মাতৃদুগ্ধের গুণাগুণের আরো প্রমাণ পাচ্ছেন বিজ্ঞানীরা
৩১ ডিসেম্বর ২০১৮এমনকি ক্যানসার প্রতিরোধের ক্ষেত্রেও এই দুধ সক্রিয় ভূমিকা পালন করতে পারে৷
মাতৃদুগ্ধের সুবিধা
ভূমিষ্ঠ হবার পরেই কোনো শিশু প্রথমে তার মায়ের স্তনের খোঁজ করে৷ প্রথম এক ঘণ্টার মধ্যেই একবার মায়ের দুধ খাওয়া উচিত বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করেন৷ এর ফলে মায়ের শরীরে গুরুত্বপূর্ণ হরমোনের নিঃসরণ ঘটে৷ দুধের প্রবাহও সহজ হয়ে যায়৷ দারওয়ার বয়স ৫ মাস৷ তার মা রিকার্ডা নিয়মিত তাকে দুধ খাওয়াচ্ছেন৷ তিনি বলেন, ‘‘এর কোনো আর্থিক মূল্য নেই, তাপমাত্রা ও পরিচ্ছন্নতা সব সময়ে আদর্শ থাকে, সঙ্গে থাকায় ভুলে যাবার কোনো ভয় নেই৷ আমার কাছে চিকিৎসাবিদ্যাসম্মত সুবিধা ও আবেগের বিষয় অত্যন্ত জরুরি ছিল৷''
এই সব সুবিধার তালিকা সত্যিই দীর্ঘ৷ শুধু শিশু নয়, নারীর জন্যও তা জরুরি৷ প্রকৃতি অসাধারণ দক্ষতার সঙ্গে এই প্রক্রিয়া সৃষ্টি করেছে৷ মায়ের দুধ দীর্ঘমেয়াদে শিশুর সংক্রমণজনিত রোগ প্রতিরোধ করে৷ কারণ, দুধের সঙ্গে সঙ্গে শিশু নানা রকম প্রতিরোধী পদার্থও গ্রহণ করে৷ গবেষক হিসেবে স্টেফানি ল্যুকে বলেন, ‘‘আমরা জানি, কোনো শিশু শুধুমাত্র ৩ মাস ধরে মায়ের দুধ খেয়ে থাকে, দুধ না খাওয়া শিশুর তুলনায় তার ওটাইটিসের আশঙ্কা ৫০ শতাংশ কমে যায়৷ এছাড়া শ্বাসপ্রণালী বা গ্যাস্ট্রোইনটেস্টাইনাল রোগের আশঙ্কাও অনেক কমে যায়৷''
মাতৃদুগ্ধের বৈশিষ্ট্য
কিন্তু প্রশ্ন হলো, একজন মা যে দুধ উৎপাদন করেন, তার মধ্যে আসলে কী থাকে? তার মূল বৈশিষ্ট্য হলো, প্রত্যেক নারীর মধ্যে উপাদানগুলি ভিন্ন৷ শিশুকে দুধ খাওয়ানোর গোটা সময় জুড়ে তাঁর মধ্যে পরিবর্তনও ঘটে৷ স্ত্রী-রোগ বিশেষজ্ঞ প্রফেসর মিশায়েল আবু-ডাকন বলেন, ‘‘প্রত্যেক মা তাঁর শিশুর জন্য আলাদা করে সেই পদার্থ সৃষ্টি করেন৷ এ ক্ষেত্রে কয়েকশ' রকমের মিশ্রণ সম্ভব৷ শিশুর পরিস্থিতির উপরেও তা নির্ভর করে৷ শিশুর অন্ত্রের জীবাণু তার শরীরে প্রবেশ করা থেকেও বিরত করে৷''
