনগণ মনে করেন, তাঁদের দেশের কারো যদি শান্তিতে নোবেল পাওয়া উচিত, সেটা আব্দুল সাত্তার ইদির৷ শান্তিতে নোবেল বিজয়ী পাকিস্তানের নারী মালালা ইউসুফজায়ী জানুয়ারিতে জানান যে, এ বছরের নোবেল শান্তি পুরস্কারের জন্য ইদিকে মনোনীত করেছিলেন তিনি৷ কারণ তাঁর বিশ্বাস ছিল, এই পুরস্কারের সুযোগ্য ব্যক্তিত্ব তিনি৷

কিন্তু মজার বিষয় হলো, ইদি ছিলেন এ সবের ঊর্ধ্বে৷ পুরস্কার পাওয়ার কোনো শখ বা চাহিদা ছিল না তাঁর৷ নিজের কাজকে তিনি সবসময় পুরস্কারের ঊর্ধ্বে বলে মনে করতেন৷ মানবতার জন্য কাজ করে যে আত্মতৃপ্তি হয়, সেটাই তাঁর জন্য সবচেয়ে বড় পুরস্কার বলে মনে করতেন ইদি৷

১৯৮৬ সালে নিজেদের কাজের জন্য ইদি আর তাঁর স্ত্রী বিলকিস রেমন মাগসেসে পুরস্কার পান৷ এছাড়া লেনিন শান্তি পুরস্কার এবং বলসান পুরস্কারও পেয়েছেন তাঁরা৷ ১৯৮৯ সালে পাকিস্তান সরকার সেদেশের সবচেয়ে বড় বেসামরিক পুরস্কার ‘নিশান এ ইমতিয়াজ'-এ ভূষিত করেন ইদিকে৷

আব্দুল সাত্তার ইদি রাজনীতিবিরোধী মানুষ ছিলেন৷ তিনি সমাজবাদকে উৎসাহ দিতেন৷ কিন্তু ধর্ম, ধর্ম নিয়ে রাজনীতি এবং সামরিক স্বায়ত্তশাসনের বিরুদ্ধে ছিল তাঁর কঠোর অবস্থান৷ সমাজ পরিবর্তনের কথা বলতেন বলে গণতন্ত্রবিরোধী পাকিস্তানের সরকারের রোষের মুখে পড়েছিলেন তিনি, বহুবার৷

ইদি আর পৃথিবীতে না থাকলেও, তাঁর পরিবার এবং কর্মীরা ফাউন্ডেশনটিকে তাঁর মতো করে চালাতে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ৷ আর ইদিও বিশ্বাস করতেন, তিনি চলে যাওয়ার পরও সংস্থাটি মানবতার জন্য কাজ করে যাবে, সবসময়৷

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য