ভারতে মহামারি পরবর্তী কর্মসংস্থান
৩ মে ২০২২উত্তর ভারতের ২৪ বছর বয়সি প্রমোদ লাল ব্যবসায় স্নাতক শেষ করেছেন৷ তিনি মনে করেন প্রতিযোগিতামূলক চাকরির বাজারে টিকে থাকার যথেষ্ট যোগ্যতা তার আছে৷ তারপরও চাকরি পাওয়ার প্রত্যাশা তার এখনও পূরণ হওয়া বাকি৷ ডয়চে ভেলেকে তিনি জানান, ‘‘পড়াশোনা করলেই যে চাকরি পাওয়া যাবে, ব্যাপারটা এমন নয়৷ গত বছর আমি শুধু প্রত্যাখানপত্রই পেয়েছি৷''
লতা জৈন মধ্যপ্রদেশের একজন রিসেপশনিস্ট। মহামারির সময়ে তিনি চাকরিচ্যুত হন৷ অভিজ্ঞতা থাকার পরও তিনি এখনো পর্যন্ত কোনো আকর্ষণীয় চাকরি খুঁজে পাননি৷ তিনি জানান, ‘‘আমি কম বেতনে আরো বেশি ঘণ্টা কাজ করতে আগ্রহী হয়েও এখনো উচ্চ পদের চাকরি খুঁজে পাইনি৷ আমি জানি না আমার এই খারাপ ভাগ্য কত দিন চলবে৷''
সেন্টার ফর মনিটরিং ইন্ডিয়ান ইকোনমি সিএমআইই এর তথ্য অনুযায়ী, বড় সংখ্যক মানুষ এমনকি চাকরি খোঁজা বাদ দিয়েছেন৷ তাদের হিসাবে ভারতে গত বছরের ডিসেম্বরে প্রতি পাঁচজন স্নাতকের মধ্যে একজন ছিলেন বেকার। এপ্রিল মাসে ভারতের বেকারত্বের হার সাত দশমিক ছয় শতাংশ থেকে বেড়ে সাত দশমিক আট শতাংশে পৌঁছায়। সবচেয়ে বেশি ৩৪ দশমিক পাঁচ শতাংশ বেকারত্বের হার উত্তরাঞ্চলের হরিয়াণা রাজ্যে।
করোনা মহামারির কারণে ২০২০ সাল থেকে ভারতের অর্থনীতি মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে৷ বিশেষ করে অনানুষ্ঠানিক চাকরিখাতে এর স্পষ্ট প্রভাব পড়েছে। লকডাউন এবং বিধিনিষেধ তুলে দেবার পরেও কর্মীরা চাকরির বাজারে ফিরে যেতে অনিহা প্রকাশ করছেন।
সিএমআইই এর পরিচালক মহেশ ভিয়াস ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘এরা হতাশ মানুষ৷ হতাশাগ্রস্ত হিসেবেই তারা চাকরি খোঁজা বন্ধ করে দিয়েছেন৷ তারা 'শ্রমশক্তির বাইরে' হিসাবে শ্রেণীবদ্ধ৷ বেকারত্বের হারেও তাদেরকে গণনা করা হয় না৷ এর বেকারত্বের হারও কমে যায়৷ অনেকে এমনকি শিক্ষা ও চাকরির খোঁজার পেছনে যে সময় বিনিয়োগ করেন তা নিয়েও ক্ষুব্ধ হন৷"
যারা ভারতের অনানুষ্ঠানিক খাতে কাজ করছেন তাদের সমস্যা আরো জটিল৷ তাদের চাকরি বা বেতনের কোন নিশ্চয়তা নেই৷ কাজের মাধ্যমে জীবনযাপনের খরচ মেটাতেও ব্যর্থ হন তারা৷
ওলা, উবার, জোমাটো, এবং সুইগির মতো কিছু স্টার্টআপগুলি ভারতের নতুন অর্থনীতির প্রধান চালিকা শক্তি হিসাবে আবির্ভূত হয়েছে। খরচ কমাতে তারা দক্ষ ও অদক্ষ উভয় চাকরিতে চুক্তিভিত্তিক ফ্রিল্যান্সার নিয়োগ করছে৷ তবে প্রযুক্তিনির্ভর প্রতিষ্ঠানগুলো বেকারত্বের হারে কতটা প্রভাব ফেলছে তা পরিমাপ করা কঠিন৷
ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব পাবলিক ফাইন্যান্স অ্যান্ড পলিসি-এর অধ্যাপক লেখা চক্রবর্তী বলেন, ‘‘অনানুষ্ঠানিক খাতের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের কোনো নির্ভরযোগ্য তথ্য নেই৷ চাকরির নিশ্চয়তার জন্য সর্বশেষ অবলম্বন হিসেবে সরকারের ভূমিকা আরো জোরদার করতে হবে৷''
দেশটিতে চাকরির সংকটের ব্যাপকতা এই বছরের জানুয়ারিতে স্পষ্টভাবে বোঝা গেছে। ভারতের উত্তরাঞ্চলীয় রাজ্য বিহার এবং উত্তর প্রদেশে একটি রেলওয়ের চাকরির নিয়োগ পরীক্ষায় সহিংসতার ঘটনা ঘটে৷ বেকাররা রাস্তা ও রেললাইন অবরুদ্ধ করে বিক্ষোভ করেন। পরে জানা যায়, ভারতের রেলওয়ের নিয়োগ পরীক্ষার ৩৩ হাজার চাকরির বিপরীতে এক কোটি বিশ লাখ মানুষ অংশগ্রহণ করেছিলেন৷
ফেব্রুয়ারিতে ঘোষিত বাজেটে আগামী পাঁচ বছরে ৬০ লক্ষ কর্মসংস্থান তৈরির কথা বলেছে সরকার৷
মুরালি কৃষণান/এএস