কারণ, বেশিরভাগ ব্যাকটেরিয়া ও জীবাণু নিজে থেকে অন্ত্রের প্রাচীর ভেদ করে না, রিসেপ্টর তাদের টেনে বের করে৷ প্রফেসর আবু-ডাকন মনে করেন, ‘‘মানুষের নিজস্ব এই অলিগোস্যাকারাইড কার্যত প্রতিরক্ষার এক প্রাচীর সৃষ্টি করে৷ আফ্রিকায় এইচআইভি ভাইরাস ও এইডস রোগের ক্ষেত্রে আমরা এর দৃষ্টান্ত দেখেছি৷ যে মায়েরা শিশুদের বুকের দুধ খাওয়ান, তাঁরা অনেক কম মাত্রায় এইচআইভি ভাইরাস সংক্রমণ ঘটান৷ গোটা পরিস্থিতির উপর এর বিশাল প্রভাব পড়ে৷''
তাছাড়া শিশুর চাহিদা অনুযায়ী দুধের মধ্যে পুষ্টির মাত্রাও বদলাতে থাকে৷ রিকার্ডাও তা লক্ষ্য করেছেন৷ তিনি বলেন, ‘‘শিশুর তরল পদার্থের চাহিদা থাকলে দুধ আরো পাতলা হয়ে আসে, ফ্যাটের অনুপাত কমে যায়৷ আবার পুষ্টির প্রয়োজন হলে ফ্যাটের মাত্রা অনেক বেড়ে যায়৷''
মায়ের জন্যও উপকারী
শুধু শিশু নয়, মায়ের জন্যও স্তন্যদান কল্যাণকর৷ স্টেফানি ল্যুকে এ বিষয়ে বলেন, ‘‘অনেক মানুষ জানেন না যে, এর ফলে মায়েরও উপকার হয়৷ যেমন, স্তন ও ডিম্বাশয়ের ক্যানসারের ঝুঁকি অনেক কমে যায়৷ সেই নারীর টাইপ টু ডায়াবিটিসের আশঙ্কাও অনেক বিরল হয়ে যায়৷''
ক্যানসারের ঝুঁকি শুধু নারী নয়, সম্ভবত শিশুদের ক্ষেত্রেও কমে যায়৷ সেটা কীভাবে সম্ভব? এর একটা ব্যাখ্যা হলো, কয়েক বছর আগে চিকিৎসকরা জানতে পেরেছেন যে, মায়ের দুধের মাধ্যমে শিশুর শরীরে স্টেম সেলও প্রবেশ করে৷ এই ধরনের কোষ শরীরের প্রয়োজন অনুযায়ী নিজের বিকাশ ঘটিয়ে চলে৷ এর ফলে শিশুর শরীরে কী প্রভাব পড়ে, সে বিষয়ে এখনো নিশ্চিতভাবে গবেষণা হয়নি৷ প্রফেসর মিশায়েল আবু-ডাকন বলেন, ‘‘অবশ্য টেস্ট টিউবে পরীক্ষা চালিয়ে আমরা জানতে পেরেছি,যে, এই স্টেম সেল টিউমার কোষ বদলে দিতে পারে, সেগুলি নষ্ট করে দিতে পারে৷ সে কারণেই হয়তো নারীদের ক্ষেত্রে ক্যানসারের হার কম থাকে, স্তন ক্যানসারও কম হয়৷ মায়ের দুধ খাবার সময়কালে শিশুদের ক্যানসারের ঝুঁকি অত্যন্ত বিরল থাকে৷''
এছাড়া অক্সিটোসিন নামের এক সংযোগকারী হরমোন জরায়ুকে দ্রুত আবার আগের অবস্থায় ফিরিয়ে আনার ক্ষেত্রে সাহায্য করে৷ নারীর স্ট্রেস বা মানসিক চাপের মাত্রাও কমে যায়৷ তবে শুনতে সহজ মনে হলেও সব ক্ষেত্রে বিষয়টি অত সহজ নয়৷
লেয়া আলব্রেশ্ট/এসবি