মহিলা মুখ্যমন্ত্রী সত্ত্বেও পশ্চিমবঙ্গে মেয়েদের নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন
৫ আগস্ট ২০১১উত্তর ২৪ পরগনার বারাসাতে যাওয়া যাক প্রথমেই৷ চলতি বছরের ১৪ ফেব্রুয়ারি সেখানেই কয়েকজন মদ্যপের দ্বারা আক্রান্ত হয়েছিলেন এক তরুণী, রিঙ্কু দাস৷ দুষ্কৃতিরা তার শ্লীলতাহানি করতে যায়৷ তার কিশোর ভাই রাজীব দাস তাকে বাঁচাতে চেষ্টা করায় দুষ্কৃতিরা রাজীবকে পিটিয়ে হত্যা করে ঘটনাস্থলে৷ দিদির চোখের সামনেই৷ এ ঘটনা বারাসাতের কাছারি ময়দানের৷ সেই বীভৎস রাতের এই ঘটনার পর জল এতটাই গড়ায় যে পরিস্থিতি সামলাতে খোদ তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য্যকে ছুটে যেতে হয়েছিল রিঙ্কুদের বাড়িতে৷
তারপরে ফের দোসরা আগস্ট৷ এবারেও এক মহিলা আক্রান্ত হলেন ছিনতাইকারীদের দ্বারা৷ সেই একই জায়গায়৷ সেই একই পরিবেশে৷ ভ্যান রিক্সায় যাওয়ার সময়, তাঁর ওপর হামলা চালায় মোটরবাইক আরোহী কিছু ছিনতাইকারী৷ ওই গৃহবধূকে মাটিতে ফেলে তাঁর ওপর শারীরিক নির্যাতন চালানো হয়৷ তাঁর স্বামী পেশায় পুলিশ অফিসার৷ সঙ্গে ছিলেন তিনিও৷ কিন্তু কিছু করার আগেই পালায় দুষ্কৃতিরা৷
মহিলাদের প্রতি মানুষের দৃষ্টিভঙ্গি ঠিক কোনখানে? কথা হচ্ছিল, দক্ষিণ কলকাতার বাসিন্দা, তরুণী পিউ বিশ্বাসের সঙ্গে৷
পেশায় শিক্ষিকা পিউ বিশ্বাসের মতে, আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার দরকার মহিলাদের সুরক্ষার জন্য৷ কীভাবে? পিউ বলছেন, যেহেতু মুখ্যমন্ত্রী স্বয়ং একজন মহিলা, তাই নারীসুলভ বিশেষ অনুভূতি থেকে তাঁর পক্ষে মহিলাদের সমস্যা বোঝাটা অনেক সহজতর৷ তাই তাঁর কাছে পৌঁছতে হলে ই-মেল বা চ্যাটের মাধ্যমে সাধারণ মানুষ তাঁদের সমস্যার কথা সরাসরি জানাতে পারবেন৷ তাই তেমন কোন ব্যবস্থা হলে অনেকটা নিরাপদ বোধ করবেন মহিলারা৷
আর মহিলাদের প্রতি সমাজের দৃষ্টিভঙ্গি? এ প্রশ্নের জবাবে পিউ বলছেন, তেমন কোন পরিবর্তন হয়নি এই আধুনিক সমাজেও৷ সেই একইভাবে মেয়েদেরকে রাখা হয়েছে পিছিয়ে৷ তাদের জায়গা ছেড়ে দিতে, বা প্রয়োজনীয় সম্মানটুকু দেখাতে আজও ইচ্ছুক নয় সমাজ৷ পাশাপাশি প্রচুর ভোগবাদের খপ্পরে পড়ে থাকা এই সমাজব্যবস্থায় মহিলারা নিজেরাও যথেষ্ট বেপরোয়া মনোভাব দেখাতে ক্ষান্ত হচ্ছেন না৷ পুরুষদের তো কথাই নেই!
তারপরেও একজন মহিলাকে মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে পেয়ে কিছুটা হলেও আশান্বিত এখন অন্তত পশ্চিমবঙ্গের নারীকূল৷ তাঁদের বিশ্বাস, এবার পাল্টাবে মানুষের দেখার চোখ৷ আসবে একটা পরিবর্তন৷ কারণ, সম্মান দেখানোর জন্যও তো লাগে একটা প্রস্তুতি৷ সামাজিক ক্ষেত্রে সেই প্রস্তুতির ভূমি হয়তো বা আলাদা করে তৈরি করতে পারবেন সেই মমতা ব্যানার্জী৷
দেখা যাচ্ছে, প্রত্যাশা অনেক৷ কারণ, তিন যুগ পরে নতুন কিছু হাতে পেয়ে, তার দিকেই সকলের চোখ৷ সেই প্রত্যাশা মিটবে কীভাবে এবং কোন পন্থায় সেটাই লক্ষ্য রাখার বিষয়৷ হলে তো ভালোই৷ শাস্ত্রে বলাই আছে, অধিকন্তু ন দোষায়৷ তবে মহিলাদের জন্য সামাজিক সুরক্ষার রক্ষাকবচ অবশ্যই আলাদা দেখা উচিত মহিলা মুখ্যমন্ত্রীর৷
সাক্ষাৎকার: সুপ্রিয় বন্দ্যোপাধ্যায়
সম্পাদনা: সঞ্জীব বর্মন