ভারত থেকে অনুপ্রবেশ, সীমান্তে নজরদারি বৃদ্ধি
৩০ নভেম্বর ২০১৯ভারত থেকে অনুপ্রবেশ বাড়ায় দেশের দক্ষিণ-পশ্চিম সীমান্তে সতর্ক অবস্থানে রয়েছে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি)৷ স্থানীয় লোকজনকেও সতর্ক করে দেয়া হয়েছে তথ্য দেয়ার জন্য৷ বিজিবি সূত্র জানায়, সীমান্ত জেলা যশোর, ঝিনাইদহ, সাতক্ষীরা, চুয়াডাঙ্গা, মেহেরপুর ও কুষ্টিয়ার বিভিন্ন এলাকা দিয়ে এই অনুপ্রবেশের ঘটনা ঘটছে৷
সবচেয়ে বেশি অনুপ্রবেশের ঘটনা ঘটছে ঝিনাইদহের মহেশপুর সীমান্ত থেকে৷ গত এক মাসে সেখান দিয়ে অনুপ্রবেশের সময় ২৬০ জনকে আটক করা হয়৷ আর অন্য সীমন্ত থেকে আটক করা হয় ২৫১ জনকে৷ এই পাঁচ শতাধিক নারী পুরুষের বিরুদ্ধে থানায় পাসপোর্ট আইনে মামলা হয়েছে৷ কারণ তারা পাসপোর্ট ভিসা ছাড়াই বাংলাদেশ অনুপ্রবেশ করেছেন৷
বেনাপোল বন্দর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মামুন খান ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘আগের চেয়ে অনুপ্রবেশ কিছুটা বেড়েছে৷ আমার থানায় গত মাসে ৫৬ জনকে হস্তান্তর করেছে বিজিবি৷ এরা বেশির ভাগই বাগেরহাট, মোড়েলগঞ্জ, শরণখোলা ও মোংলা এলাকার বাসিন্দা বলে আমাদের জিজ্ঞাসাবাদে জানিয়েছেন৷ তারা ভারতের কর্নাটকের ব্যাঙ্গালুরু ও কেরালা এলাকায় বাসা বাড়িতে কাজের জন্য গিয়েছিলেন।’’
তবে বিজিবি বলছে বাংলাদেশের নাগরিক হিসেবে দাবি করলেও জাতীয় পরিচয়পত্র বা পাসপোর্ট কোনটাই তারা দেখাতে পারছে না৷ যে কারণে তারা বাংলাদেশের নাগরিক কীনা প্রাথমিকভাবে সেটি প্রমাণ করা সম্ভব হচ্ছে না৷
অনুপ্রবেশ ঘটতে পারে আসাম থেকেও
৫৮ বিজিবির কমান্ডিং অফিসার লে. কর্নেল কামরুল হাসান বলেন, ‘‘আগে প্রতিমাসে মহেশপুর সীমান্ত থেকে অনুপ্রবেশের সময় আমরা দুই-চার জনকে আটক করতাম৷ কিন্তু নভেম্বরে এই সংখ্যা ছিল ২৬০ জন৷ অনুপ্রবেশের সংখ্যা অস্বাভাবিকভাবে বেড়েছে গত এক মাসে৷’’
তিনি বলেন, ‘‘যাদের আটক করা হয়েছে তারা নিজেদের বাংলাদেশের নাগরিক দাবি করছেন৷ কিন্তু স্বপক্ষে কোনো তথ্য প্রমাণ দেখাতে পারছেন না৷ এমনকি যেই এলাকার তারা বাসিন্দা ছিলেন বলে দাবি করছেন সেখানকার কোনো যোগাযোগ নম্বর তাদের কাছে নেই, বলতে পারছেন না জনপ্রতিনিধির নামও৷’’
তারা কেন আসছে জানতে চাইলে কামরুল হাসান বলেন, ‘‘তারা ভারতের যেসব এলকায় ছিলেন সেসব জায়গায় পুলিশের অভিযান বেড়ে গেছে৷ পুরো ভারতে এনআরসির কথা বলেছেন অমিত শাহ৷ এতে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে৷’’ তিনি আশঙ্কা প্রকাশ করে বলেন, আসামের নাগরিকপঞ্জিতে বাংলাভাষী যেসব মুসলিমের জায়গা হয়নি, অবৈধ ঘোষণা করা হলে তারাও বাংলাদেশে প্রবেশের চেষ্টা করতে পারে৷
‘‘আমাদের (সীমান্তের) পূর্বাঞ্চলে আসামের ঢল ঠেকানোর জন্য (বিজিবি সদস্যরা) কড়াকড়ি অবস্থায় আছে৷ তবে তারা ঘুরেও আসতে পারে, সেই আশঙ্কাও রয়েছে৷’’ অনুপ্রবেশ ঠেকাতে সব সীমান্তেই নজরদারি ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে বলে জানান তিনি৷
কামরুল হাসান বলেন, ‘‘যারা বাংলাদেশের নাগরিক বলে দাবি করছেন তারা যদি বাড়ি ঘর বিক্রি করে গিয়ে থাকেন তাহলে তারা এখানে উদ্বাস্তুতে পরিণত হবে৷ আবার নারীরা সেখানে যদি যৌনকর্মী হিসেবে কাজ করে থাকেন তাহলে সেটাও আমাদের জন্য একটা হুমকি৷ কারণ এইডস ছড়ানোর আশঙ্কা আছে৷’’
‘আর যাতে কেউ না ঢুকতে পারে’
এদিকে, আসামের নাগরিকপঞ্জির কোনো প্রভাব বাংলাদেশে পড়বে না বলে দাবি করে আসছে সরকার৷ সম্প্রতি পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন সিলেটে এক অনুষ্ঠানে বলেছেন, ‘‘ভারত সরকার ইতিমধ্যে বাংলাদেশকে আশ্বস্ত করেছে যে এনআরসির কারণে ভারত থেকে কাউকে বাংলাদেশে পুশইন করবে না৷’’
এর দুইদিন পর সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন, ‘‘সরকারের কাছে ভারত থেকে অনুপ্রবেশ সংক্রান্ত কোন তথ্য নেই৷ গণমাধ্যমেই তিনি এই খবর দেখেছেন৷’’
এই মুহূর্তে সরকারের করণীয় কী এ বিষয়ে সাবেক রাষ্ট্রদূত মেজর জেনারেল(অব.) শহিদুল হক বলেন, ‘‘পররাষ্ট্রমন্ত্রীতো বলেছেন তিনি অনুপ্রবেশের বিষয়টি সংবাদপত্রে দেখেছেন৷ এখন সরকারের উচিত হবে যারা এসেছেন তাদের নাগরিকত্ব যাচাই করা৷ যদি তারা আমাদের নাগরিক না হয় তাহলে ভারতের কাছে তাদের ফিরিয়ে নেয়ার জন্য বলা৷’’
তবে তিনি বলেন, ‘‘এর একটা বিপদের দিকও আছে যদি ভেরিফাই শুরু হয় তাহলে এনআরসির কারণে ওখান থেকে বাংলাভাষীদের ঢল শুরু হতে পারে৷ তাই প্রথম কাজ হলো আর যাতে কেউ না ঢুকতে পারে সেটা নিশ্চিত করা, সেজন্য সব ধরনের ব্যবস্থা নেয়া৷ তারপর অন্য প্রক্রিয়ায় কূটনৈতিকভাবে জোর দিতে হবে৷’’