ব্রুনাইয়ে ‘পাথর ছুড়ে হত্যা' শাস্তি নিয়ে প্রতিক্রিয়া
৮ এপ্রিল ২০১৯ব্রুনাইয়ের সুলতান হাসানাল বোলকিয়াহ ২০১৪ সালে ব্রুনাইতে শরিয়া পেনাল কোড চালু করেন৷ তবে তা সীমাবদ্ধ ছিল জরিমানা কিংবা জেলের বিধান প্রয়োগের মাধ্যমে৷ ব্যভিচার বা শুক্রবারের জুম্মার নামাজে অংশ না নেয়ার জন্য জরিমানা ও জেলের বিধান চালু করা হয়৷
সম্প্রতি তিনি শরিয়া পেনাল কোডের সবচেয়ে বড় শাস্তি ব্যভিচারী, সমকামী ও ধর্ষকদের বেত্রাঘাত ও পাথর ছুড়ে হত্যার বিধান চালু করেন৷ তেলসমৃদ্ধ ব্রুনাইতে ৪ লাখ ৩০ হাজার মানুষের বাস৷ এদের দুই-তৃতীয়াংশ মুসলিম জনগোষ্ঠী৷ নতুন পেনাল কোডে এমন আইনও আছে, যা মুসলিম ও মুসলিম নন, সবার ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য৷
এ নিয়ে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে৷ অনেকেই সুলতানকে সাধুবাদ জানিয়েছেন নতুন আইন প্রয়োগ করায়৷ আবার কেউ কেউ আইনের কঠোর দিকটির বিরোধিতা করেছেন৷ বলেছেন, এ যুগে এটি বর্বরতা৷
সামাজিক গণমাধ্যমে প্রতিক্রিয়া
এ বিষয়ে ডয়চে ভেলে'র একটি প্রতিবেদন পাঁচটি ভাষায় অনুবাদ করা হয়৷ ২৪ ঘণ্টার মধ্যে প্রায় ২ হাজার কমেন্ট পড়ে সেখানে৷ পৃথিবীর সবচেয়ে বড় মুসলিম অধ্যুষিত দেশ ইন্দোনেশিয়ার অনেকেই এর পক্ষে তাদের মতামত তুলে ধরে বলেন, এটা ‘আল্লাহর আইন', যা ভবিষ্যত প্রজন্মকে রক্ষা করবে৷
ইন্দোনেশিয়ার আরেক পাঠক মন্তব্য করেছেন, যে তত্ত্ব ইন্দোনেশিয়ার ভিত্তি ছিল সেই ‘প্যানকাসিলা'র অধীনেই দেশটি ভালো ছিল৷ কারণ, তখন নানা বিষয়ের মধ্যে ধর্মীয় সহাবস্থানের বিষয়টিতে অনেক জোর দেয়া হত৷
বাংলাদেশের পাঠকদের মধ্যেও অনেকে ব্রুনাইয়ের সুলতানকে সাধুবাদ দিয়েছেন৷ একজন লিখেছেন যে, ‘সভ্য জাতি'র জন্য এই আইন প্রয়োজন৷ ‘আধুনিকতা'র মানে অশ্লীলতা বলেও মন্তব্য করেছেন তিনি৷
বিরোধিতাও করেছেন কেউ কেউ৷ একজন লিখেছেন, এই আইন আধুনিকতা থেকে অনেক পেছনে ‘আদিম যুগে' নিয়ে যাবে৷
পাকিস্তানে এই আইনকে কেউ কেউ ‘হাস্যকর' বললেও, কেউ কেউ বলেছেন যে, ব্রুনাই একটি সার্বভৌম দেশ৷ তাদের দেশে কী হবে, সেটা নিয়ে পশ্চিমাদের ‘মাথা ঘামাবার দরকার নেই'৷ আবার আফগানিস্তানের এক পাঠক বলেছেন, এই আইন ‘মানবসভ্যতার জন্য কল্যাণকর'৷
মানবাধিকার কর্মীদের প্রতিক্রিয়া
পাথর ছুড়ে হত্যার শাস্তির তীব্র বিরোধিতা করেছেন মানবাধিকার কর্মীরা৷ তারা এই বিধানকে পুরোনো ও বর্বর বলে আখ্যায়িত করেছেন৷
বাংলাদেশের মানবাধিকার কমিশনের সাবেক চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান বলেছেন, ‘‘পাথর ছুড়ে মৃত্যুদণ্ডের বিধান যেন সভ্যতাকে আদিম অবস্থায় ফিরিয়ে নিয়ে যাওয়া৷ আধুনিক আইনে এর গ্রহণযোগ্যতা নেই৷’’
তিনি মনে করেন, এই সিদ্ধান্তের পেছনে কোনো রাজনৈতিক উদ্দেশ্য থাকতে পারে৷
মিজানুর বলেন, ‘‘ধর্মের অগ্রসরতার সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে না পারায় ব্রুনাইয়ের জনগণ ও শাসকদের প্রতি করুণা এবং রাজনৈতিক সুবিধা আদায়ের জন্য এই নিষ্ঠুর ও বর্বর উদ্যোগ নেয়া হয়েছে৷’’
হিউম্যান রাইটস ওয়াচের এশিয়া পরিচালক ফিল রবার্টসন বলেন, ‘‘অনেকেই বলেন যে, ব্রুনাই একটি সার্বভৌম দেশ৷ তাদের নিজেদের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেবার অধিকার আছে,’’ ডয়চে ভেলেকে বলেন তিনি৷
তিনি যোগ করেন, ‘‘কিন্তু সুলতান একজন স্বৈরশাসক৷ তিনি ঠিক কী কারণে এই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তা পরিষ্কার নয়, তবে তাঁর একক সিদ্ধান্তেই এই উদ্যোগ নেয়া হয়েছে৷’’
ওয়েসলি রান/জেডএ