ব্রিকসের সম্প্রসারণে পশ্চিমা বিশ্বের প্রতিক্রিয়া
২৮ আগস্ট ২০২৩যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা জেক সুলিভান বলেছেন, ব্রিকস যুক্তরাষ্ট্রের ভূ-রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বী নয়, কারণ, তাদের স্বার্থের মধ্যে অনেক ভিন্নতা আছে৷
মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক মুখপাত্র বলেছেন, বিশ্ব শান্তি ও নিরাপত্তা বজায় রাখতে যুক্তরাষ্ট্র ‘আমাদের অংশীদার এবং দ্বিপাক্ষিক, আঞ্চলিক ও বহুমাত্রিক মিত্রদের সঙ্গে কাজ চালিয়ে যাবে... যুক্তরাষ্ট্র বিশ্বাস করে, বিভিন্ন দেশ তাদের ইচ্ছামতো অংশীদার এবং গ্রুপ বেছে নিতে পারে৷''
কদিন পর নতুন দিল্লিতে অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া জি-টোয়েন্টির শীর্ষ সম্মেলন নিয়ে আগ্রহী যুক্তরাষ্ট্র৷ ব্রিকসের বর্তমান পাঁচটি দেশ এই গোষ্ঠীর সদস্য৷ এছাড়া ব্রিকসের সদস্য হতে যাওয়া নতুন দেশগুলোর মধ্যে আর্জেন্টিনা ও সৌদি আরবও জি-টোয়েন্টির সদস্য৷
হোয়াইট হাউস বলছে, পশ্চিমা দেশগুলো নতুন দিল্লির বৈঠকে ‘শক্তিশালী ফলাফল' আশা করছে, যা জি-টোয়েন্টির ভূমিকাকে ‘অর্থনৈতিক সহযোগিতার প্রধান ফোরাম' হিসাবে তুলে ধরবে৷
ব্রিকসের নতুন ক্ষমতাকেন্দ্র হয়ে ওঠার সম্ভাবনা সম্পর্কে প্রকাশ্যে সতর্ক প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে পশ্চিমা অনেক দেশ৷ ৷ তবে তারা হয়ত নিজেদের মধ্যে অন্যরকম চিন্তা করে থাকতে পারে, বলে মনে করছে পশ্চিমা কয়েকটি গণমাধ্যম৷ যেমন নরওয়ের আফটেনপস্টেন সংবাদপত্র লিখেছে, ব্রিকস ‘স্বৈরাচারী এবং প্রতিক্রিয়াশীল নেতাদের একটি বৈশ্বিক ক্লাবে পরিণত হয়েছে, যার প্রধান হচ্ছে চীন এবং রাশিয়া৷'' এসব দেশের মানুষের আরও ভালো কিছু প্রাপ্য বলেও মন্তব্য করেছে পত্রিকাটি৷
নেদারল্যান্ডসের এনআরসি সংবাদপত্র মনে করছে, ‘‘আসলে, শেষ পর্যন্ত, শুধুমাত্র আর্জেন্টিনা, মিশর, ইথিওপিয়া, ইরান, সৌদি আরব এবং সংযুক্ত আরব আমিরাতকে যোগদানের জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে- যা চীনের জন্য একটি ধাক্কা৷'' দক্ষিণ আফ্রিকা জোর দিয়ে বলেছে যে, ব্রিকসকে পশ্চিমা বিরোধী প্ল্যাটফর্ম হিসাবে দেখা ‘সম্পূর্ণ ভুল'৷ ‘‘গ্রুপটি এখনও জি-সেভেন এর বিকল্প নয়, যেমনটা চীন একে দেখতে চায়,'' লিখেছে এনআরসি৷
জার্মানির পররাষ্ট্রমন্ত্রী আনালেনা বেয়ারবক বলেছেন, ব্রিকসের সম্প্রসারণ বড় কোনো বিষয় নয়৷ ২০২৩ সালে এসে একটি দেশ অন্য কোথাও মিত্র খুঁজবে সেটিই স্বাভাবিক, বলে মনে করেন তিনি৷ ‘‘বর্তমান সময়ে প্রতিটি দেশ সহযোগিতা এবং অংশীদারিত্বের গুরুত্ব সম্পর্কে সচেতন,'' বলেন জার্মান পররাষ্ট্রমন্ত্রী৷ তিনি বলেন, ‘‘প্রত্যেক দেশকে নিজেকে প্রশ্ন করতে হবে: কোন অংশীদারিত্ব তার নিজস্ব মূল্যবোধ এবং স্বার্থের জন্য সবচেয়ে উপযুক্ত? দীর্ঘমেয়াদে কোনটি এর জন্য সবচেয়ে বেশি উপকারী?''
ব্রিকস দেশগুলোর সম্মেলনকে একটি সমস্যা হিসাবে দেখছে জার্মানির কিছু গণমাধ্যম৷ তবে বেয়ারবক এর সঙ্গে একমত নন৷ তিনি বলেন, ইউরোপীয় নিরাপত্তা ও সহযোগিতা সংস্থা ওএসসিই এবং জি-টোয়েন্টিরও তাদের সদস্য বেছে নেওয়ার স্বাধীনতা রয়েছে৷
তবে ইউরোপীয় সংসদে সবুজ দলের (বেয়ারবকের দল) পররাষ্ট্রনীতি বিষয়ক কো-অর্ডিনেটর রাইনহার্ড ব্যুটিকোফার বলেন, ‘‘ব্রিকস সম্প্রসারণের কারণে এই গ্রুপের চরিত্র বদলে যাবে৷ চীনের আধিপত্য বাড়বে এবং ব্রিকস একটি স্পষ্ট কর্তৃত্ববাদী গ্রুপে পরিণত হবে৷''
ইইউ একটি বড় চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে যাচ্ছে বলেও মনে করছেন তিনি৷ ‘‘ইউরোপ যে দরিদ্র এবং উন্নয়নশীল দেশগুলোর জন্য একটি বিশ্বাসযোগ্য, নির্ভরযোগ্য এবং ন্যায্য অংশীদার হতে চায়, তা প্রমাণ করার জন্য অনেক বছর নেই,'' বলেন ব্যুটিকোফার৷ ‘‘যদি আমরা সফল না হই, তাহলে এই দেশগুলোর অনেকে ব্রিকসের দিকে ঝুঁকতে পারে,'' বলে সতর্ক করে দেন তিনি৷
অলিভার পিপার/জেডএইচ