ক্ষুব্ধ ফেলানীর বাবা
৬ সেপ্টেম্বর ২০১৩বৃহস্পতিবার বিএসএফ-এর বিশেষ আদালত ফেলানী হত্যার ঘটনায় অভিযুক্ত একমাত্র আসামী বিএসএফের জওয়ান অমীয় ঘোষকে নির্দোষ বলে রায় দিয়েছে৷ বিষয়টি শুক্রবার আন্তর্জাতিক সংবাদ মাধ্যমগুলোতে প্রথম প্রকাশ পায়৷ বৃহস্পতিবার রাতেই অমীয় ঘোষকে মুক্তি দেয়া হয়েছে৷ ২০১১ সালের ৭ই জানুয়ারি কুড়িগ্রামের অনন্তপুর সীমান্তে ফেলানীকে গুলি করে হত্যা করে বিএসএফের ১৮১ ব্যাটালিয়নের চৌধুরীহাট ক্যাম্পের এক জওয়ান৷
ফেলানীর বাবা কুড়িগ্রামের নাগেশ্বরী উপজেলার দক্ষিণ রামখানা ইউনিয়নের বানার ভিটা গ্রামের নুরুল ইসলাম নূরু৷ তিনি ১০ বছর ধরে দিল্লিতে কাজ করতেন৷ তাঁর সঙ্গে সেখানেই থাকতো ফেলানী৷ দেশে বিয়ে ঠিক হওয়ায় বাবার সঙ্গে ফেরার পথে সীমান্ত পার হওয়ার সময় কাঁটাতারের বেড়ায় কাপড় আটকে যায় ফেলানীর৷ এতে ভয়ে সে চিত্কার দিলে বিএসএফ তাকে গুলি করে হত্যা করে এবং পরে লাশ নিয়ে যায়৷ কাঁটাতারের বেড়ায় ফেলানীর ঝুলন্ত লাশের ছবি গণমাধ্যমে প্রকাশিত হলে বিশ্বজুড়ে আলোড়ন সৃষ্টি হয়৷ বাংলাদেশ সরকার ও মানবাধিকার সংস্থাগুলোর পক্ষ থেকেও এর কড়া প্রতিবাদ জানানো হয়৷
গত ১৩ই আগস্ট ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের কোচবিহার জেলায় সোনারি বিএসএফ ছাউনিতে জওয়ান অমীয় ঘোষের বিচার শুরু হয়৷ পাঁচজন বিচারক এই বিচার প্রক্রিয়া পরিচালনা করেন৷ আদালত পরিচালনা করেন বিএসএফ-এর গুয়াহাটি ফ্রন্টিয়ারের ডিআইজি (কমিউনিকেশনস) সি পি ত্রিবেদী৷ আদালত অমীয় ঘোষের বিরুদ্ধে ভারতীয় দণ্ডবিধির ৩০৪ ধারায় অনিচ্ছাকৃত খুন এবং বিএসএফ আইনের ১৪৬ ধারায় অভিযোগ আনে৷
এরপর ফেলানীর বাবা নুরুল ইসলাম ও মামা আব্দুল হানিফ ভারতে গিয়ে এই মামলায় সাক্ষ্য দেন৷ মেয়ের হত্যাকারীর সর্বোচ্চ শাস্তি দাবি করেন ফেলানীর বাবা৷ কুড়িগ্রাম জজ আদালতের পাবলিক প্রসিকিউটর অ্যাডভোকেট আব্রাহাম লিংকন এই মামলায় ফেলানীর পরিবারকে আইনি সহায়তা দেন৷ তাঁদের সঙ্গে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) ৪৫ ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লে. কর্নেল জিয়াউল হক খালেদও ভারতে যান মামলার কার্যক্রম পর্যবেক্ষণে৷ অবশেষে বৃহস্পতিবার সেই মামলার রায়ে একমাত্র আসামি অমীয়কে খালাস দেয় আদালত৷ রায়ে বলা হয়, অমীয় ঘোষের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগের পক্ষে যথেষ্ট প্রমাণ পায়নি আদালত৷
বিজিবি মহাপরিচালক মেজর জেনারেল আজিজ আহমেদ শুক্রবার বিকেলে ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘মিডিয়ার কাছ থেকেই এই রায়ে কথা আমরা শুনেছি৷ বিএসএফ বা ভারত সরকার এই ব্যাপারে আমাদের আনুষ্ঠানিকভাবে কিছুই বলেনি৷ তবে বিষয়টি নিশ্চিত হওয়ার জন্য আমরা তাদের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করে যাচ্ছি৷''
অ্যাডভোকেট আব্রাহাম লিংকন বলেন, ‘‘এই রায় আনুষ্ঠানিকভাবে আমরা পাইনি৷ তবে একমাত্র আসামি অমিয় ঘোষ যদি নির্দোষ প্রমাণিত হন, তাহলে তা হবে দুঃখজনক৷ তাছাড়া অমীয় নিজেই স্বীকার করেছেন, তাঁর অস্ত্র দিয়েই গুলি করা হয়েছে৷ তার মানে তিনি আত্মস্বীকৃত হত্যাকারী৷ এরপরও যদি তিনি খালাস পেয়ে যান, তাহলে সীমান্তে বিএসএফের আচরণ এখন কেমন হবে তা সহজেই অনুমেয়৷'' এই আইনজীবী আরও বলেন, ‘‘ফেলানীর পরিবার ন্যায়বিচার থেকে বঞ্চিত হল৷ রাষ্ট্রের উচিত এ ব্যাপারে যথাযথ খোঁজখবর নিয়ে আইনগত লড়াই চালিয়ে যাওয়া৷''
ফেলানীর বাবা নুরুল ইসলাম নুরু বলেন, ‘‘এই রায়ে আমি ক্ষুব্ধ, হতাশ৷ আমার মেয়েকে হত্যা করা হল আর আসামি খালাস পেয়ে গেলেন৷ আদালত এই রায় দিয়ে থাকলে আমাদের সঙ্গে অন্যায় আচরণ করা হয়েছে, আমরা ন্যায় বিচার পায়নি৷'' পুনরায় বিচার করার অনুরোধ জানিয়ে নুরুল ইসলাম বলেন, ‘‘আমাদের সরকারের কাছে আমি অনুরোধ করব, তারা যেন বিষয়টি নিয়ে ভালোভাবে আইনগত লড়াই চালিয়ে যায়৷''